ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ
ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ (১৩৪৯-১৩৫২) বাংলার সুলতান। তিনি ছিলেন বাংলায় প্রথম মুসলিম সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা সোনারগাঁয়ের সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের (১৩৩৮-১৩৪৯) উত্তরাধিকারী। বাংলার লিপিবদ্ধ ইতিহাসে তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত, তাতে তাঁর নামের কোনো উল্লেখই নেই। শুধুমাত্র প্রাপ্ত মুদ্রা থেকেই তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। একমাত্র মালফুয-উস-সফর শীর্ষক একটি সুফি গ্রন্থে তাঁর নামের উল্লেখ রয়েছে। ৭৫০ হিজরির (১৩৪৯ খ্রি) কোনো এক সময় থেকে তাঁর পূর্বসূরী ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের মুদ্রা জারী বন্ধ হয়ে যায় এবং ওই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়। একই বছর থেকে ইখতিয়ারউদ্দিন গাজীশাহ কর্তৃক সোনারগাঁ টাকশাল থেকে এক নাগাড়ে ৭৫৩ হিজরি (১৩৫২ খ্রি) পর্যন্ত মুদ্রা জারি করা হয়।
ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ উত্তরাধিকারী ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহের সম্পর্ক নিয়ে মতভেদ রয়েছে। স্বীয় মুদ্রায় ইখতিয়ারউদ্দিন নিজেকে ‘আল-সুলতান বিন আল-সুলতান’ রূপে আখ্যায়িত করেন। উভয়ের জারীকৃত মুদ্রার তারিখের অখন্ড ধারাবাহিকতা, একই টাকশাল থেকে এদের মুদ্রণ, মুদ্রার ধরনে পূর্ণ সাদৃশ্য, উভয়ের গৃহীত খেতাবের মধ্যকার সাযোজ্য এবং ইখতিয়ারউদ্দিন কর্তৃক মুদ্রায় নিজেকে ‘আল-সুলতান বিন আল-সুলতান’ রূপে আখ্যায়িত করা, এসব বিবেচনায় ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহকে নিঃসন্দেহে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের পুত্ররূপে শনাক্ত করা যায়।
ইখতিয়ারউদ্দিন গাজীশাহের শাসনকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় নি। তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের পূর্বাংশে বিস্তৃত এক রাজ্যে তিন বছরকাল রাজত্ব করেন। একটি সূত্র থেকে জানা যায় যে, আরাকান রাজ মেংদি ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অধিকার করেন। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ কর্তৃক চট্টগ্রাম বিজিত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল সোনারগাঁ সালতানাতের অংশ ছিল এবং তাঁর উত্তরাধিকারী ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহের শাসনের দ্বিতীয় বর্ষে চট্টগ্রাম সোনারগাঁ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
সুলতান ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহ ৭৫৩ হিজরি (১৩৫২ খ্রি) পর্যন্ত সোনারগাঁর মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময় লক্ষণাবতীর সুলতান শামসু&&দ্দন ইলিয়াসশাহ সোনারগাঁ অধিকারের জন্য স্বয়ং অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে ইখতিয়ারউদ্দিন পরাজিত ও নিহত হন। এরূপে সোনারগাঁয়ে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের বংশের স্বাধীন সালতানাত শাসনের অবসান ঘটে। সোনারগাঁ সালতানাতের অধীন সমগ্র ভূখন্ড লক্ষণাবতী রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]