ইম্পে, স্যার এলিজা
ইম্পে, স্যার এলিজা (১৭৩২-১৮০৯) ছিলেন ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত কলকাতা সুপ্রীম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি। জন্ম ১৩ জুন ১৭৩২। তিনি প্রথমে ওয়েস্টমিনস্টার এবং পরে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অধ্যয়ন করেন। স্যার এলিজা ইম্পে ওয়ারেন হেস্টিংসের অনুরোধে মহারাজা নন্দ কুমারের বিরূদ্ধে আণীত একটি জালিয়াতি মামলার বিচারের (১৭৭৫) কাজ পরিচালনা করে বাংলার বিচার বিভাগের ইতিহাসে বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত হন।
বিচারের রায়ে নন্দ কুমার এর ফাঁসি হয়। ওয়ারেন হেস্টিংস সন্দেহ করেছিলেন যে, ফিলিপ ফ্রান্সিস তাঁর বিরুদ্ধে কাউন্সিলের নিকট যে দুর্ণীতির অভিযোগ করেছিলেন, তাতে নন্দ কুমারের ইন্ধন ছিল। ইতিপূর্বেই হেসটিংস এবং নন্দ কুমারের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারন, ওয়ারেন হেসটিংস নওয়াব নাজিমউদ্দৌলাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শণ না করায় নওয়াবের দিওয়ান হিসেবে নন্দ কুমার তা সহজভাবে গ্রহন করতে পারেননি। এলিজা ইম্পে ওয়েস্টমিনস্টারে অধ্যয়নকালে হেস্টিংস এর সহপাঠী ছিলেন। কলকাতায় অবস্থানকালে তাঁদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ধারণা করা হয় যে, হেস্টিংস মহারাজা নন্দকুমারকে শাস্তি দেওয়ার জন্য একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন এবং জনৈক মোহন প্রসাদ, মহারাজা নন্দকুমারের বিরুদ্ধ একটি জালিয়াতির মামলা রজু করলে সেই সুযোগটিকে তিনি কাজে লাগান।
সে সময় ইংল্যান্ডের আইনে ‘জালিয়াতি’ ছিল মৃত্যুদন্ড যোগ্য অপরাধ। ঐতিহাসিকগণ নন্দ কুমারের বিচারের এই রায়কে প্রধানত তিনটি দিক বিবেচনা করে একে একটি ‘বিচারিক হত্যা’ (Judicial Murder) বলে মত প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, নন্দকুমারের বিরুদ্ধে আনীত মামলাটি দায়ের করা হয় কলকাতা সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠার চার বছর পূর্বে। দ্বিতীয়ত, মুসলিম এবং হিন্দু আইনে জালিয়াতি ছিল একটি খুব সাধারণ অপরাধ। তাছাড়া হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী একজন ব্রাহ্মণের বিরূদ্ধে আনীত অভিযোগে তঁ্াকে কখনও মৃত্যুদন্ড দেওয়া যায় না। ১৭৮৭ সালে স্যার ইম্পের বিরুদ্ধে হাউজ অব কমনস এ আনীত অনাস্থা প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়। হেসটিংস এবং স্যার ইম্পের এই ষড়যন্ত্রমূলক বিচারিক হত্যার বিরূদ্ধে ম্যাকলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অথচ স্যার জেমস ফিটজেমস এই রায় পরীক্ষা করে মন্তব্য করেন যে, এই রায় সম্পূর্ন পক্ষপাতহীন ও ন্যায্য হয়েছে এবং স্যার ইম্পে তাঁর দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন। মৃত্যু ১৮০৯ সালের ১ অক্টোবর। [সিরাজুল ইসলাম]