আতশ
আতশ (Fireworks) রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরী বাজি বিশেষ যা বিভিন্ন উৎসবে প্রজ্বলন করা হয়। আতশ প্রদর্শনীকে আতশবাজি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জাতি ও ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে বিজয়োৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আতশবাজি প্রদর্শনের রীতি চলে আসছে। আতশ প্রস্ত্তত ও ব্যবহারের কোনো সঠিক ইতিহাস জানা যায় না, তবে নবম শতকে চীনারা আতশ তৈরির জন্য বারুদ ব্যবহার করত এবং তারা এ আতশবাজি শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে। বিভিন্ন প্রকার দাহ্য ও বিস্ফোরক রাসায়নিক দ্রব্যের দক্ষতাপূর্ণ মিশ্রণের মাধ্যমে আতশবাজিতে শব্দ, ঔজ্জ্বল্য এবং রঙের বৈচিত্র্য তৈরি করা হয়। যেমন গতিবেগ ও স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টিকারী আতশবাজির প্রধান উপাদান হলো পটাসিয়াম নাইট্রেট, সালফার (গন্ধক), লৌহচূর্ণ এবং কাঠ কয়লার মিহি গুঁড়া। বিস্ফোরণের তীব্রতার জন্য প্রয়োজনমতো বারুদের গুঁড়াও যোগ করা হয়। আবার, আলোর ঔজ্জ্বল্যের জন্য নাইট্রেট অব লেড এবং বেরিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম-এর সূক্ষ্ম চূর্ণ আতশ মসলার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। আর রঙিন ঘূর্ণায়মান তারকা অথবা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সৃষ্টিকারী বিশেষ ধরনের আতশ তৈরির জন্য পটাসিয়াম ক্লোরেট বা পারক্লোরেটের সঙ্গে নানারকম ধাতব লবণ মেশানো হয়।
প্রদর্শনের জন্য আতশের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্বের বহু দেশেই জাতীয় দিবসসমূহে যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস প্রভৃতি উদযাপন উপলক্ষে আতশবাজি প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় দিবস-এ তারাবাজি, তুবড়ি, চরকিবাজি, কদমঝাড়, ফুলঝুড়ি প্রভৃতি আতশবাজি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আতশবাজি তৈরিতে পুরানো ঢাকার বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। সাধারণত কাগজের মোড়ক বা খোলের মধ্যে প্রয়োজনীয় মসলা ঢুকিয়ে আতশবাজি তৈরি করা হয়। তবে বিশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে বিদেশ থেকে আতশ আমদানি করা হয়ে থাকে। সংকেত দানের কৌশল হিসেবেও আতশবাজির ব্যবহার রয়েছে, যেমন আগুনের লাল শিখা দেখিয়ে রেলগাড়ি থামানো হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রঙিন অগ্নিশিখা ও ধূমায়িত গ্রেনেড ছুঁড়ে বিপদগ্রস্তের অবস্থান অথবা সামরিক অভিযানে লক্ষ্যবস্ত্তর অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। [মোঃ মাহবুব মোর্শেদ]