উলিপুর উপজেলা

উলিপুর উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা)  আয়তন: ৪৫৮.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩৩´ থেকে ২৫°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলা, দক্ষিণে চিলমারী ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে রৌমারী উপজেলা ও ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৯৫২০৭; পুরুষ ১৯১০৪১, মহিলা ২০৪১৬৬। মুসলিম ৩৬৫২৮৭, হিন্দু ২৯৪২৩, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ১৪ এবং অন্যান্য ৪৮১।

জলাশয় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী।

প্রশাসন উলিপুর থানা গঠিত হয় ১৯০২ সালে এবং ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১৩৪ ৩৫৪ ৪৫৯৩৩ ৩৪৯২৭৪ ৮৬২ ৫০.৩ ৪৫.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লার লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৬.১৪ ১৬ ৪৫৯৩৩ ১৭৫৭ ৫০.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গুনাইগাছ ৫৫ ৬২৩৩ ১৩৫৪২ ১৪৬৯৭ ৫০.৩
তাবকপুর ৭৮ ৬০৩৮ ১৭১৪২ ১৮১০৩ ৪৮.০
থেটরায় ৮৩ ৬৭৮২ ১১৩৩৯ ১২৫৪৫ ৫১.২
দলদলিয়া ৩৩ ৫৫৭৩ ১০৮০৭ ১২২৭৭ ৫৬.৯
দূর্গাপুর ৫০ ৬০৯৮ ১৬৩৬২ ১৭৯০১ ৪৫.৭
ধরণীবাড়ী ৪৪ ৫০০৬ ১৩১৯৪ ১৪৭৭০ ৪৯.৩
ধামসের্নি ৩৯ ৩৯১৯ ১০৪৪৬ ১১৪৩৫ ৫৩.৬
পাণ্ডুল ৭২ ৪৭১১ ১১২১৯ ১২১০২ ৪৫.৬
বজরা ১৬ ৮৭৬৮ ১৫২৩৩ ১৬৪০১ ৪৯.২
বুড়াবুড়ি ২২ ৯৮৩৩ ১৬৪০২ ১৬৬৮৮ ৩৯.৬
বেগমগঞ্জ ১৪ ১১৩৫৫ ৮৭৭০ ৮৫৩৯ ২২.২
সাহেবের আলগা ৭৫ ২৪৯৪৬ ১০২৪৫ ১০১৮২ ২৪.৩
হাতিয়া ৬১ ৭৫৭১ ১৩৯৩৭ ১৪৯৯৬ ৩৭.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উলিপুর জামে মসজিদ, পাঁচপীরের ৩ গম্বুজ মসজিদ, সাতদরগাহ জামে মসজিদ, বজরা জামে মসজিদ, কাজী মসজিদ (দলদলিয়া ইউনিয়ন, ১২১৪ হিজরী), পাথরের উপর আরবি ভাষায় খোদিত হোসেন শাহী আমলের একটি মসজিদের শিলালিপি (বরেন্দ্র যাদুঘরে রক্ষিত), সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শিববাড়ি মন্দির, গোবিন্দ জিউ মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২০ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এখানকার বেশসংখ্যক ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে জনৈক ঋষিকেষ মজুমদার কারাবরণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে উলিপুরের চৌমুনী বাজারের নিকট মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর একটি কনভয় আক্রমণ করে। ১৯৭১ সাালের ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী উপজেলার হাতিয়ায় প্রায় ৭০০ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। উপজেলার ম-লের হাট নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় ৩টি গণকবর (উলিপুর ডাকবাংলো সংলগ্ন, হাতিয়া দাগার কুটি ও ধরণীবাড়ী মধুপুর) রয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন উলিপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উলিপুর মসজিদুর হুদা, উলিপুর জামে মসজিদ, দলদলিয়ার কাজী মসজিদ, সাতদরগাহ জামে মসজিদ, বজরা জামে মসজিদ, পাঁচপীরের ৩ গম্বুজ মসজিদ, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শিব মন্দির, শিববাড়ি মন্দির, গোবিন্দ জিউ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়হার ৪৫.৬%; পুরুষ ৪৯.৫%, মহিলা ৪২.১%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৩, মাদ্রাসা ১০০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), উলিপুর মহিলা মহাবিদ্যালয় (১৯৮৬), পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৭), এমএ মতিন কারিগরী ও কৃষি কলেজ (১৯৯৫), উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৮), দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), বকশিগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), উলিপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯০৯), উলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৯), দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), সাতদরগা নেছারিয়া আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৫২), কামাল খামার দ্বিমুখী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৫৪), নুরেশ্বর আমীনিয়া মাদ্রাসা (১৯৫৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: জুলফিকার ও কলম জমিন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গ্রন্থাগার ৬, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ১০।

বিনোদনকেন্দ্র টুপামারী পুকুর।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৪১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১০%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ১০.৬১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫৩%, চাকরি ৫.৬১%, নির্মাণ ১.১১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৮% অন্যান্য ৬.৫৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.৭০%। গ্রামে ৫৫.৯৩% এবং শহরে ৪৫.৩৭% পরিবারের কৃষিভূমি আছে।

প্রধান কৃষিফসল ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনাবাদাম, সরিষা, ডাল, তিল, আদা, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, মসুর, খেসারি।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, নারিকেল, পেঁপে, কলা, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৬ কিমি, রেলপথ ১৬ কিমি, নৌপথ ৫২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, হাচকিং মিল, বরফকল, ট্রেডল পাম্প তৈরির কারখানা, ওয়েলডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ৫৩। উলিপুর, দুর্গাপুর, বকশীগঞ্জ, মন্ডলহাট, বুড়াবুড়ি, অনন্তপুর, পান্ডুল, থেতরাই ও বজরা হাট এবং হাতিয়ার তাজিয়া মেলা ও সিদ্ধেশ্বরী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট, সুপারি, পান, পিঁয়াজ, রসুন।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ আছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৭%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য উৎস ২.২%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৫৭.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৩, মাতৃসদন ১, চক্ষু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, আলোর পথে।

[মোঃ আব্দুল হাকিম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; উলিপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।