ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, কলকাতা
ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, কলকাতা ১৮১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটি এর অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম জাদুঘর। যাত্রা শুরুর সময় থেকে সংগ্রহ, বিন্যাস, প্রসার - বহুমাত্রিক পর্যায়সমূহ ফলপ্রসূভাবে এটি অতিক্রম করেছে। প্রথমদিকে এশিয়াটিক মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত এ জাদুঘর পরবর্তীকালে ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম নামে পরিচিতি লাভ করে এবং উপমহাদেশের মধ্যে এ শ্রেণীর সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
প্রায় আট হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ জাদুঘরে শিল্পকলা ও প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য সংগ্রহ শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা এ ছয়টি ভাগে মোট ষাটটি গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। বহুমুখী এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নানাবিধ সুশৃঙ্খল কার্যক্রম। যার ফলে ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে একে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৮৬৬ সালে ভারতীয় জাদুঘর অধ্যাদেশ XVII, ১৮৬৬-এর অধীনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব ‘ট্রাস্টিস অব ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’ (Trustees of the Indian Museum) নামের একটি কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা পরবর্তীকালে ইন্ডিয়ান ভারতীয় জাদুঘর অধ্যাদেশ X, ১৯১০ দ্বারা সংশোধন করা হয়। বর্তমানে ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম প্রশাসন ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সংশোধিত ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম অধ্যাদেশ ১৯১০ অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানের ভিক্টোরিয়ান সৌধটির ভিত্তি স্থাপন করা হয় ১৮৬৭ সালে এবং ১৮৭৫ সালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থপতি ছিলেন ডব্লিউ.এল গ্র্যানভিল। চৌরঙ্গী রোডের উপর সবুজ ময়দানের পাশে এ প্রাসাদে স্থাপিত জাদুঘরটি ১৮৭৮ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে প্রাক ও আদি ঐতিহাসিক, মৌর্য, শুঙ্গ, সাতবাহন, গান্ধার, কুষাণ, গুপ্ত, পাল-সেন, চন্ডেল, হোয়সলা ও চোল যুগীয় শিল্পের গ্যালারিগুলির পাশাপাশি অন্যান্য বহুযুগের প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহও রয়েছে। একটি বিশেষ গ্যালারিতে রয়েছে মিশরীয় প্রাচীন নিদর্শনের একটি সংগ্রহ, যেখানে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে একটি মমি। এ ছাড়াও রয়েছে সংস্কৃত, প্রাকৃত, আরবি, ফার্সি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় শিলালিপি, পান্ডুলিপি ও সিলমোহর। ভারতীয় প্রাচীন, মধ্যযুগীয় ও আধুনিককালের মুদ্রাসমূহ কয়েকটি গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
শিল্পকলা শাখাটিতে ভারতীয় চিত্রকলা, বস্ত্রশিল্প ও অলংকরণ সামগ্রীর পাশাপাশি নেপাল, তিববত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, শ্রীলংকা এবং ইরানের শিল্পসামগ্রীও প্রদর্শিত হচ্ছে। নৃবিজ্ঞান শাখায় প্রত্ন-নৃতত্ত্ব ও সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের বিভাগ এবং সাথেই রয়েছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে সজ্জিত একটি গ্যালারি। জুওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, জিওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ও বোটনিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া কর্তৃক পরিচালিত বিজ্ঞান শাখার অনেকগুলি গ্যালারি রয়েছে। প্রাণিবিদ্যার গ্যালারিগুলিতে কীটপতঙ্গ, মাছ, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ প্রাণী, পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রদর্শিত হচ্ছে।
অর্থকরী উদ্ভিদ শাখায় ভেষজ গাছগাছড়া, উদ্ভিজ্জ তন্তু, রঞ্জক উদ্ভিদ, আঠা ও রেসিন (resin), দারু, তেল ও তৈলবীজের সংগ্রহ রয়েছে। ভূতত্ত্ব বিভাগের সংগ্রহ পাঁচ ভাগে বিভক্ত: সিওয়ালিক জীবাশ্ম, ভূপৃষ্ঠ ও উল্কাপিন্ড, প্রস্তর ও খনিজ, অমেরুদন্ডী ও মেরুদন্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম।
জাদুঘরের পরিচালনায় কয়েকটি সমন্বয়কারী কার্যকরী কমিটি রয়েছে যথা: শিক্ষা, উপস্থাপন, প্রকাশনা, সংরক্ষণ, ফটোগ্রাফি, মেডিক্যাল, মডেলিং ও গ্রন্থাগার। এ সকল কমিটি জাদুঘর ও পরিদর্শকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ভিত্তিতে ভিডিও ও মুদ্রিত তথ্য প্রকাশ, প্রতিমূর্তি তৈরি, জাদুঘরের জিনিসপত্রের পরিচর্যা, গণসংযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কার্যক্রমের দিকে সামগ্রিকভাবে লক্ষ রাখে। এ ছাড়াও জাদুঘরে অভ্যন্তরীণ বক্তৃতা, সেমিনার, প্রদর্শনী এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক, আন্তর্দেশীয়, ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর মতো বহির্মুখী কার্যক্রম বৃদ্ধি করছে। [শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী]