আবকারি
আবকারি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ কড়া পানি। প্রাচীনকালেও বাংলায় সুরা জনপ্রিয় ছিল। এসব পানীয়ের বেশ চাহিদা ছিল। তাই এগুলি সবসময়ই ছিল সরকারের রাজস্ব আয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সুরার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদক ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে কর আদায়ের জন্য মুগল সরকারের একটি আবকারি দফতর ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এ দফতরের নামকরণ হয় আবকারি বিভাগ। তারপর থেকে এর নাম হয় কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বিভাগ। কিন্তু স্পিরিট ও আফিমের ওপর আরোপিত শুল্ক বা কর অর্থে আবকারি শব্দটির ব্যবহার এখনও বিদ্যমান।
১৭৭৩ সাল থেকে মদ উৎপাদন ও বিপণন ছিল রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার। কিছুটা রাজস্বের জন্য আর কিছুটা সাংস্কৃতিক কারণে ঔপনিবেশিক সরকার সচেতনভাবে আবকারিকে উৎসাহিত করার নীতি গ্রহণ করে। ফলে মদ সেবন এত বেড়ে যায় যে, উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রতিটি গ্রাম্য বাজারে একটি করে মদভাটি ছিল। ধর্মীয় ও সামাজিক কারনেই হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সংস্কারপন্থিরা আবকারি সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করার দাবি জানায়। এ ধরনের জনদাবির মুখে সরকার আবকারির উৎপাদন ও আমদানির ওপর কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণের নীতি গ্রহণ করে এবং ক্রমশ উচ্চহারে কর আরোপ ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ফলে আবকারির আমদানি ও উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ে। আবকারি পুরোপুরি বিলোপ না করে একে নিয়ন্ত্রণ করার নীতি বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে। [সিরাজুল ইসলাম]