আলসার
আলসার (Ulcer) পৌষ্টিকনালির মিউকাস আবরণীতে ও ত্বকের উপরে সৃষ্ট ঘা। সাধারণ মানুষ আলসার বলতে পাকস্থলীর আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার (gastric ulcer) ও ক্ষুদ্রান্ত্রের ডুওডেনাম অংশের আলসার (duodenal ulcer) বুঝে থাকে যার সর্বজনীন পরিচিতি পেপটিক আলসার (peptic ulcer) হিসেবে। এতকাল পাকস্থলীর হাইড্রোকোলরিক এসিড ও পেপসিনকেই পেপটিক আলসার এর জন্য দায়ী মনে করা হলেও এটি এখন নিশ্চিত যে Helicobacter pylori নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণই ডুওডেনাল আলসারের অন্যতম কারণ। পাকস্থলীর উচ্চমাত্রার এসিড-মাধ্যম এ অণুজীবের সংক্রমণের সহায়ক। আর এজন্যেই এখন ডুওডেনাল আলসারের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ও হাইড্রোক্লরিক এসিড তৈরী প্রতিবন্ধক প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (proton pump inhibitor – PPI ) ঔষধ ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ব্যথা নিরাময় ও ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের কারণে পাকস্থলী ও ডুওডেনামে আলসার হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী পাকস্থলীর আলসার ক্যান্সারে রূপান্তরের সম্ভাবনা থাকে। রক্তবমি (haematemesis), কাল পায়খানা (melaena), ডুওডেনাম ছোট (stenosis) ও ফুটো (perforation) হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হচ্চে ডুওডেনাল আলসারের বিপদজনক জটিলতা (complication) যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আলসারেটিভ কলাইটিস (ulcerative colitis) নামক রোগে বৃহদান্ত্রে আলসার দেখা যায়। চাপের কারণে দীর্ঘদিন বিছানায় আবদ্ধ রোগীদের পিঠের ত্বকে সৃষ্ট ঘাকে সাধারনভাবে bed sore আর চিক্যিসাবিদ্যায় decubitus ulcer নামে পরিচিত। কুষ্ঠরোগ ও অন্যান্য স্নায়ু বৈকল্যে trophic ulcer আর রক্তে উচ্চ শর্করা, রক্ত সরবরাহে ঘাটতি ও প্রান্তিক স্নায়ু বৈকল্যের (peripheral neuropathy) শিকার ডায়াবেটিক রোগিদের ঘা (diabetic ulcer) এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। জিহ্বা ও মুখ গহবরের মিউকাস আবরণীতে এফ্থাস্ আলসার (Aphthous ulcer) নামক তীব্রব্যথা সৃষ্টিকারি ঘা দেখা যায়। এর কারণ জানা না থাকলেও এক ধরণের ভাইরাসকেই দায়ী করা হয়। এফ্থাস্ আলসার সপতাহ দুয়েক এর মধ্যে এমনিতেই সেরে যায় তবে এটি বারংবার হতে দেখা যায়। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]
এন্টাসিড (Antacid) পাকস্থলীর অম্ল বিনষ্টকারী ঔষধ। পেপটিক আলসার ও পাকস্থলীর অম্লাধিক্যে খাবার সোডার (সোডিয়াম বাই কার্বনেট) প্রচলন শতাব্দীপ্রাচীন হলেও, পার্শবপ্রতিক্রিয়ার কারণে তা জনপ্রিয় হয়নি। বিগত শতাব্দির প্রথমার্ধ হতে ম্যাগনেসিয়াম ও এলুমিনিায়াম এর যৌগ হতে প্রস্তুত এন্টাসিড জনপ্রিয় হতে থাকে। বাংলাদেশে আশির দশকে পাকস্থলীর H2 receptor ব্লককারী এবং পরবর্তীতে হাইড্রোক্লরিক এসিড তৈরী প্রতিবন্ধক প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (proton pump inhibitor – PPI ) ঔষধ সমূহের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। পেপটিক আলসার ও এর জটিলতা চিকিৎসায় প্রচুর আস্ত্রোপচার প্রয়োজন হত। H2 receptor ও PPI ঔষধ সমূহ এবং Helicobacter pylori ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী অ্যান্টিবায়োটিক পেপটিক আলসার ও এর জটিলতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় যুগান্তকারী সফল এনেছে আর আস্ত্রোপচার এর প্রয়োজনিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে।
ভাজা, পোড়া ও অতিরিক্ত ঝাল মসলা যুক্ত খাবার, পানসুপারী ও ধূমপান প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে অনেকেই মাঝে মধ্যে এমনকি প্রায়শ বুকজ্বালা, ঢেকুর, অম্লাধিক্য ইত্যাদিতে ভোগেন এবং নিজেরাই ফার্মেসী থেকে এন্টাসিড কিনে কষ্ট নিবারণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় ৩০ লক্ষ পেপটিক আলসারের রোগী রয়েছে। আর চিকিৎসকরাও ব্যাথা নিরাময়ের ঔষধ এর সহিত পাকস্থলী ও ডুওডেনামের মিউকাস আবরণীতে সুরক্ষায় এধরণের ঔষধ গ্রহনের উপদেশ দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে শুধু এন্টাসিড জাতীয় ঔষধেই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয় এবং এন্টাসিড চাহিদা এতই ব্যাপক যে প্রায় সব ঔষধ প্রস্ত্তূতকারী প্রতিষ্ঠান এটি উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে। [এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরী]