ইকোপার্ক
ইকোপার্ক (Ecopark) Ecological Park এর সংক্ষিপ্ত রূপ। প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্ট বিনোদন উদ্যান যা জীববৈচিত্র্যের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে না। বনাঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ইকোপার্ক হিসেবে চিহ্নিত করে একটি নিবিড় ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়। বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো এলাকাকে ইকোপার্ক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এক্ষেত্রে উদ্ভিদের প্রাধান্যকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে ইকোপার্কে উদ্ভিদ (flora) এবং প্রাণী (fauna) দুটোরই বিশেষ সংরক্ষণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়। এর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া ছাড়াও স্বল্পপরিসরে বিনোদন সৃষ্টির প্রয়াসও ইকোপার্কে লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২.৫২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি যা দেশের মোট আয়তনের ১৭.০৮ ভাগ। ২.৫২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমির মধ্যে বনবিভাগ নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১.৫২ মিলিয়ন হেক্টর যা দেশের মোট আয়তনের ১০.৬ ভাগ। জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন ০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর ইউএসএফ ল্যান্ড এবং অবশিষ্ট ০.২৭ মিলিয়ন হেক্টর গ্রামীণ বনাঞ্চল হিসেবে পরিগণিত। একসময় এসব বন এলাকা ছিল জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ গভীর অরণ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত সবুজ আরণ্যক পরিবেশ ছিল বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ। এসব গভীর অরণ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের বন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যেমন, জাতীয় উদ্যান, গেম রিজার্ভ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সাফারি পার্ক ও ইকোপার্ক ইত্যাদি।
ইকোপার্ক স্থাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে: হুমকির সম্মুখীন ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বিবিধ দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ, বিদ্যমান উদ্ভিদ ও প্রাণিবেচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, নিবিড় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতির গাছের বংশভান্ডার তৈরি ও উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, পরিকল্পিত ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের প্রসার, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি।
ইকোপার্ক শুধুমাত্র বন ব্যবস্থাপনারই অংশ নয়, দেশি-বিদেশি ভ্রমনেচ্ছু এবং প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন বিনোদনের পাশাপাশি ওই বিশেষ প্রতিবেশে বেড়ে ওঠা উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কেও জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক পাহাড়ি বনাঞ্চল ছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্টি করা হয়েছে ইকোপার্ক। উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদের রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে বন অধিদপ্তর নিম্নোক্ত ৯টি ইকোপার্ক স্থাপন করেছে:
সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ রিজার্ভ ফরেস্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে ১৯৯৯ সালে ৮০৮ হেক্টর জায়গা নিয়ে ইকোপার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক। ইকোপার্কের প্রধান গেট হতে ৫ কিমি ভিতরে চন্দ্রনাথ শিবমন্দির অবস্থিত। মন্দিরের ভিত থেকে ২৫২টি সিঁড়ি এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ১৬০০ সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরে উঠতে হয়। ফাল্গুনে শিব সংক্রান্তি পূজার সময় দেশ বিদেশের বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের কীর্তনে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো চন্দ্রনাথ অরণ্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ৪১০ মিটার। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সব ঝর্ণা এক হয়ে তৈরি করেছে সহস্রধারা ও সুপ্তধারার মত প্রবহমান প্রাকৃতিক ঝর্ণা।
