ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)  ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (১৯৭৬ সালের ৪০ নং অধ্যাদেশ)-এর অধীনে ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত। এটি একাধারে একটি বিনিয়োগ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। দেশের শিল্পায়নের গতিকে বেগবান, সুসংহত এবং সিকিউরিটিজ মার্কেটকে সমৃদ্ধ করতে আইসিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোম্পানির মূলধন স্বল্পতা পূরণে আইসিবি সহায়তা প্রদান করে। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ নীতিমালার আলোকে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইসিবির ভূমিকা রয়েছে। আইসিবি প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ২ মিলিয়ন শেয়ারে বিভক্ত মোট ২০০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।

২০০৮-এর ৩০ জুন আইসিবির  মূলধনের শেয়ার মালিকানা  কাঠামো ছিল নিমণরূপ:

শেয়ার হোল্ডার শেয়ার হোল্ডারের সংখ্যা শেয়ারের পরিমাণ শতকরা হার
বাংলাদেশ সরকার ১৩৫০০০০ ২৭.০০
রাষ্ট্রীয়কৃত বাণিজ্যিক ব্যাংক ১১৩৬৯০০ ২২.৭৪
উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২৮১৫৫০ ২৫.৬৩
বীমা কোম্পানিসমূহ ৬১৭৭৮১ ১২.৩৫
বিরাষ্ট্রীয়কৃত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৪৫৪২৬৩ ৯.০৮
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ২৮২৮৬ ০.৫৭
বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক ১১০ ০.০১
প্রথম বিএসআরএস মিউচুয়াল ফান্ড ৫৭৫০ ০.১২
অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ১২ ১৭৪৫৪ ০.৩৪
সাধারণ জনগণ ১১০৯ ১০৭৯০৬ ২.১৬
মোট ১১৩৮ ৫০০০০০০ ১০০.০০

আইসিবি বর্তমানে তিন ধরনের রিজার্ভ ফান্ড জেনারেল রিজার্ভ, বিল্ডিং রিজার্ভ এবং লভ্যাংশ সমতাকরণ রিজার্ভ ফান্ড সংরক্ষণ করছে। দি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (সংশোধন) আইন, ২০০০ (২০০০ সালের ২৪ নং আইন) বলে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন ও পরিচালনার মাধ্যমে আইসিবি তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার কৌশল ও নীতিতে সংস্কার এনেছে। আইসিবি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত।

প্রাথমিক পর্যায়ে আইসিবির কার্যাবলি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও ডিবেঞ্চারের প্রাথমিক ইস্যু অবলিখন, সেতু ঋণ প্রদান এবং ইনভেস্টরস স্কিম পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে মূলধন বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে কর্পোরেশন কাজের পরিধি সম্প্রসারণ করে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও উন্নয়নে অর্থায়ন শুরু করে। আইসিবি বর্তমানে ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিবেঞ্চার লোন এবং আইসিবি ইউনিট সার্টিফিকেটের বিপরীতে ঋণ দিচ্ছে। অপরদিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে যন্ত্রসরঞ্জামের জন্য ইউনিট ফান্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাসহ স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি শেয়ার সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইসিবি মূলধন বাজার উন্নয়ন এবং মূলধন-প্রবাহ বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। দেশের শিল্পায়নে আইসিবি ১৯৯৯ সাল থেকে তার ইজারা অর্থসংস্থান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আইসিবি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ১০৯৬৬ মিলিয়ন টাকার ২৪টি মিউচুয়্যাল ফান্ডের মধ্যে ১৭৫ মিলিয়ন টাকার ৮টি মিউচুয়াাল ফান্ড বাজারজাত করেছে। আইসিবি ১৯৯৮ সাল থেকে আইসিবি ইউনিট ও মিউচুয়্যাল ফান্ড এবং আইসিবি এএমসিএল ইউনিট সার্টিফিকেটের বিপরীতে অগ্রিম প্রদান শুরু করে। এ স্কীমের আওতায় ইউনিট হোল্ডারগণ সহজ শর্তে ইউনিট সার্টিফিকেট লিয়েনে রেখে অগ্রিম গ্রহণ করতে পারে। আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড ১৩ আগস্ট ২০০২ তারিখ থেকে কার্যক্রম শুরুর পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেনের পরিমাণ বিবেচনায় শীর্ষ ব্রোকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায়। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও বগুড়ায় এর মোট ৮টি শাখা অফিস রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের ৪টি মূল উইং-এর অধীনে ৩১টি বিভাগ কর্পোরেশনের কার্য সম্পাদন করছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত এর মোট লোকবল ছিল ৬৬৫ জন এবং এর মধ্যে ৪৬৮জন কর্মকর্তা ও ১৯৭ জন কর্মচারি। ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদের ওপর এর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এবং নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যৌথভাবে গৃহীত ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (CMDP)-এর আওতায় এবং আইসিবি অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ সংশোধন করে The Investment Corporation of Bangladesh (amendment) Act ২০০০ (২০০০ সালের ৪০ নং আইন)-এর ক্ষমতাবলে আইসিবির অধীনে তিনটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠিত হয়েছে। এগুলি হলো- আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানিগুলি মার্চেন্ট ব্যাংকিং, মিউচুয়্যাল ফান্ড পরিচালনা এবং সিকিউরিটিজ লেনদেনে ২০০২ সাল থেকে স্ব স্ব কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে আইসিবি সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন ব্যবসা পরিচালনা বন্ধ রেখেছে।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)

