উফরা রোগ
উফরা রোগ (Ufra Disease) নিমাটোড পরজীবী Ditylenchus angustus দ্বারা সংঘটিত জলিধানের এক রোগ। ১৯১৩ সালে বাটলার প্রথম নোয়াখালী এলাকা থেকে এ রোগের বিবরণ দেন। বরিশাল, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী এবং সিলেট জেলাসমূহের গভীর পানিতে ধান আবাদি এলাকাগুলিতে এ রোগ সহজেই চোখে পড়ে। ধানের কতিপয় জাত এ রোগে বেশি স্পর্শকাতর।
উফরা রোগ সংক্রমণকারী নিমাটোড পানির উপরে ভেসে থাকা ধানের পাতা, শীষ ও অন্যান্য অংশ আক্রমণ করে। এতে পাতা ও শীষের আবরণ ক্রমে স্বাভাবিক সবুজ রং হারিয়ে হলদে অথবা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। অনেক সময় পাতার উপর ধূসর রঙের ফোঁটা দাগ তৈরি হয় এবং আক্রান্ত গাছের পাতার দু কিনারা কুঞ্চিত হয়ে পড়ে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে ধানের থোর বেরুতে পারে না। কম বয়সের ধান গাছে রোগের লক্ষণ এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ পায়, বয়স্ক গাছে দু’সপ্তাহ পরে অথবা ফুল ফোটার প্রাক্কালে এ রোগ বোঝা যায়।
রোগ উৎপাদক পরজীবী D. angustus অতি ক্ষুদ্র, দৈর্ঘ্যে প্রায় ১.২৫ মিমি, সরু সুতার মতো এবং দেহের দু’প্রান্ত সুচালো। বহিঃপরজীবী হিসেবে কেবল ধান গাছেই এরা বেঁচে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। সক্রিয়ভাবে সাঁতরে এরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে স্থানান্তরিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পরজীবী কুন্ডলীকৃত হয়ে নিষ্ক্রিয় জীবন কাটায়। বৃষ্টির ছোঁয়াতে অথবা বর্ষাকালে এরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে সেচকৃত অথবা গভীর পানির ধান ক্ষেতে জুলাই-এর শেষভাগ থেকে আগস্ট পর্যন্ত উফরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
উফরা রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় অনাবাদি জমি শুকনো অবস্থায় কিছুদিন ফেলে রাখা, ধান কাটার পর ধান গাছের মুড়া ইত্যাদি পুড়িয়ে ফেলা এবং একই জমিতে বারবার ধান চাষ না করা। উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেও এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। [এস.এম হুমায়ুন কবির]