পার্কের অভ্যন্তরে বেশ কিছু টিলা রয়েছে যা বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। পার্কের চিরসবুজ বনাঞ্চলের প্রায় ১৫৪টি প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে গর্জন, ডেউয়া, হলদু, গুটগুটিয়া, বাঁশপাতা, জারুল, পলাশ, ডুমুর, শিমুল, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নিম উল্লেখযোগ্য। বিরল প্রজাতির সাইকাস পার্কটিকে ঐতিহ্যের অংশ করেছে। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা যেমন জলপাই, শাল, কাঁঠাল, আমলকি, গর্জন, কড়ই, নিম, বকাইন, চিকরাশি, সেগুন, জাম, সিভিট, সোনালু, জীবন গাছ ইত্যাদি।
অবজারভেশন টাওয়ার, পিকনিক স্পট, অর্কিড হাউস, ক্লোনাল হাউস, ক্যাকটাস হাউস, গোলাপ বাগান ও মৌসুমী ফুলের বাগান, ডিসপ্লে ম্যাপ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষ্কর্য, বিশ্রামাগার, শাপলাসমেত পুকুর পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। টিয়া, ময়না, দোয়েল, কোকিল, কাঠবিড়ালী, বানর, হরিণ, খরগোস, বনমোরগ, শিয়াল, ঈগল, মাছরাঙ্গা, ঘুঘু, গুইসাপ, গোখরো সাপ সহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, সজারু ইত্যাদি ইকোপার্কটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
বাঁশখালী ইকোপার্ক চট্টগ্রাম শহর হতে ৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় বামেরছড়া ও ডানেরছড়া এলাকার সমন্বয়ে ২০০৩ সালে ১০০০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ইকোপার্কটি ২১০৫৮' হইতে ২২০০০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০৫৮' হইতে ৯২০১০' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি জলদি অভয়ারণ্য রেঞ্জের জলদি ব্লকে অবস্থিত।
ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা নিয়ে গঠিত বামের ছড়া ও ডানের ছড়া বাঁধ তৈরির ফলে উক্ত এলাকায় অপরূপ কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। একসময় এ এলাকা প্রাকৃতিক বন ও জীবজন্তু পরিপূর্ণ ছিল। এই এলাকা গর্জন, গুটগুটিয়া, বৈলাম, সিভিট, চম্পাফুল এবং বিবিধ লতাগুল্ম সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চলে ভরপুর ছিল। পার্ক এলাকার ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের (বাফার, ভেষজ, দীর্ঘমেয়াদী) মনোমুগ্ধকর বাগান তৈরি করা হয়েছে।
একটি দ্বিতল বন বিশ্রামাগ্রার, হিলটপ কটেজ, পিকনিক শেড, প্যানারমিক ভিউ টাওয়ার, ঝুলন্ত ব্রিজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, যাত্রী ছাউনি, পার্কিং স্থল, প্যাডেল বোট, স্পিড বোট, ফাইবার বোট, ফিসিং-এর জন্য ভাসমান প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পার্কের ভিতর হরিণ, বানর, ভাল্লুক, অজগর, হাতী, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বন মোরগ অহরহ দেখা যায়।
মাধবকুন্ড ইকোপার্ক পাথরিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত জলপ্রপাতকে ঘিরে ২০০১ সালে ৫০০ একর জায়গা জুড়ে মাধবকুন্ড ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়। মাধবকুন্ড ইকোপার্ক মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ৭০ কিমি উত্তরে এবং বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী বাজার থেকে ৮ কিমি পূর্বে অবস্থিত। ইকোপার্কের পাশ দিয়ে মাধবছড়া নামে একটি ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম পাহাড়ী ঝর্ণা ‘মাধবকুন্ড জলপ্রপাত’ ও ‘পরীকুন্ড’ এখানেই অবস্থিত। এছাড়াও আশেপাশে অনেক ছোট বড় টিলা রয়েছে। এদের মধ্যে নাগিনী টিলা উল্লেখযোগ্য। পার্কে নানা রকমের প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, হরিতকি, বহেরা, আমলকি, শিমুল, উড়িআম, ডেউয়া, বাঁশ, বেত, কড়ই, লটকন, ছাতিম, আউয়াল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পার্কের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধকরণের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, অর্জুন, তেঁতুল, জাম, জামরুল, কামরাঙ্গা, জলপাই, কদম, ছফেদা, চালতা, কড়ই, রক্তচন্দন, চাম্বল, গর্জন, সোনালু, জারুল, তমাল, গোলাপজাম, আমড়া, বকাইন, রাতা, পিতরাজ, লোহাকাঠ, শাল, কথবেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পার্কের ভিতরে ৫০০ ধাপবিশিষ্ট ফুটট্রেইল, টাওয়ার, পিকনিক স্পট, পর্যটন রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ে উঠার জন্য ফুটট্রেইল রয়েছে। ইকোপার্কে বিচিত্র রকমের পাখি ও বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে মেছোবাঘ, হরিণ, হাতি, বনমোরগ, বানর, হনুমান, গুইসাপ, শিয়াল, ময়না, টিয়া, বেজি, কাঠবিড়ালী, সজারু উল্লেখযোগ্য।
মধুটিলা ইকোপার্ক শেরপুর জেলায় নলিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জের সমশচুড়া ও পোড়াগাঁও মৌজায় ৩৮০ একর জায়গা জুড়ে ১৯৯৯ সালে মধুটিলা ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ভারত সীমানা সংলগ্ন গারো পাহাড়ের পাদদেশে দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ বনরাজিবেষ্টিত এবং পাহাড়, ঝর্ণা, টিলা ও লেক সুশোভিত এই ইকোপার্কটি পর্যটকদের নিকট আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। বনজাম, বনফুল, বহেড়া, শাল, ভাদী, হারগোজা, ফরচুন, সোনালু, কাটাজোড়া, কুম্ভী, জলপাই, জাম, তেঁতুল, পেয়ারা, আমলকি, আম, কাঁঠাল, জাম্বুরা, গর্জন, লম্বু, চিকরাশী, রাজকড়ই, বৈলাম, গামার, আগর, অর্জুন, পিতরাজ, কদম, নাগেশ্বর, চম্পাফুল, তুন, সিভিট, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ইত্যাদি গাছগাছড়া ইকোপার্কটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
এই পার্কে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং এলাকা, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, লেকে নৌবিহার, মাছ শিকার, স্টার ব্রিজ, স্টেপিং, বড়টিলা, মিনি শিশুপার্ক, বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য, সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বাগান, গোলাপ বাগান, রেস্টহাউজ, ছাতা, বেঞ্চ ইত্যাদি পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বন্যশুকর, কাঠবিড়ালী, বেজি, শিয়াল, রামকুকুর, খরগোশ, বানর, হুতুম পেঁচা, মাছরাঙ্গা, টিয়া, ময়না, ঘুঘু, বাবুই, চড়ুই, বুলবুলি, চিল, কাক, শকুন ইত্যাদি সচরাচর দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক পরিবেশ ও প্রতিবেশগত উন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর গাইড বাঁধ এলাকা সংরক্ষণের নিমিত্তে ২০০৭ সালে ১২৪ একর জায়গা নিয়ে সেতুর পশ্চিমপাড়ে বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়। ১৯৯৮ সালে সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরপরই বনবিভাগ সেতুর পারিপার্শ্বিক এলাকায় বনায়ন কাজ শুরু করে। বনবিভাগ সামাজিক বনায়ন এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মূল্যবান শোভাবর্ধনকারী গাছ ও ফুলের চারা রোপণের মাধ্যমে বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। সামাজিক বনায়ন ও ইকোপার্ক গ্রহণের ফলে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ, ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হয়। অর্জুন, আম, বকাইন, বাবলা, চিকরাশি, গামার, হিজলা, জারুল, ঝাউ, কদম, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, খয়ের, মেহগিনি, নিম, নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, শিবলিঙ্গম, পিটালী, রাজকড়ই, শিমুল, শাল, সেগুন, সোনালু, তুন, কাঞ্জলভাদি, চন্দন পাইয়া, কাঞ্জল, ইপিল, করজ, ছাতিয়ান ইত্যাদি গাছ রোপণের মাধ্যমে ইকোপার্কটি সমৃদ্ধ করা হয়েছে। এখানে বাদুড়, সজারু, বানর, খরগোশ, হরিণ, বনমোরগ, সাপ ইত্যাদি প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং পশুপাখি সচরাচর দেখা যায়।
কুয়াকাটা ইকোপার্ক পটুয়াখালী জেলায় কলাপাড়া উপজেলার গঙ্গামতি, লতাচাপলী, খাজুরা এবং বরগুনা জেলায় আমতলী উপজেলার টেংরাগিরি মৌজায় ১৩,৯৮৪ একর জায়গা নিয়ে ২০০৫ সালে কুয়াকাটা ইকোপার্ক নির্মিত হয়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, বঙ্গোপসাগর, রামনাবাদ নদী, আন্ধারমানিক নদী, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনার সন্নিকটে কুয়াকাটা ইকোপার্ক অবস্থিত। ইকোপার্কে সুন্দরী, কেওড়া, হেতাল, হিজল, করমজা, অর্জুন, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, আসামলতা, স্বর্ণলতা ইত্যাদি প্রজাতির বৃক্ষ দেখা যায়। এছাড়াও রেইনট্রি, কড়ই, মেহগিনি, বট, জাম, শিমুল, নিম, কদম, বাঁশ, নারিকেল, তাল, খেজুর, আমলকি, পেয়ারা, পাকুর, সোনালু, গাব, থুজা, গোলাপ ইত্যাদি বৃক্ষরোপণ করার ফলে কুয়াকাটা ইকোপার্কটি সমৃদ্ধ হয়েছে।
