ইসলাম, নূরুল১
ইসলাম, নূরুল১ (১৯২৮-২০১৩) চিকিৎসক এবং জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ১৯২৮ সালের ১লা এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাইদুর রহমান এবং মাতার নাম গুলমেহের বেগম। তার পিতা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন।
তিনি গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌড়চন্দ্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুশেন এবং ১৯৪৫ সালে কলকাতা ইসলামিয়া বিজ্ঞান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে এম.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ সালে তিনি ওয়েল্স ইউনিভার্সিটি থেকে যথাক্রমে এমআরসিপি এবং টিডিডি (ডিপ্লোমা ইন টিউবার কিউলিসিস রোগ) ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
দেশে ফিরে ইসলাম মিটফোর্ড হাসপাতালে যোগদান করেন। অতপর ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। তিনি ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন রিসার্চ (আইপিজিএমআর)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে, এই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের প্রথম ডিন ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ইসলাম চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব এপ্লাইড হেল্থ এবং সাইন্স (আইএএইচএস) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)।
তিনি ইসলামিক মেডিকেল মিশন, জনসেবা ফাউন্ডেশন এবং WHO কর্তৃক স্বীকৃত তামাক বিরোধী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮২ সালে ঔষধ নীতি প্রণয়নের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল এইডস কমিটির প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তিনি ন্যাশনাল ড্রাগ কমিটিরও দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়া হয়। এছাড়াও তিনি অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। যেমন ‘রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক’ (১৯৬৩), ‘ফজলুল হক স্মৃতি স্বর্ণপদক’ (১৯৮২), ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স প্রদত্ত স্বর্ণপদক’ (১৯৮২), ‘WHO স্মারক স্বর্ণপদক’ (১৯৯০, ১৯৯২), ‘এডিনবরা রয়েল কলেজ চিকিৎসক প্রদত্ত স্বর্ণপদক’ (১৯৯৯)। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বর্ণপদক ও পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করে। তার ২৭টি গ্রন্থ এবং বিদেশী মেডিকেল জার্নালে শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ২০১৩ সালের ২৪শে জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। [এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]