আমিনউদ্দিন, মুহাম্মদ
আমিনউদ্দিন, মুহাম্মদ (১৯২১-১৯৭১) আইনজীবী, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। জন্ম ১৯২১ সালে নাটোরের লালপুর থানার গৌরীপুর গ্রামে। পিতা হারুন অর-রশিদ মোল্লা। মুহাম্মদ আমিনউদ্দিন ১৯৩৮ সালে জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আই.এ এবং ১৯৪২ সালে বি.এ পাস করেন। একই বছর তিনি কলকাতায় বেঙ্গল সিভিল সাপ্লাই বিভাগের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি চাকরি ছেড়ে ঢাকায় আইন ব্যবসা শুরু করেন।
মুহাম্মদ আমিনউদ্দিন ১৯৫২ সালে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন এবং সেখানেই পরবর্তী কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। আইয়ুব শাসনামলে তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি পাবনা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মুহাম্মদ আমিনউদ্দিন ১৯৭১ সালের মার্চে পাবনায় অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন পাবনা জেলা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক। ২৫ মার্চের পরে তিনি পাবনায় পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। কিন্তু পাকবাহিনী ২৬ মার্চ রাতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২৯ মার্চ তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবেও আমিনউদ্দিনের অবদান রয়েছে। তিনি ছিলেন পাবনা ল’ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সেখানে অবৈতনিক প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া পাবনা মহিলা কলেজ এবং শহীদ বুলবুল কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর অগ্রনী ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৬১ সালে পাবনায় প্রথম নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাধীনতার পর মুহাম্মদ আমিনউদ্দিনের স্মরণে পাবনা ল’ কলেজের নামকরণ হয় শহীদ আমিনউদ্দিন ল’ কলেজ। ১৯৯৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ শহীদ মুহাম্মদ আমিনউদ্দিনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার ২০০১ সালে তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত করে। [আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]