আলীনগর চুক্তি
আলীনগর চুক্তি ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলার নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা ও ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। নওয়াব কলকাতার ইংরেজ বসতি অধিকার করেন (১৮-২০ জুন ১৭৫৬) এবং ইংরেজরা তাঁর প্রকৃত ক্ষতিসমূহের প্রতিবিধান করতে অস্বীকার করলে তিনি তাদের কলকাতা শহর থেকে বিতাড়িত করেন। তিনি এ শহরের নতুন নামকরণ করেন আলীনগর। ইংরেজরা সাহায্যের আবেদন জানালে মাদ্রাজ থেকে ক্লাইভ এবং ওয়াটসন-এর অধীনে অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনী উপনীত হয় এবং কলকাতা পুনর্দখল করে। নওয়াব কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু কলকাতার কাছে খুব ভোরে ইংরেজরা আকস্মিক আক্রমণ করলে নওয়াব পশ্চাদপসরণ করেন। ইংরেজরা তাঁকে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য প্রস্তাব দেয়। নওয়াব তাঁর প্রধান উপদেষ্টাবৃন্দ ও মন্ত্রীদের পরামর্শক্রমে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির প্রধান ধারাগুলি হলো ক. নওয়াব ১৭১৭ সালের ফররুখ সিয়ারের ফরমান এ প্রদত্ত সকল সুবিধা ইংরেজদেরকে দেবেন, খ. কোম্পানির দস্তক এর আওতায় বাংলার ভেতর দিয়ে যেসব পণ্যদ্রব্য অতিক্রম করবে সেগুলির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নিতে হবে, গ. নওয়াব বিনা বাধায় কলকাতার ইংরেজ দুর্গটিকে সুরক্ষিত করার অনুমতি দেবেন এবং ঘ. কলকাতায় ইংরেজগণ স্বাধীনভাবে মুদ্রাঙ্কন করতে পারবে।
এ চুক্তির শর্তাবলি বাংলায় ইংরেজদের অনুকূলে ছিল এবং সেখানে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করেছিল। ১৭৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ক্লাইভ সিলেক্ট কমিটির কাছে লিখেন যে, এ চুক্তির শর্তাবলি কোম্পানির জন্য ‘একই সঙ্গে সম্মানজনক ও সুবিধাজনক’। সিরাজউদ্দৌলার জন্য এ চুক্তি কিছুটা অপমানকর হলেও তিনি এটি মেনে নেন। তবে তিনি ইংরেজদের সামরিক বাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে একাজ করেন নি। তিনি বরং আহমদ শাহ আবদালীর নেতৃত্বে আসন্ন আফগান আক্রমণের আশঙ্কায় আলীনগরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এ সময় তিনি খবর পেয়েছিলেন যে, আহমদ শাহ আবদালী দিল্লি ধবংস করার পর (১৭৫৬) বাংলার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। পরবর্তী ঘটনাবলি দ্বারা তাঁর ধারণা ভুল প্রমাণিত হলেও সম্ভবত তিনি মনে করেছিলেন যে, ওই মুহূর্তে ইংরেজরা নয় বরং আফগানরাই ছিল তাঁর জন্য অধিকতর বিপজ্জনক। এ কারণে তিনি রাজা রামনারায়ণের নেতৃত্বে তাঁর সামরিকবাহিনীর সেরা অংশটি আফগান বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য পাটনায় প্রেরণ করেছিলেন। যদিও এ চুক্তি বেশি দিন স্থায়িত্বলাভ করে নি। এর প্রধান কারণ, ইংরেজরা এর শর্তাবলি মেনে চলে নি। ফলে চুক্তিটি ভেঙ্গে যায় এবং ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। [সুশীল চৌধুরী]
গ্রন্থপঞ্জি KK Datta, Siraj-ud-daulah, Calcutta, 1971; S Chaudhury, From Prosperity to Decline – Eighteenth Century Bengal, New Delhi, 1995; S Chaudhury, The Prelude to Empire: Plassey Revolution of 1757, New Delhi, 2000।