উপকূলবর্তী দ্বীপ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''উপকূলবর্তী দ্বীপ''' (Offshore Island)  উপকূল, অর্থাৎ সমুদ্রতীরের অনতিদূরের দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের ফানেল বা চোঙ আকৃতির অগভীর প্রণালীতে এ ধরনের প্রচুর দ্বীপ গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা মোহনার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে  [[পলি|পলি]] উপকূল অঞ্চলে জমা করে, যার ফলে এ সকল দ্বীপের সৃষ্টি। এ দ্বীপগুলির বিন্যাসরীতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশই গঠিত হয়েছে উপকূলের মধ্য অংশে, অর্থাৎ  তেঁতুলিয়া নদীর পূর্ব থেকে  ফেনী নদীর বিশাল মোহনার মধ্যবর্তী স্থানে। এ অঞ্চল অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, ক্ষয়ীভবনের প্রবণতা রয়েছে এবং একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক অবক্ষেপণ ঘটছে। ফলে এখানকার  [[তটরেখা|তটরেখা]] অনিয়মিত এবং ভঙ্গুর। হাতিয়া, ভোলা ও মনপুরা এ অঞ্চলের প্রধান তিনটি উপকূলীয় দ্বীপ এবং এগুলি সবই ঘনবসতিপূর্ণ। পশ্চিমাঞ্চলের তটরেখা মহাদেশীয় উপান্ত (continental margin) কাঠামোর সঙ্গে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। তটরেখার সম্মুখভাগ তুলনামূলকভাবে সুস্থিত এবং ঘন গরান বন দিয়ে আবৃত যা  [[সুন্দরবন|সুন্দরবন]] নামে খ্যাত। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উপকূলীয় দ্বীপসমূহ (সারণি)।
'''উপকূলবর্তী দ্বীপ''' (Offshore Island)  উপকূল, অর্থাৎ সমুদ্রতীরের অনতিদূরের দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের ফানেল বা চোঙ আকৃতির অগভীর প্রণালীতে এ ধরনের প্রচুর দ্বীপ গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা মোহনার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে  [[পলি|পলি]] উপকূল অঞ্চলে জমা করে, যার ফলে এ সকল দ্বীপের সৃষ্টি। এ দ্বীপগুলির বিন্যাসরীতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশই গঠিত হয়েছে উপকূলের মধ্য অংশে, অর্থাৎ  তেঁতুলিয়া নদীর পূর্ব থেকে  ফেনী নদীর বিশাল মোহনার মধ্যবর্তী স্থানে। এ অঞ্চল অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, ক্ষয়ীভবনের প্রবণতা রয়েছে এবং একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক অবক্ষেপণ ঘটছে। ফলে এখানকার  [[তটরেখা|তটরেখা]] অনিয়মিত এবং ভঙ্গুর। হাতিয়া, ভোলা ও মনপুরা এ অঞ্চলের প্রধান তিনটি উপকূলীয় দ্বীপ এবং এগুলি সবই ঘনবসতিপূর্ণ। পশ্চিমাঞ্চলের তটরেখা মহাদেশীয় উপান্ত (continental margin) কাঠামোর সঙ্গে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। তটরেখার সম্মুখভাগ তুলনামূলকভাবে সুস্থিত এবং ঘন গরান বন দিয়ে আবৃত যা  [[সুন্দরবন|সুন্দরবন]] নামে খ্যাত। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উপকূলীয় দ্বীপসমূহ (সারণি)।
{| class="table"
{| class="table"
|-
|-
| ১. || দক্ষিণ তালপট্টি || ১৫. || ভোলা
| ১. || দক্ষিণ তালপট্টি || ১৫. || ভোলা
|-
|-
| ২. || তালপট্টি || ১৬. || চরফ্যাশন
| ২. || তালপট্টি || ১৬. || চরফ্যাশন
|-
|-
| ৩. || পাটনী দ্বীপ || ১৭. || চর কুকরী মুকরী
| ৩. || পাটনী দ্বীপ || ১৭. || চর কুকরী মুকরী
|-
|-
| ৪. || নীলকমল  || ১৮. || ঢাল চর
| ৪. || নীলকমল  || ১৮. || ঢাল চর
|-
|-
| ৫. || দুবলার চর || ১৯. || মনপুরা
| ৫. || দুবলার চর || ১৯. || মনপুরা
|-
|-
| ৬. || চর লালদিয়া || 20. || নিঝুম দ্বীপ
| ৬. || চর লালদিয়া || 20. || নিঝুম দ্বীপ
|-
|-
| ৭. || পাথরঘাটা || ২১. || হাতিয়া
| ৭. || পাথরঘাটা || ২১. || হাতিয়া
|-
|-
| ৮. || বরগুনা || ২২. || উরিরচর
| ৮. || বরগুনা || ২২. || উরিরচর
|-
|-
| ৯. || পটুয়াখালী  || ২৩. || সন্দ্বীপ
| ৯. || পটুয়াখালী  || ২৩. || সন্দ্বীপ
|-
|-
| ১০. || কলাপাড়া || ২৪. || কুতুবদিয়া
| ১০. || কলাপাড়া || ২৪. || কুতুবদিয়া
|-
|-
| 11. || মৌডুবি || ২৫. || চর মাতারবাড়ী
| ১১. || মৌডুবি || ২৫. || চর মাতারবাড়ী
 
