আশুগঞ্জ উপজেলা
আশুগঞ্জ উপজেলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা) আয়তন: ৬৭.৫৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫১´ থেকে ২৪°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৩´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সরাইল উপজেলা, দক্ষিণে নবীনগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভৈরব ও রায়পুরা উপজেলা। আশুগঞ্জকে বলা হয় মেঘনা কন্যা। এটি দেশের একটি উল্লেখযোগ্য বন্দর ও শিল্প নগরী।
জনসংখ্যা ১৮০৬৫৪; পুরুষ ৮৮৩৪০, মহিলা ৯২৩১৪। মুসলমান ১৭২২৪৯, হিন্দু ৮৩৩৬, বৌদ্ধ ১২, খ্রিস্টান ১৮ এবং অন্যান্য ৩৯।
জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা।
প্রশাসন আশুগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে এবং ২০০০ সালের ২৫ জুলাই থানাকে উপজেলায় রুপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৮ | ৩০ | ৪১ | ৩৬৭৪৯ | ১৪৩৯০৫ | ২৬৭৩ | ৫৪.৬ | ৫০.৩ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১৫.৩৫ | ৪ | ৩৬৭৪৯ | ২৩৯৪ | ৫৪.৬ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আড়াইসিধা ১২ | ১৪৬৯ | ৯৯৮৭ | ১০৭৪০ | ৫৪.২ |
আশুগঞ্জ ১৪ | ২৭৯৯ | ১৭৪৩৫ | ১৭৬৭৫ | ৪৯.৪ |
চর চারতলা ২৬ | ১৫৭২ | ১৩১৯২ | ১২৫৯৭ | ৫৫.০ |
তারুয়া | ১৬০৩ | ৪০৪১ | ৪৭০৮ | ৫৫.০ |
দুর্গাপুর ৩৮ | ৩০৩৮ | ১৭১০৮ | ১৭৬৪০ | ৫০.৫ |
পশ্চিম তালশহর ৭৪ | ২৮১৩ | ১১৩৫৪ | ১১৯৫৭ | ৪৭.১ |
লালপুর ৪২ | ১৮১৮ | ৮৯৭৩ | ৯৭০২ | ৫০.৪ |
শরীফপুর ৭৭ | ১৫৯০ | ৬২৫০ | ৭২৯৫ | ৫১.৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আশুগঞ্জ তহশিল অফিস (১৯০৪ সাল)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, শাহজাহান, ল্যান্স নায়েক আঃ হাই, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম এবং সিপাহী আব্দুর রহমান শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী সন্দেহভাজন লোকদের ধরে এনে সাইলো বধ্যভূমিতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত। পাকবাহিনী ৯ ডিসেম্বর সকালে আশুগঞ্জ-ভৈরব রেলসেতুর আশুগঞ্জের দিকের একাংশ ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংস করার পর পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ছেড়ে চলে গেছে এমন ধারণা থেকেই যৌথবাহিনী আশুগঞ্জ দখল করতে অগ্রসর হয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ৫০ গজের মধ্যে আসামাত্র পাকবাহিনী অগ্রসরমান ১৮ রাজপুত বাহিনীর উপর প্রচন্ড হামলা চালায়। হামলায় মিত্রবাহিনীর ৪ জন সেনাঅফিসারসহ প্রায় ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী আশুগঞ্জ ত্যাগ করে। উপজেলার লালপুর বাজারে ১টি গণকবর এবং আশুগঞ্জ সাইলো এলাকায় ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন আশুগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২০৫, মন্দির ১১, মাযার ৬।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.২%, পুরুষ ৫২.০%, মহিলা ৫০.৪%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৬, মাদ্রাসা ৪, এতিমখানা ৪১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফিরোজ মিয়া ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু কারিগরি মহাবিদ্যালয়, আববাস উদ্দিন খান মহাবিদ্যালয়, জিয়া সার কারখানা স্কুল ও কলেজ, আশুগঞ্জ এ এ আই হাইস্কুল, হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়, লালপুর এস কে দাস চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, তারুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ ফরাছত আলী উচ্চ বিদ্যালয়, আড়াইসিধা কে বি উচ্চ বিদ্যালয়, রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তালশহর কারিমিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, আড়াইসিধা সিনিয়র মাদ্রাসা, দারুল হুদা তাহেরিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ৬, থিয়েটার ২, প্রেসক্লাব ১।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক মেঘনা চিত্র, আশুগঞ্জ সংবাদ, একুশে আলো, কলমের কথা।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৭.৮৮%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৫৬%, শিল্প ১.৭৯%, ব্যবসা ২৩.৫৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৪%, চাকরি ১৪.১০%, নির্মাণ ২.০২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৫৭% এবং অন্যান্য ১৮.২৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.০৪%, ভূমিহীন ৪৬.৯৬%। শহরে ৪৯.৫৩% এবং গ্রামে ৫৩.৯৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, আলু, মরিচ, শাকসব্জি।
বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কাউন, তিসি, বাদাম।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২ কিমি, কাচাঁ রাস্তা ১৬৩ কিমি; রেলপথ ৭ কিমি, নৌপথ ১৪ কিমি, রেলস্টেশন ২।
শিল্প ও কলকারখানা আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জিয়া সার কারখানা, আশুগঞ্জ সবুজ প্রকল্প।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৪। আশুগঞ্জ হাট, চর চারতলা হাট, তালশহর হাট, তারুয়া হাট ও লালপুর হাট এবং বৈশাখী মেলা (আশুগঞ্জ), তারুয়ার মেলা, তালশহরের মেলা ও আড়াইসিধার মেলা উল্লেখযোগ্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯১.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৫%, ট্যাপ ৮.০% এবং অন্যান্য ১.৫%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯০.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭.৮% পরিবার পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪।
এনজিও আশা, প্রশিকা, পাঞ্জেরী, জাগরণী সংঘ্র। [মুহিবুর রহিম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আশুগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।