আমহার্স্ট, লর্ড
আমহার্স্ট, লর্ড (১৭৭৩-১৮৫৭) ১৮২৩ থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল। জন্ম ১৭৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে। ইতিপূর্বেই চীনে তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতার (১৮১৬) পরিচয় দেয়ায় পরিচালকমন্ডলী তাঁর নিয়োগকে অনুমোদন করেন। একজন শান্তিকামী ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে তখন শ্রদ্ধার চোখে দেখা হত। ১৮২৩ সালের ১ আগস্ট তিনি কলকাতা পৌঁছেন।
দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্বে তাঁকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে, ভারতে যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই এবং শান্তি বিরাজমান থাকবে। কিন্তু শীঘ্রই পূর্ব বাংলার সীমান্ত গোলযোগ শুরু হয় যা কার্যত তাঁর শাসনামলে অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে ওঠে। বার্মার রাজা আরাকান ও আসাম জয় করেন এবং বাংলার পূর্বাংশের জন্য দাবি উত্থাপন করেন। বস্ত্তত, তিনি চট্টগ্রামের নিকটে শাহ্পরি দ্বীপে সৈন্য পরিচালনা করেন এবং সেখান থেকে ইংরেজ সৈন্যবাহিনীকে বিতাড়িত করেন। আমহার্স্টকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হয়েছিল এবং বার্মার আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে তিনি সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। বার্মার সেনাদল চরমভাবে পর্যুদস্ত হয় এবং রাজা শান্তির জন্য আবেদন করেন। ইয়ানডাবু চুক্তি (১৮২৬) দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে আসাম, আরাকান ও টেনাসেরিম ইংরেজদের নিকট প্রত্যার্পণকরা হয়।
যুদ্ধ চলাকালে দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়। প্রথমত, সামরিক অভিযানের সময় ১৮২৪ সালের অক্টোবরে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহিরা ব্যারাকপুরে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। হিন্দু সিপাহিরা সমুদ্র পারাপারে আপত্তি জানায়, কারণ এটা তাদের জাতকে কলুষিত করবে। কিন্তু তাদেরকে নির্মমভাবে দমন করা হয় এবং রেজিমেন্টটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, বার্মার সঙ্গে যুদ্ধ ভারতের মূল ভূখন্ডে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং এর বহি:প্রকাশ ঘটে ভরতপুরে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধে (১৮২৬)। যখন ভরতপুরের জাট রাজা মারা যান তখন দুর্জন সাল নামে রাজসিংহাসনের একজন দাবিদার ক্ষমতা দখল করেন এবং নিজেকে প্রকাশ্যে রাজা ঘোষণা করেন। তিনি ব্রিটিশদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন। এর কারনে আমহার্স্ট সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। আক্রমণ পরিচালনা করে ভরতপুর দুর্গ দখল করা হয় এবং পরলোকগত রাজার এক পুত্রকে, যিনি অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণ করেন, সিংহাসনে বসানো হয়।
তাঁর সময়ে ১৮২৪ সালে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনিই প্রথম গভর্নর জেনারেল যিনি ১৮২৭ সালের গ্রীষ্মকাল সিমলায় যাপন করেন। ১৮২৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং তাঁকে আর্য মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। আমহার্স্ট ১৮৫৭ সালের ১৩ মার্চ মারা যান। [কে.এম মোহসীন]