|-
|-
| ১২. || রাঙ্গাবালি || ২৬. || মহেশখালী
| ১২. || রাঙ্গাবালি || ২৬. || মহেশখালী
|-
|-
| ১৩. || চর লক্ষ্মী  || ২৭. || সোনাদিয়া
| ১৩. || চর লক্ষ্মী  || ২৭. || সোনাদিয়া
৪৫ নং লাইন: ৩৪ নং লাইন:


[[Image:CoastalIsland.jpg|thumb|400px|right|উপকূলবর্তী দ্বীপ]]
[[Image:CoastalIsland.jpg|thumb|400px|right|উপকূলবর্তী দ্বীপ]]
বাংলাদেশের উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ অত্যন্ত সক্রিয়  [[জোয়ারভাটা|জোয়ারভাটা]] প্রভাবিত জালিকা সদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী সুন্দরবনসহ আশপাশের অঞ্চলকে বহু ছোট ছোট দ্বীপে বিভক্ত করেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দ্বীপগুলিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এগুলি সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত। হরিণঘাটা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় অনেকগুলি ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলবর্তী দ্বীপ রয়েছে যেগুলি বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত। পাথরঘাটা, আমতলী, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালি ও বাউফল এ ধরনের কয়েকটি দ্বীপ। পূর্বাঞ্চলের উপকূলে সামান্য কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে সন্দ্বীপ, উরিরচর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস উল্লেখযোগ্য। এগুলির মধ্য থেকে সন্দ্বীপ ও উরিরচরকে বাদ দিলে বাকিগুলি অর্থাৎ কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ টেকটনিক জাত। উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহের মধ্যে হাতিয়া এবং সন্দ্বীপ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রধান ভূভাগগুলিতে স্থল এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধিত হলেও বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপসমূহে উন্নয়নের ছোঁয়া বলতে গেলে লাগেইনি। অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি এ সমস্ত এলাকায় প্রবল। চর এলাকার এ সমস্ত মানুষের দরিদ্রতা দূরীকরণ এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে হবে। এ ছাড়া মহেশখালী এবং সেন্টমার্টিনের মতো দ্বীপগুলি পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  [মোহা. শামসুল আলম]
বাংলাদেশের উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ অত্যন্ত সক্রিয়  [[জোয়ারভাটা|জোয়ারভাটা]] প্রভাবিত জালিকা সদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী সুন্দরবনসহ আশপাশের অঞ্চলকে বহু ছোট ছোট দ্বীপে বিভক্ত করেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দ্বীপগুলিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এগুলি সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত। হরিণঘাটা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় অনেকগুলি ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলবর্তী দ্বীপ রয়েছে যেগুলি বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত। পাথরঘাটা, আমতলী, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালি ও বাউফল এ ধরনের কয়েকটি দ্বীপ। পূর্বাঞ্চলের উপকূলে সামান্য কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে সন্দ্বীপ, উরিরচর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস উল্লেখযোগ্য। এগুলির মধ্য থেকে সন্দ্বীপ ও উরিরচরকে বাদ দিলে বাকিগুলি অর্থাৎ কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ টেকটনিক জাত। উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহের মধ্যে হাতিয়া এবং সন্দ্বীপ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রধান ভূভাগগুলিতে স্থল এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধিত হলেও বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপসমূহে উন্নয়নের ছোঁয়া বলতে গেলে লাগেইনি। অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি এ সমস্ত এলাকায় প্রবল। চর এলাকার এ সমস্ত মানুষের দরিদ্রতা দূরীকরণ এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে হবে। এ ছাড়া মহেশখালী এবং সেন্টমার্টিনের মতো দ্বীপগুলি পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  [মোহা. শামসুল আলম]


