আলম মুসাববীর
আলম মুসাববীর ঊনিশ শতকের ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী যিনি তাঁর শিষ্যদের সমভিব্যবহারে ঢাকার প্রসিদ্ধ ঈদ ও মুহররম মিছিল এর ওপর চিত্ররাজি অংকন করেন। এগুলি ঢাকার সবচেয়ে পুরানো জলরং এর ছবি। বর্তমানে এ ছবিগুলি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আলম মুসাববীরের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। শুধু এটুকু জানা যায় যে, তিনি নওয়াব নুসরত জং-এর সমসাময়িক ছিলেন। ধারণা করা হয় যে, নওয়াব নুসরত শাহ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি মিছিলের ওপর চিত্রসমূহ অঙ্কন করেছিলেন। তাঁর নামের শেষে ব্যবহূত ‘মুসাববীর’ -এর অর্থ শিল্পী। বিশেষণটি সম্ভবত তিনি পেয়েছিলেন তাঁর পৃষ্টপোষকের কাছ থেকেই, যিনি শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।
আলম মুসাববীর-এর ঈদ ও মুহররম মিছিলের ওপর অঙ্কিত চিত্রকর্মগুলি তার সময়ের ঢাকার নওয়াব ও তাঁর অনুচর, কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সাধারণ জনগণ ও দুঃস্থদের জীবন-পদ্ধতি তুলে ধরেছে। এ চিত্রকর্মগুলিতে পুরনো ঢাকার নিদর্শনাদি-যেমন, নায়েব নাজিম-এর ঢাকাস্থ নিমতলী প্যালেস ও তোরণ-এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। নিমতলীর তোরণটি বর্তমানে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি এর প্রাঙ্গণে অবস্থিত।
আলম মুসাববীর ও তাঁর শিষ্যরা হাতে-তৈরি কাগজের উপর অঙ্কনের কাজ করেন। এ কাগজগুলি আকারে (২২ ইঞ্চি × ২৮ ইঞ্চি) অন্যান্য মুগল চিত্র অপেক্ষা কিছুটা বড় ছিল। তাঁর অংকন-পদ্ধতিতে মুগল-চিত্র অঙ্কন রীতি ও কোম্পানির (ব্রিটিশ) চিত্র অংকন-রীতির সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। তিনি তাঁর চিত্রকর্মে দেশিয় রংবিন্যাস প্রয়োগ করেছেন এবং সেখানে ইউরোপীয় চিত্রানুপাতের কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আলম মুসাববীরের রঙিন চিত্রকর্মগুলি ঢাকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল। [নাজমা খান মজলিস]