আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দীন

ওয়াহিদউদ্দীন আহমেদ

আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দীন (১৯২৩-২০১৮) বাংলাদেশের খ্যাতিমান সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাবিদ, প্রশাসক এবং কারিগরি শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯২৩ সালের ১লা অক্টোবর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের পাঁচআনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ওয়াহিদ আহমেদ ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (বি.এস.সি) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৪৬ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দ্বিতীয়বার স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (বার্কলে) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলস থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৫১ সালে তৎকালীন আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানে বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ওয়াহিদউদ্দীন আহমেদ যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও, ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে এবং ১৯৬৮-১৯৭৪ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড-এর পরিচালক হন। তিনি ২৫শে এপ্রিল ১৯৭৫ সালে বুয়েটের উপাচার্য হিসাবে যোগদান করেন এবং ২৫শে এপ্রিল ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অধ্যাপক আহমেদ ১৯৮৪ সালে জাতীয় বেতন কমিশনের একজন পূর্ণকালীন সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০১ সালের মার্চ পর্যন্ত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাস্টিস শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। অতঃপর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ইমেরিটাস অধ্যাপক হন।

১৯৮৬-১৯৯৩ সময়কালে অধ্যাপক আহমেদ বিআইটি কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। এছাড়া তিনি অ্যাসোসিয়েশন অফ কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলের সদস্য; থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-এর একজন ট্রাস্টি; জাতীয় শিক্ষা পরিবেশ কমিটির চেয়ারম্যান; ইউনেস্কোর সাথে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর কো-অপারেশনের সদস্য; জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের সদস্য; জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্থায়ী কমিটির সদস্য; এসোসিয়েশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ইন সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া (বাংলাদেশ)-এর চেয়ারম্যান; সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের সদস্য; বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য এবং প্রশাসনিক স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরের সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

অধ্যাপক আহমেদ বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (১৯৭৫) এবং বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-এর ফেলো ছিলেন। তিনি বহু বছর ধরে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এ.আই.টি)-এর ট্রাস্টি হিসেবে বোর্ডের সম্মানিত উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনসহ অনেক সামাজিক কল্যাণমূলক সংস্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব, সভাপতি এবং ন্যায়পাল ছিলেন। জাতীয় ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর অনেক প্রকাশনা রয়েছে।

অধ্যাপক আহমেদ ১৯৬৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশ-বিদেশের অনেক সেমিনার এবং সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মধ্যে ১৯৬৫ সালের মার্চে ব্যাংককে প্রকৌশল শিক্ষা সেমিনার, ১৯৭৪ সালের জুন-জুলাইতে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের আন্তর্জাতিক ইন্টারভিসিটেশন প্রোগ্রাম সেমিনার, ১৯৭৫ সালে মার্চে সিঙ্গাপুরে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধানদের সম্মেলন, ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রধানদের সম্মেলন, ১৯৭৮ সালের ১৫ থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি, কানাডার ১২তম পঞ্চবার্ষিক কংগ্রেস, ১৯৭৯ সালের টেকনিশিয়ান এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং, বাংলাদেশ-এর উপর ইউনেস্কোর আঞ্চলিক বিজ্ঞান কাউন্সিল সেমিনার, ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে AIT-এর ২০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য ব্যাংককে আয়োজিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি সম্মেলন; ১৯৮১ সালে হংকং-এ কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিগুলোর ভাইস-চ্যান্সেলরদের সম্মেলনে যোগদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রফেসর আহমেদ ২০১৮ সালের ৩রা নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। চাঁদপুরের মতলবে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। [ইয়ারুল কবীর]