উপকূলাঞ্চল ব্যবস্থাপনা
উপকূলাঞ্চল ব্যবস্থাপনা (Coastal Zone Management) ভৌগোলিকভাবে নির্দিষ্ট বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উপকূলীয় পরিবেশ এবং আনুষঙ্গিক প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম কাঠামোগুলির সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ ক্রান্তিরেখা বা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ২১-২৩° উত্তর ও ৮৯-৯৩° পূর্ব অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। এ উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭১০ কিমি এবং তা তিনটি বড় অঞ্চলে বিভক্ত বদ্বীপীয় পূর্বাঞ্চল (প্রশান্ত মহাসাগরীয় ধরনের), বদ্বীপীয় কেন্দ্রঅঞ্চল এবং সুস্থিত ব-দ্বীপীয় পশ্চিমাঞ্চল (আটলান্টিক মহাসাগরীয় ধরনের)। প্রায় ৯,৩৮০ বর্গ কিমি বিস্তৃত উপকূল অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বহু সংখ্যক দ্বীপ, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের ফানেলাকার অংশ। বিপুল পরিমাণ পলি পরিবহণ (বার্ষিক প্রায় ২.৪ × ১০৯ মে টন), নিচু ভূমিরূপ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় সামুদ্রিক ঝড় ইত্যাদি হলো এ উপকূলীয় অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের উপকূলাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। উপকূলের বহুবিচিত্র ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ম্যানগ্রোভ (প্রায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর), মাছ শিকার (২৮ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৮৭ প্রজাতির মাছসহ মোট সংগৃহীত সামুদ্রিক মাছের ৮০%), চিংড়িচাষ সংক্রান্ত কর্মকান্ড (উপকূলীয় অঞ্চলের ১১,৫০০ হেক্টরের কাছাকাছি), পর্যটন (কক্সবাজারের ১৪৫ কিমি দীর্ঘ আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত), নৌবাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ, জাহাজ ভাঙা, তেল ও গ্যাস সন্ধান ইত্যাদি। প্রায়শই উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়।
বাংলাদেশে সত্যিকারের সমন্বিত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা (Integrated Coastal Zone Management/ICZM) পরিকল্পনায় পরিবেশগত বিবেচনাগুলির সমন্বয় বিধানের কিছুটা অভাব রয়েছে। উপকূলীয় জমির অবাধ বেসরকারিকরণ পরিবেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মৎস্যজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উপকূলীয় সম্পদের অতিব্যবহার, পানির মানের অবনতি, চিংড়ি ঘের তৈরীর জন্য ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতা, সামুদ্রিক ঝড় ইত্যাদি প্রধান সমস্যাগুলির অগ্রাধিকারভিত্তিক সুরাহা প্রয়োজন। উপকূলীয় অঞ্চলের বহুবিধ টেকসই ব্যবহারে সাফল্য লাভের লক্ষ্যে স্বল্পতম ব্যয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ বণ্টনের সমন্বিত কর্মকৌশল উদ্ভাবন প্রয়োজন। ১৯৯২ সালে প্রবর্তিত পরিবেশ আইন ও বিদ্যমান নীতিমালার অনুপুঙ্খ পরীক্ষা করে এবং সে সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের চাহিদা ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশে ICZM-কে কাজ শুরু করতে হবে। [অপূর্ব কৃষ্ণ দেব]