আর্থ্রস্কোপিক সার্জারি
আর্থ্রস্কোপিক সার্জারি (Arthroscopic Surgery) আর্থ্রস্কোপ নামক অপটিক্যাল যন্ত্র, ক্যামেরা, মনিটর, ভিডিও ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে গিরার (joint) অভ্যন্তর পর্যবেক্ষন, রোগনির্ণয়, প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসা সম্পাদন এবং পদ্ধতিটি ধারণের (record) আধুনিক কৌশল। পুরো গিরা খোলে যতটুকু দেখা যায়, পেন্সিল মাপের আর্থ্রস্কোপ লম্বা ছেদন বা কর্তন ব্যাতিরিকে সে সুযোগ সৃষ্টি করে আর যন্ত্রাদি ছিদ্রের মাধ্যমে গিরায় প্রবিষ্ট হয়ে থাকে বিধায় কম ব্যথা, দ্রুত আরোগ্যলাভ, হাসপাতালে ভর্তির অপ্রয়োজনীয়তা বা স্বল্প সময় অবস্থান, শীঘ্রই কাজে ফেরার সুযোগ ইত্যাদি কারণে এপদ্ধতি সারাবিশ্বে অর্থোপেডিক সার্জন ও রোগীদের নিকট সমভাবে সমাদৃত। ষ্ট্যান্ডার্ড মাপের পাশাপাশি মিনি আকৃতির স্কোপ চালুর কারণে ছোট বড় প্রায় সব জয়েণ্টেই এখন এটি সম্ভব হচ্ছে, তবে হাটুই আর্থ্রস্কোপির জন্যে আদর্শ জয়েন্ট এবং হাটুতেই এর ব্যবহার সর্বাদিক। এখানে উল্লেখযোগ্য যে আর্থ্রোস্কোপিক পদ্ধতি হতে বিকশিত ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সে চালু হয়। পরবর্তীতে মেরুদন্ডের Slipped Disc, হাতের Carpal Tunnel Decompression ইত্যাদি চিকিৎসায়ও এপদ্ধতির ব্যাবহার সম্প্রসারিত হয়।
কেন্জী তাগাজী ১৯১৮ সালে সর্বপ্রথম জাপানের টোকিওতে একটি শবদেহের হাটুর অভ্যন্তর আর্থ্রস্কোপ দ্বারা নিরীক্ষন করেন। বালব হতে সৃষ্ট তাপ এটির প্রসারের অন্তরায় ছিল। বিগত শতাব্দীর সত্তরদশকে আর্থ্রস্কোপে অপটিক্যাল ফ্যাইবার পদ্ধতির সংযুক্তি ঘটে। বাহির অংশে চোখ লাগিয়ে দেখার এধরণের একটি স্কোপ ১৯৮২ সনে ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক বিলেত হতে ফেরার সময় সাথে আনেন। আশিরদশকে ক্যামেরা, মনিটর, ভিডিও, শেভার (shaver) ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য অত্যাধুনিক জটিল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সংযুক্তি ও সমন্বয় ঘটে। ১৯৯৪ সনে বিদেশে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ডাঃ এম.কে.আই কাইয়ুম চৌধুরীর যোগদানের মাধ্যমে বারডেম হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগ চালু হলে জার্মানী হতে ষ্ট্যান্ডার্ড ও মিনি স্কোপসহ আর্থ্রস্কোপিক সার্জারির আধুনিক পুরো সেট সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে বারডেম হাসপাতালই সর্বপ্রথম এপদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসা চালু করে। পরবর্তীতে অন্যান্য হাসপাতালও এ প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নেয়। যন্ত্রপাতির উচ্চম~ূল্যর কারণে অধিক খরচ, পারদর্শিতা অর্জনে সময়সাপেক্ষতা, সর্বোপরি পরবর্তীকালে হাটুর রোগ নিরুপনে তুলনামূলক স্বল্প খরচে MRI পরীক্ষার সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে আর্থ্রস্কোপি আশাতীত সাফল্য অর্জন করেনি তবে হাটুর শল্যচিকিৎসায় এর সুবিধা ও উপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে। [শামসুদ্দীন আহমেদ]