আন্তঃসীমান্ত নদী
আন্তঃসীমান্ত নদী (Trans-boundary Rivers) আন্তঃসীমান্ত নদী বলতে সাধারণত সেসমস্ত নদীকে বুঝায় যেগুলি অন্তত এক বা একাধিক দেশের রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে। এই সীমা একটি দেশের অভ্যন্তরস্থ বা আন্তর্জাতিক হতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে।
বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত নদীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং মায়ানমার থেকে ৫৮টি গুরুত্বপূর্ণ নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জলতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই এ নদীগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন নদীগুলি প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে এনে মোহনা এলাকায় নতুন নতুন ভূমি গঠন করছে, আবার এ পলির অংশবিশেষ নদীরতলদেশকে ভরাট করে তুলছে যা বন্যা সংঘটনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ নদীগুলির উজান অঞ্চলের রাষ্ট্র দুটির অনেক সময়ই নদীর পানি বণ্টনের আন্তর্জাতিক রীতি মেনে না চলার কারণে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৫৫টি এরূপ নদী রয়েছে যার মধ্যে কেবল গঙ্গানদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়েছে দু’টি দেশের মাঝে। বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৬ সনের ১২ ডিসেম্বর প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারি হতে ৩১ মে এই সময়ে ফারাক্কায় প্রবাহিত পানির পরিমাপের ভিত্তিতে দু’টি দেশের মধ্যে পানিবণ্টন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়। ৩০ বছর মেয়াদী এ চুক্তি নবায়িত হবে দু’টি দেশের সম্মতির প্রেক্ষিতে। ১৯৭২ সালে দু’টি দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ‘যৌথ নদী কমিশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় এর কাজ হলো, সাধারণ নদীসমূহের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে দু’টি দেশই সর্বাধিক সুযোগসুবিধা নিতে পারে সে ব্যপারে দুটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা।
ছক
| ক্রমিক নম্বর | ভারত থেকে আগত নদী | সীমান্তবর্তী জেলা |
| ১. | রায়মঙ্গল | সাতক্ষীরা |
| ২. | ইছামতী-কালিন্দী | সাতক্ষীরা |
| ৩. | বেতনা-কোদালিয়া | যশোর |
| ৪. | ভৈরব-কপোতাক্ষ | মেহেরপুর |
| ৫. | মাথাভাঙ্গা | কুষ্টিয়া, মেহেরপুর |
| ৬. | গঙ্গা | নবাবগঞ্জ |
| ৭. | পাগলা | নবাবগঞ্জ |
| ৮. | আত্রাই | দিনাজপুর ও নওগাঁ |
| ৯. | পুনর্ভবা | দিনাজপুর ও নওগাঁ |
| ১০. | তেঁতুলিয়া | দিনাজপুর |
| ১১. | টাংগন | দিনাজপুর |
| ১২. | কুলিক বা কোকিল | ঠাকুরগাঁও |
| ১৩. | নাগর | ঠাকুরগাঁও |
| ১৪. | মহানন্দা | পঞ্চগড়, নবাবগঞ্জ |
| ১৫. | ডাহুক | পঞ্চগড় |
| ১৬. | করতোয়া | পঞ্চগড় |
| ১৭. | তলমা | পঞ্চগড় |
| ১৮. | ঘোড়ামারা | পঞ্চগড় ও নিলফামারী |
| ১৯. | দিওনাই-যমুনেশ্বরী | নিলফামারী |
| ২০. | বুড়িতিস্তা | নিলফামারী |
| ২১. | তিস্তা | নিলফামারী |
| ২২. | ধরলা | লালমনিরহাট |
| ২৩. | দুধকুমার | কুড়িগ্রাম |
| ২৪. | ব্রহ্মপুত্র | কুড়িগ্রাম |
| ২৫. | জিঞ্জিরাম | কুড়িগ্রাম |
| ২৬. | চিল্লাখালি | শেরপুর |
| ২৭. | ভোগাই | শেরপুর |
| ২৮. | সোমেশ্বরী | নেত্রকোনা |
| ২৯. | দামালিয়া/যালুখালী | সুনামগঞ্জ |
| ৩০. | নোয়াগাঙ | সুনামগঞ্জ |
| ৩১. | উমিয়াম | সুনামগঞ্জ |
| ৩২. | যদুকাটা | সুনামগঞ্জ |
| ৩৩. | ধলা | সিলেট |
| ৩৪. | পিয়াইন | সিলেট |
| ৩৫. | শারি-গোয়াইন | সিলেট |
| ৩৬. | সুরমা | সিলেট |
| ৩৭. | কুশিয়ারা | সিলেট |
| ৩৮. | সোনাই-বারদল | সিলেট |
| ৩৯. | জুরি | মৌলভীবাজার |
| ৪০. | মনু | মৌলভীবাজার |
| ৪১. | ধলাই | মৌলভীবাজার |
| ৪২. | লংলা | মৌলভীবাজার |
| ৪৩. | খোয়াই | হবিগঞ্জ |
| ৪৪. | সুতাং | হবিগঞ্জ |
| ৪৫. | সোনাই | হবিগঞ্জ |
| ৪৬. | হাওড়া | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া |
| ৪৭. | বিজনী | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া |
| ৪৮. | সালদা | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া |
| ৪৯. | গোমতী | কুমিল্লা |
| ৫০. | কাকরাই-ডাকাতিয়া | কুমিল্লা |
| ৫১. | সিলোনিয়া | ফেনী |
| ৫২. | মুহুরী | ফেনী |
| ৫৩. | ফেনী | খাগড়াছড়ি |
| ৫৪. | কর্ণফুলি | রাঙ্গামাটি |
| ৫৫. | নিতাই | ময়মনসিংহ |
| মায়ানমার থেকে আগত নদী | সীমান্তবর্তী জেলা | |
| ৫৬. | সাংগু | বান্দরবান |
| ৫৭. | মাতামুহুরী | বান্দরবান |
| ৫৮. | নাফ | কক্সবাজার |
আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির পানিবণ্টন ইস্যু নিয়ে প্রায়ই সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ছোট থেকে বড় আকারের বিরোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একক কর্তৃপক্ষের উপর এ ধরনের সংকট নিরসনের দায়ভার ন্যাস্ত থাকত তবে এ ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান অনেক সহজ হতো। কিন্তু আন্তঃসীমান্ত সম্পদসমূহের ব্যবহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন বা নিয়মনীতি থাকায় যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যার চাপ এবং সম্পদের চাহিদা বেশী সে সমস্ত এলাকায় এ ধরনের বিরোধ লেগেই থাকে। [মাসুদ হাসান চৌধুরী]
মানচিত্রের জন্য দেখুন নদী, নদী ও নিষ্কাশন প্রণালী।