বিবরণ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
অনুমোদিত মূলধন ১০০০০ ১০০০০ ১০০০০
পরিশোধিত মূলধন ৬৬৪৫ ৬৯৭৭ ৭৬৭৪
রিজার্ভ ৩১৪০৪ ১৪৬১ ৩৫৯১৯
আমানত ১১০০৬৫ ১০৮৮৮০ ১০৮৪৫১
ক) তলবি আমানত ১৬৮০ ১৯৩০ ১৫৩০
খ) মেয়াদি আমানত ১০৮৩৮৫ ১০৬৯৫০ ১০৬৯২১
ঋণ ও অগ্রিম ২৪৯৬৫ ৩১৮৮৮ ৩৩১৩৭
বিনিয়োগ ১১৫২০৩ ১২৩৫১১ ১৪৫৫৭২
মোট পরিসম্পদ ১৭১০৯৬ ১৮৪৬২৪ ২০১১৫৭
মোট আয় ১৭০২৪ ১৩৩৫২ ১১৬৪৩
মোট ব্যয় ১০৩৪৭ ১১৫৪৬ ৯৭৯৯
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা
ক) রপ্তানি
খ) আমদানি
গ) রেমিট্যান্স
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ৫৯০ ৫৯৯ ৬৬৫
ক) কর্মকর্তা ৩৯৮ ৪০৬ ৪৬৮
খ) কর্মচারি ১৯২ ১৯৩ ১৯৭
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়)
শাখা (সংখ্যায়)
ক) দেশে
খ) বিদেশে
কৃষি খাতে
ক) ঋণ বিতরণ
খ) আদায়
শিল্প খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৮১৭৪ ৬৭১১ ৪৫০
খ) আদায় ৬১৮ ১২০১ ১৩৯০
খাত ভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য
খ) শিল্প
গ) ব্যবসা বাণিজ্য
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন
সি.এস.আর ১২

উৎস  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১

কর্পোরেশন আধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটার সেটআপ গড়ে তুলেছে এবং নিজস্ব সফটওয়ারের উন্নয়ন সাধন করেছে। আইসিবির বিভিন্ন ডিভিশন/ডিপার্টমেন্ট ও শাখাসমূহকে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে কর্পোরেশনের তথ্যাদি ইন্টারনেটে অনুসন্ধান ও তা ডাউনলোড করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কর্পোরেশন ওয়েব সাইট-এর মাধ্যমে আগ্রহী ব্যক্তিগণ আইসিবি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবি সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ফান্ড (SARF) নামে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি উন্নয়ন তহবিল গঠন করে। মরিশাসে নিবন্ধিত কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (CDC)-এর মালিকানাধীন একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এ ফান্ড পরিচালনা করে। এছাড়া কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এ ফান্ডে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধন বিনিয়োগ করেছে। সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ফান্ড-এর সাথেও আইসিবির কার্যকর যোগাযোগ ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]