ইসলাম, মুস্তাফা নূরউল
ইসলাম, মুস্তাফা নূরউল (১৯২৭-২০১৮) ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ১৯২৭ সালের ১লা মে বগুড়ার মহাস্থানগড় সংলগ্ন চিঙ্গাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাদত আলি আখন্দ আর মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন। তার পিতা একজন স্বনামখ্যাত লেখক ছিলেন। তিনি ছিলেন মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান। পাঁচ বছর বয়সে ১৯৩২-৩৩ সালে কলকাতায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাতে তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি।
নূরউল ইসলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে লন্ডনে পিএইচডি করার সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শৈশব থেকেই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ, ছাত্রজীবনে বামধারার রাজনীতির সঙ্গে সংযোগ ও ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ তাঁর চিন্তা ও কর্মে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখেছে। তাঁর কর্মজীবন বিচিত্র, বর্ণাঢ্য। মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ১৯৫১ সাল সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। দৈনিক সংবাদ-এর প্রথম সংখ্যা থেকে যুক্ত ছিলেন সহকারী সম্পাদক হিসেবে। কাজ করেছেন দৈনিক মিল্লাত-এ। শিক্ষকতা করেছেন সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের হাতে। শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় জাদুঘরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, অনুবাদ, সম্পাদনা মিলিয়ে মুস্তাফা নূরউল ইসলামের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় অর্ধশত। তাঁর বইয়ের মধ্যে ‘সমকালে নজরুল ইসলাম’, ‘সাময়িকপত্রে জীবন ও জনমত’, ‘আমার বাংলা’, ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’ উল্লেখযোগ্য। ‘পূর্বমেঘ’, ‘অগত্যা’, ‘সুন্দরম’ নামের তিনটি বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে তিনি যুক্ত থেকেছেন। ১৯৫০-এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদিত ‘দাঙ্গার পাঁচটি গল্প’ তাঁর একটি সাড়া জাগানো প্রকাশনা। তিনি অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনাতেও বিশেষ মাত্রা যোগ করেছেন। দেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য নিয়ে বিচিত্র বিষয়ে তিনি দীর্ঘকাল ধরে ‘মুক্তধারা’, ‘কথামালা’, ‘বাঙালির বাংলা’ নামে অনুষ্ঠান করেছেন। সেরা টেলিভিশন উপন্থাপনার জন্যও অনেকের পরিচিত মুখ ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বিটিভিতে ‘মুক্তধারা’ অনুষ্ঠানটি একাধারে ১৫ বছর উপস্থাপনা করেন তিনি।
সাহিত্য ও শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১১ সালে তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ৯ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই ছেলে এবং দুই মেয়ের জনক। [সাব্বীর আহমেদ]