আহমদ, রফিউদ্দীন
আহমদ, রফিউদ্দীন (১৮৯০-১৯৬৫) দন্তচিকিৎসক, রাজনীতিবীদ। ডাক্তার আর আহমদ নামে সমধিক পরিচিত। রফিউদ্দীন আহমদ ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার বর্ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবাবগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং আলীগড় মোহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ থেকে আই.এসসি পাস করেন। এ সময় তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তাঁর উচ্চতর শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তিনি একটি জাহাজে চাকুরি নিয়ে প্রথমে লন্ডন এবং পরে আমেরিকা যান। আমেরিকায় তিনি আইওয়া ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে দন্তচিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কলকাতায় দন্তচিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
ডা. আর আহমদ একজন সক্রিয় সমাজকর্মী ও সংগঠক ছিলেন। তিনি ১৯২৪ সালে সরকারি সাহায্য ছাড়াই কলকাতা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালের ব্যয়ের একটি বড় অংশ আসত কলকাতায় তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি আধুনিক আইসক্রীম পার্লারের উপার্জিত আয় থেকে। তিনি ইন্ডিয়া ডেন্টাল জার্নাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং ভারতীয় ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।
রফিউদ্দীন আহমদ ছিলেন কলকাতা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত সদস্য। তিনি দু’বার কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের অল্ডারম্যানও নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সংস্থার তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯২৮-১৯৩৬ সময়কালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। পরে মুসলিম লীগ ত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ডা. আর আহমদ কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের মন্ত্রিসভার পশুপালন ও পশুচিকিৎসা দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন।
পেশাগত ও সামাজিক কর্মপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে ১৯৬৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি প্রদান করে। ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডা. আর আহমদ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর কলকাতা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে ডা. আর আহমদ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল রাখা হয়। [শামসুজ্জামান]