[[en:Offshore Island]]
[[en:Offshore Island]]

০২:৩৮, ৬ আগস্ট ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

উপকূলবর্তী দ্বীপ (Offshore Island)  উপকূল, অর্থাৎ সমুদ্রতীরের অনতিদূরের দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের ফানেল বা চোঙ আকৃতির অগভীর প্রণালীতে এ ধরনের প্রচুর দ্বীপ গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা মোহনার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে  পলি উপকূল অঞ্চলে জমা করে, যার ফলে এ সকল দ্বীপের সৃষ্টি। এ দ্বীপগুলির বিন্যাসরীতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশই গঠিত হয়েছে উপকূলের মধ্য অংশে, অর্থাৎ  তেঁতুলিয়া নদীর পূর্ব থেকে  ফেনী নদীর বিশাল মোহনার মধ্যবর্তী স্থানে। এ অঞ্চল অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, ক্ষয়ীভবনের প্রবণতা রয়েছে এবং একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক অবক্ষেপণ ঘটছে। ফলে এখানকার  তটরেখা অনিয়মিত এবং ভঙ্গুর। হাতিয়া, ভোলা ও মনপুরা এ অঞ্চলের প্রধান তিনটি উপকূলীয় দ্বীপ এবং এগুলি সবই ঘনবসতিপূর্ণ। পশ্চিমাঞ্চলের তটরেখা মহাদেশীয় উপান্ত (continental margin) কাঠামোর সঙ্গে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। তটরেখার সম্মুখভাগ তুলনামূলকভাবে সুস্থিত এবং ঘন গরান বন দিয়ে আবৃত যা  সুন্দরবন নামে খ্যাত। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উপকূলীয় দ্বীপসমূহ (সারণি)।

১. দক্ষিণ তালপট্টি ১৫. ভোলা
২. তালপট্টি ১৬. চরফ্যাশন
৩. পাটনী দ্বীপ ১৭. চর কুকরী মুকরী
৪. নীলকমল  ১৮. ঢাল চর
৫. দুবলার চর ১৯. মনপুরা
৬. চর লালদিয়া 20. নিঝুম দ্বীপ
৭. পাথরঘাটা ২১. হাতিয়া
৮. বরগুনা ২২. উরিরচর
৯. পটুয়াখালী  ২৩. সন্দ্বীপ
১০. কলাপাড়া ২৪. কুতুবদিয়া
১১. মৌডুবি ২৫. চর মাতারবাড়ী
১২. রাঙ্গাবালি ২৬. মহেশখালী
১৩. চর লক্ষ্মী  ২৭. সোনাদিয়া
১৪. চর মন্তাজ ২৮. সেন্ট মার্টিন
উপকূলবর্তী দ্বীপ

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ অত্যন্ত সক্রিয়  জোয়ারভাটা প্রভাবিত জালিকা সদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী সুন্দরবনসহ আশপাশের অঞ্চলকে বহু ছোট ছোট দ্বীপে বিভক্ত করেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দ্বীপগুলিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এগুলি সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত। হরিণঘাটা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় অনেকগুলি ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলবর্তী দ্বীপ রয়েছে যেগুলি বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত। পাথরঘাটা, আমতলী, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালি ও বাউফল এ ধরনের কয়েকটি দ্বীপ। পূর্বাঞ্চলের উপকূলে সামান্য কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে সন্দ্বীপ, উরিরচর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস উল্লেখযোগ্য। এগুলির মধ্য থেকে সন্দ্বীপ ও উরিরচরকে বাদ দিলে বাকিগুলি অর্থাৎ কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ টেকটনিক জাত। উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহের মধ্যে হাতিয়া এবং সন্দ্বীপ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রধান ভূভাগগুলিতে স্থল এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধিত হলেও বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপসমূহে উন্নয়নের ছোঁয়া বলতে গেলে লাগেইনি। অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি এ সমস্ত এলাকায় প্রবল। চর এলাকার এ সমস্ত মানুষের দরিদ্রতা দূরীকরণ এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে হবে। এ ছাড়া মহেশখালী এবং সেন্টমার্টিনের মতো দ্বীপগুলি পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  [মোহা. শামসুল আলম]