আহমদ, বিচারপতি আমিন
আহমদ, বিচারপতি আমিন (১৮৯৯-১৯৯১) আইনবিদ ও প্রধান বিচারপতি। আমিন আহমদ ১৮৯৯ সালের ১ অক্টোবর ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার আহমদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল আজিজ ছিলেন একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। আমিন আহমদ ১৯১৩ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। তিনি কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বি.এ সম্মান এবং একই বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ (সম্মান) এবং এলএল.বি (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি লন্ডনের গ্রে’স ইন-এ ১৯২৪ সালে ব্যারিস্টার-এট-ল সম্পন্ন করেন। দেশে ফিরে তিনি কোলকাতা হাইকোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত হন। আইনপেশার পাশাপাশি তিনি কিছু সময়ের জন্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ল কলেজে খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি স্মল কজেস কোর্টের অস্থায়ী বিচারক পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৩২ সালের দিকে ওই কোর্টে স্থায়ী বিচারক নিযুক্ত হন। পদাধিকার বলে তিনি কোলকাতার প্রেমিজেস এন্ড হোটেল্স-এর চিফ রেন্ট অ্যান্ড রেট কন্ট্রোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত হন। ভারত বিভাগের পর তিনি পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকা হাইকোর্টে বিচারক পদে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে আমিন আহমদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগলাভ করেন এবং ১৯৫৯ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
কোলকাতায় আইনপেশায় নিয়োজিত থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি, বেঙ্গল ভেটারেনারি কলেজ কমিটির সভাপতি, এবং জুভেনাইল অফেন্ডার্স রিফরমেটরি স্কুল কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯২৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কোলকাতাস্থ নোয়াখালী মুসলিম এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে পরপর তিন মেয়াদে ঢাকা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণের পর তিনি কিছু সময়ের জন্য পাকিস্তানের প্রেস কোর্ট অব অনার-এর চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তান শিপিং কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কামিনী কুমার ল লেকচার প্রদান করেন। তাঁর এই বক্তৃতা Judicial Review of Administrative Action in Pakistan শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তিনি A Peep into the Past শিরোনামে তাঁর আত্মজীবনীও রচনা করেন।
শিক্ষার উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি তাঁর সকল সম্পত্তি দান করে ১৯৮১ সালে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন এবং নিজে এই ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি নিযুক্ত হন। এই ট্রাস্ট তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার জন্য জাস্টিস আমিন আহমদ চ্যারিটি ক্লিনিক নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে।
বিচারপতি আমিন আহমদের সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘মেম্বার অব দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ উপাধি প্রদান করে এবং পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘হেলাল-ই-পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [কাজী এবাদুল হক]