উল্লাপাড়া উপজেলা

উল্লাপাড়া উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৪১৪.৪৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১২´ থেকে ২৪°২৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৪´ থেকে ৮৯°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রায়গঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে শাহজাদপুর ও ফরিদপুর উপজেলা, পূর্বে কামারখন্দ ও বেলকুচি উপজেলা, পশ্চিমে ভাঙ্গুরা ও তাড়াস উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৪৯২৪৩; পুরুষ ২৩১৭৪৬, মহিলা ২১৭৪৯৭। মুসলিম ৪২৭৯৮৬, হিন্দু ২১২০৫, বৌদ্ধ ৭ এবং অন্যান্য ৪৫।

জলাশয় করতোয়া, ইছামতী ও বিলসূর্যিয়া নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন উল্লাপাড়া থানা গঠিত হয় ১৮৭৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয় ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ২৬৩ ৪০৭ ৩৬৬৭৫ ৪১২৫৬৮ ১০৮৪ ৫৩.১ ৩৮.৪
পৌরসভা
আয়ত (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লার লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.০৭ ২৫ ৩৬৬৭৫ ৩০৩৯ ৫৩.১১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উধুনিয়া ৮৭ ৯৫০১ ১২৯০৪ ১২৯৫৫ ৩৪.৪৭
উল্লাপাড়া ৯৪ ৬০২৮ ৯৮৭৭ ৯৩১৯ ৩৯.৫৭
দূর্গানগর ২৯ ৮১৮৩ ২৬৯৫০ ২৪৬২২ ৩৯.৫৬
পঞ্চক্রোশি ৫১ ৭১৮৫ ১৮৭৭৭ ১৭৭৩১ ৪০.০৮
পূর্ণিমাগাতী ৫৮ ৮৭৫৩ ২০৫০১ ১৯৫২৬ ৩৭.০৬
বড় পাঙ্গাশি ২১ ৭৪২৬ ১২৫৯৭ ১১৩১৮ ২৯.৯৪
বড়হর ১৪ ৮০৬২ ১৭০৬২ ১৬০৫৫ ৪১.৭৫
বাঙ্গালা ১২ ৮১৩৬ ১৩৫৮৩ ১৩৩৩০ ৩৩.১২
মোহনপুর ৪৩ ৯০৪৯ ১৬৮৯৪ ১৫৫৭০ ৪৫.৯৫
রামকৃষ্ণপুর ৬৫ ৭০৬৭ ১২৬৯৩ ১২৫৭৪ ৩১.৪৯
সলংগা ৭৩ ৩৪৬২ ১৭২৮৯ ১৬০৮৪ ৩৭.৮৯
সলোপ ৮০ ৫৯৮৬ ১৪২১৩ ১৩১৮৯ ৪৫.৫৫
হাতিকামরুল ৩৬ ৮৫৭৬ ১৯০৮৬ ১৭৮৬৯ ৩৭.৮৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মক্কা আউলিয়া মসজিদ (দারোগাপাড়া, পঞ্চদশ শতাব্দী), হযরত বাগদাদী (রঃ)-এর মাযার (গয়হাট্টা), পাঁচ পীরের মাযার (আঙ্গাঁরু), চতুর্দশ শতাব্দীর নবরত্ন মন্দির (হাতিকামরুল), শিবমন্দির (হাতিকামরুল)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯২২ সালে কংগ্রেস নেতা  মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর নেতৃত্বে উল্লাপাড়া উপজেলার সলংগা হাটে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং ৬ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত হন। এ ঘটনা ইতিহাসে ‘সলংগা বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ঘাটিনা ব্রিজের কাছে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ লোক আহত হয়। ২৩ এপ্রিল পাকসেনারা উল্লাপাড়ায় ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন শুরু করে। ২৫ এপ্রিল হাতিকামরুল গোলচত্বরের অদূরে চড়িয়া শিকা ও চড়িয়া কালীবাড়িতে পাকসেনারা বহুলোককে গুলি করে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর উল্লাপাড়া পাকসেনা মুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ  স্মৃতিস্তম্ভ ১ (ঘটিনা)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৭১, মন্দির ৮৫, মাযার ৫, তীর্থস্থান ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৬১%; পুরুষ ৪৪.৮১%, মহিলা ৩৪.০৯%। কলেজ ১৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৫১, কমিউনিটি স্কুল ১০, কিন্ডার গার্টেন ২০, মাদ্রাসা ৮২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বড় পাঙ্গাসি হাইস্কুল (১৮৯৮), উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), মোহনপুর কে.এম. ইনস্টিটিউশন (১৯১৫), সলোপ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), ঝিকড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৯৫, লাইব্রেরি ৪৪, নাট্যদল ২, যাত্রাদল ২, মহিলা সংগঠন ১৩০, সিনেমা হল ৫, কমিউনিটি সেন্টার ১১, খেলার মাঠ ৩০, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.০৩%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০০%, শিল্প ৭.০৫%, ব্যবসা ১৩.৬৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২১%, চাকরি ৫.১২%, নির্মাণ ১.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৮% এবং অন্যান্য ৬.২১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৭৮%, ভূমিহীন ৪৪.২২%। শহরে ৩২.৪৫% এবং গ্রামে ৫৭.৭২% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, যব, আলু, সরিষা, তিল, পিঁয়াজ, মরিচ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, তিসি, চীনা, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, তাল, তরমুজ, কলা, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬২, গবাদিপশু ১৯৬, হাঁস-মুরগি ২৮, হ্যাচারি ৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৩৬ কিমি, রেলপথ ২১ কিমি, নৌপথ ৬৭ নটিক্যাল মাইল। রেলওয়ে স্টেশন ৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, পাওয়ার লুম, কোল্ডস্টোরেজ, আইস ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, স্বর্ণশিল্প, লোহার কাজ, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাইকাজ ইত্যাদি।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ২৩, মেলা ৭। উল্লাপাড়া হাট, কয়রা হাট, সলংগা হাট, গয়হাট্টা হাট, গোপালনগর হাট, মোহনপুর হাট, উধুনিয়া হাট, বোয়ালিয়া হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  পাট, সরিষা, তিল, ময়দা, পিঁয়াজ, মরিচ ও  শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৬.৩৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.১১%, ট্যাপ ০.৪১%, পুকুর ০.৩০% এবং অন্যান্য ৭.১৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপেজলার ১৭.৫৫% (গ্রামে ১৫.০০% ও শহরে ৪৮.৩০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৯.৫১% (গ্রামে ৭১.৬৪% ও শহরে ৪৩.৭৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.ং৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, দাতব্য চিকিৎসালয় ৫, ই.পি.আই সেন্টার ৩১২, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৬।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭, ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ, কারিতাস, কেয়ার। [মোঃ রুহুল আমিন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; উল্লাপপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।