আহমদ, একরামুদ্দীন
আহমদ, একরামুদ্দীন (১৮৭২-১৯৪০) কথাসাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বায়না থানার কুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাহতাবউদ্দীন আহমদ। একরামুদ্দীন বর্ধমান হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯২) এবং বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে এফএ (১৮৯৪) পাস করার পর হুগলি কলেজে কিছুদিন বিএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু অধ্যয়ন অসমাপ্ত রেখেই তিনি ১৮৯৬ সালে সরকারি জরিপ বিভাগে কানুনগো পদে যোগদান করেন। পরে সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হয়ে ১৯২৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং বীরভূমের কয়থা গ্রামে স্থায়িভাবে বসবাস করেন।
একরামুদ্দীন ছিলেন একজন কর্তব্যপরায়ণ ও মানবতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি। ১৯১৮ সালে একবার বীরভূমের আদিবাসী সাঁওতালদের ওপর স্থানীয় জমিদার ও মহাজনদের শোষণ-নির্যাতন দেখে তিনি তা রিপোর্ট আকারে সরকারের দৃষ্টিগোচর করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ কাজটি করেন বলে সরকারের সহায়তায় সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাহিত্য-সমালোচনা দ্বারা একরামুদ্দীনের সাহিত্যিক জীবনের শুরু। তাঁর চারটি বিখ্যাত সমালোচনাগ্রন্থ হলো: রবীন্দ্র প্রতিভা (১৯১৪), মেঘনাদবধ কাব্য ও বৃত্রসংহার, কৃষ্ণকান্তের উইলে বঙ্কিমচন্দ্র (১৯৩০) এবং চন্দ্রশেখর ও বঙ্কিমচন্দ্র (১৯৩২)। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা পাঁচটি: কাচ ও মণি (১৯১৯), মহিমাময়ী নারী (১৯২০), নতুন মা (১৯২৬), মতি মঞ্জিল (১৯২৬) ও জীবন পণ (১৯২৭)। তিনি অনধিকার প্রবেশ (১৩২৭) নামে একটি প্রহসনও রচনা করেন। এ ছাড়া তিনি কিছু ব্যঙ্গকথা, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর রচিত ‘ভিক্ষুক’ নামক একটি গল্প এক সময় পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।
একরামুদ্দীন সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তাঁর সমালোচনাগ্রন্থ এবং উপন্যাসগুলি প্রথমদিকে এসব পত্র-পত্রিকায়ই প্রকাশিত হতো। কথাসাহিত্যে রসপূর্ণ বাস্তবচিত্র অঙ্কনে দক্ষতার জন্য তখনকার দিনে তাঁকে ‘মুসলিম প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়’ বলা হতো। তিনি ১৯৪০ সালের ২০ নভেম্বর কয়থা গ্রাম, বীরভূমে মারা যান। [ওয়াকিল আহমদ]