উল্কি

উল্কি  এক প্রকার অঙ্গচিত্র। আদিম সমাজে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে উল্কি-ধারণ ধর্ম-বিশ্বাসের অংশ ছিল; পরে সমাজ বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা সৌন্দর্যচর্চা, যৌনাচার, চিকিৎসা, সংবাদ প্রেরণ, আত্মরক্ষা ইত্যাদি কারণে ব্যবহূত হয়।

উল্কির রং অমোচনীয়; একবার ধারণ করলে আমরণ থাকে। ভারতে হিন্দুদের বিশ্বাস, দেহের উল্কি অলঙ্কারস্বরূপ; পরলোকে তা বিক্রি করে স্বর্গে যাওয়া যায়। আফ্রিকার ইকোই জাতির মেয়েরা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর তারা উল্কির বিনিময়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে। প্রাচীনকালে মিশরের লোকেরা বুকে ও বাহুতে দেবতার নাম ও প্রতীকের উল্কি অাঁকত। এতে দেবতার সঙ্গে তাদের একাত্মতা সৃষ্টি হতো। কোনো কোনো জাতি মনে করে, উল্কির ঐন্দ্রজালিক শক্তি আছে; অঙ্গে তা ধারণ করলে আপদ-বিপদ থেকে আত্মরক্ষা পাওয়া এবং রোগ-ব্যাধি ও প্রেতাত্মার আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।

চিত্রশিল্পী উল্কি অাঁকছেন

টোটেম গোষ্ঠীর লোকেরা স্ব-স্ব টোটেমের উল্কি পরে। এতে গোষ্ঠীচেতনা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়। নিউজিল্যান্ডের পুরুষরা কপালে, চোখের নিচে ও চিবুকে উল্কির ছাপ ধারণ করে। ইউরোপের নাবিকরা হাতে নোঙর ও জাহাজের উল্কি পরে। বাংলাদেশের বৈরাগীরা হাতের মণিবন্ধে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি অাঁকে। উপজাতিয়দের মধ্যে উল্কি পরার ব্যাপক রীতি আছে।  সাঁওতালওরাওঁ ও মুরিয়ারা গোত্রধর্ম, গোত্রমর্যাদা, পবিত্রতা ও সৌন্দর্যজ্ঞানে তাদের ছেলেমেয়েদের গায়ে উল্কি অাঁকায়। ওরাওঁরা গাত্রচর্মে সূর্য, সাপ, পাখি ও বৃত্ত অাঁকে।

উল্কি অাঁকার কাজে পেশাদার ওঝা আছে। তারা প্রথমে দেহের পেশীবহুল অংশের চামড়া কাঁটা বা সুচ দ্বারা বিদ্ধ করে এবং সে ক্ষতস্থানে রং লাগালেই উল্কি অাঁকা হয়ে যায়। প্রাচীনকালে উল্কি অাঁকার জন্য কেশুতিয়া পাতার রস ব্যবহার করা হতো এবং ক্ষত শুকাবার পর এতে নীলাভ হরিৎ বর্ণের উল্কি ফুটে উঠত। বর্তমানে বিভিন্ন রং ব্যবহার করা হয়।  [ওয়াকিল আহমদ]