এই পার্কে কার পার্কিং এরিয়া, পায়ে হাঁটার পথ, লেক, প্যাডেল বোট শেড, কাঠের ব্রিজ, পিকনিক শেড, পিকনিক স্পট, টয়লেট, রান্নাঘর, ডিপটিউবওয়েল, গোলঘর, বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধাদি বিদ্যমান আছে। বানর, শুকর, সজারু, শিয়াল, বাদুড়, বেজি, গুইসাপ, কাঠবিড়ালী, অজগর সাপ, হলদে পাখি, বাবুই পাখি, পেঁচা, চিল, শালিক, শ্যামা, টুনটুনি, ঘুঘু, মাছরাঙ্গা, সাদা বক, ডাহুক, বুলবুলি ইত্যাদি পশুপাখি সচরাচর দেখা যায়।
টিলাগড় ইকোপার্ক সিলেট জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে ৮ কিমি দূরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংলগ্ন টিলাগড় রিজার্ভ ফরেস্টের ১১২ একর জায়গা নিয়ে ২০০৬ সালে টিলাগড় ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়। ইকোপার্কের মধ্য দিয়ে একটি ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। পার্কটি টিলাগড় রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যে ছোট বড় বেশ কয়েকটি টিলা নিয়ে অবস্থিত। টিলাগড় ইকোপার্কে নানা প্রকার প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চাপালিশ, শাল, গর্জন, চম্পাফুল, জারুল, মিনজিরি, চাউ, ঝাউ, কড়ই, জলপাই, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, কামরাঙ্গা, চালতা, আগর, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, বাজনা, নাগেশ্বর, বকুল, হিজল, ডুমুর এবং বিবিধ বেত উল্লেখযোগ্য।
টিলাগড় ইকোপার্কে একটি পাকা রাস্তা রয়েছে। ফুটট্রেইল, মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা ও শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য একটি চিলড্রেন কর্নার, বিশ্রামাগার এবং পিকনিক স্পট রয়েছে। টিলাগড় ইকোপার্ক এলাকায় রয়েছে শিয়াল, বানর, খেঁকশিয়াল, খরগোশ, সিভিট, বনমোরগ, মথুরা, হনুমান এবং ময়না, টিয়া, ঘুঘু, হরিডাস, সাত ভাই চম্পা পাখি।
জাফলং গ্রীন পার্ক সিলেট জেলায় গোয়াইনঘাট উপজেলার চৈলাখেল সংরক্ষিত বনভূমিতে জাফলং গ্রীন পার্ক অবস্থিত। এই পার্কটি ৫৩৭ একর জায়গা নিয়ে ২০০৮ সালে স্থাপিত হয়। গভীর সবুজ বন বনানী, সিলেট-তামাবিল সড়কের দুইপার্শ্বে নয়নাভিরাম স্ট্রিপ বাগান, ডাউকি নদীর স্বচ্ছ জলে বহমান পাহাড়ি ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য, সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার জাফলং। বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক লতাগুল্মে ভরপুর জাফলং গ্রীন পার্ক। একসময় প্রচুর জারুল গাছে ভরপুর ছিল এই এলাকা। বর্তমানে চাপালিশ, গর্জন, চম্পাফুল, জারুল, আম, অর্জুন, জলপাই, কাঁঠাল, চালতা, কৃষ্ণচূড়া, নাগেশ্বর, বকুল ইত্যাদি চারা লাগানো হয়েছে। দ্রুতবর্ধনশীল আকাশমনি, ম্যানজিয়াম, গামার, জাম, চাপালিশ, গর্জন, চম্পা ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ফুল ও লতাগুল্ম রোপণ করা হয়েছে। জাফলং গ্রীন পার্কে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে।
জাফলং গ্রীন পার্কে পর্যটক আকর্ষণের জন্য বিবিধ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। পার্কে বিভিন্ন প্রকার সাপ, গুইসাপ, শিয়াল, বানর, খেঁকশিয়াল, খরগোস, ময়না, টিয়া, ঘুঘু, ফিংগে ইত্যাদি সচরাচর দেখা যায়। পার্শ্ববর্তী নলজুড়ী হাওরে শীত মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পরিযায়ী পাখি পর্যটকদের চিত্তআকর্ষণ করে।
বড়শীজোড়া ইকোপার্ক মৌলভীবাজার শহরের এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৮৮৭ একর সংরক্ষিত বনভূমির সমন্বয়ে ২০০৬ সালে বড়শীজোড়া ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়। এ বনভূমিকে ১৯১৬ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ছোট ছোট টিলা, শাল বন ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই বনে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, আউয়াল, বনাক, জারুল, অর্জুন ইত্যাদি বৃক্ষরাজি দেখা যায়। ইকোপার্ক স্থাপনের পর এই বনে শাল, সেগুন, চিকরাশি, বহেরা, আমলকি, হরিতকী, লোহাকাঠ, নিম, কাঞ্চন ইত্যাদি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
ইকোপার্কে একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট ইকো কটেজ, চারটি পিকনিক স্পট, দুটি অবজারভেশন টাওয়ার, ৪টি সিকিউরিটি পোস্ট, পাঁচটি পাবলিক টয়লেট এবং বিদ্যুৎ সুবিধাদি বিদ্যমান আছে। বানর, হনুমান, মেছোবিড়াল, কাঠবিড়ালী, সজারু, বেজি, শিয়াল, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও অসংখ্য পাখি দেখা যায়। [মোঃ মোজাহারুল ইসলাম]
আরও দেখুন বোটানিক্যাল গার্ডেন।