আর্থ্রাইটিস

আর্থ্রাইটিস (Arthritis)  গিরার প্রদাহ। সন্ধিবাত নামেও পরিচিত এ রোগ নানা কারণে হতে পারে। প্রদাহের কারণভেদে এ রোগটিকে সাধারণত ওসটিওআর্থ্রাইটিস (osteoarthritis), রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (rheumatoid arthritis), স্পন্ডাইলার আর্থ্রোপ্যাথিস (spondylar arthropathies), গেটেবাত (gout), সংক্রমণজাত আর্থ্রাইটিস (infective arthritis), জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস (juvenile arthritis) ইত্যাদি দলে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। পেশীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট রোগও আর্থ্রাইটিস-এর উৎপত্তি ঘটাতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলিতে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এর প্রাদুর্ভাব বেশি কিন্তু  বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস-এর মধ্যে বাংলাদেশে ওসটিওআর্থ্রাইটিসই বেশি ঘটতে দেখা যায়। এটি বয়স্ক লোকের রোগ বলে বিবেচিত এবং পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই এ রোগে ভোগেন। প্রাথমিকভাবে এ রোগ সাধারণত একটি অথবা দুটি স্থানের সন্ধিকে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য অস্থিসন্ধিতেও ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের উৎপত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে বয়স প্রধানত বিবেচ্য এবং বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে এ রোগটি অধিক প্রচলিত। এ ছাড়া ভারী ওজনের লোকেরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। আর্থ্রাইটিস-এর প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা, প্রাতঃকালীন জড়তা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা ইত্যাদি। যেসব সন্ধি সাধারণত আক্রান্ত হয় সেগুলি হলো হাঁটু, হাত, কোমর, এবং মেরুদন্ডের কটিদেশ ও ঘাড় (spondylosis)| এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমেও এ রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি এ রোগের উপশমে ব্যবহার করা যায়, যেমন ব্যথারোধক ঔষধ, ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি এবং কিছু মারাত্মক অবস্থায় শল্য চিকিৎসা।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অধিকাংশ ক্ষেত্রে কষ্টদায়ক। সাধারণত আঙুলের সন্ধি, কবজি এবং পায়ের সন্ধিতে এ রোগের সৃষ্টি হয়। তবে দেহের যে কোনো সন্ধিই এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সন্ধির ক্রমবর্ধনশীলতায় জটিলতা সৃষ্টি করে এবং মারাত্মক শারীরিক অক্ষমতার কারণ ঘটায়। রোগটি তুলনামূলকভাবে অল্প বয়স্ক মানুষের দেহে বেশি দেখা যায়; তবে যে কোনো বয়সী মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সংঘটন মাত্রা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায় চার গুণ বেশি। এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে আঙুল ও পায়ের পাতার ক্ষুদ্র জোড়াগুলিতে ব্যথা এবং জড়তা। এর ফলে ক্রমে ক্রমে সন্ধিস্থানগুলি দীর্ঘস্থায়ী অবসন্নতার শিকার হয়। এ ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যথা, জড়তা, ক্লান্তি, অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ এবং সংশ্লিষ্ট সন্ধির নড়াচড়া করার অক্ষমতা। ডায়াবেটিক ও বয়স্ক লোকদের মধ্যে সংক্রমণজাত আর্থ্রাইটিস বেশী। রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক (uric acid) এসিড গেটেবাতের (gout) জন্যে  দায়ী।  [এম সিরাজুল ইসলাম]