আজিম, এম আনোয়ারুল
আজিম, এম আনোয়ারুল (১৯৩১-১৯৭১) শিল্প প্রশাসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৩১ সালের ১৩ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায়। আনোয়ারুল আজিম দিনাজপুর সরকারি জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্রজীবনেই আনোয়ারুল আজিম দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি পাড়ায় তরুণদের জন্য ‘শক্তি পাঠাগার’ নামে একটি পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালিয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারি ছিলেন।
আনোয়ারুল আজিম কর্মজীবন শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপক হিসেবে। তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন কর্পোরেশনে বিভিন্ন পদমর্যাদায় চাকরি করেন। পরে তিনি লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে লেবার অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক লেবার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে তিনি ইপিআইডিসির নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিছুদিন পাকিস্তান আর্মি কমিশনে (পিএএসআরও) চাকরি করেন এবং লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুপার মিলের জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি উক্ত পদেই কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আনোয়ারুল আজিম মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সক্রিয় ছিলেন এবং প্রায়শ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে পাকবাহিনীর মোকাবেলা করতেন। গোপালপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় পাকসেনাদের প্রতিরোধ, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর অবরোধ এবং ধনাইদহে পাকসৈন্যের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখী সংঘর্ষে তিনি নেতৃত্ব দেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অবস্থায় হানাদার বাহিনীর মেজর রাজা আসলামকে আটক এবং হত্যায় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা পাক বাহিনীর গোচরীভূত হলে পাকসেনারা রাজাকারদের সঙ্গে মিলে ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুপার মিল এলাকা ঘেরাও করে এবং মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ৫১ জনকে আটক করে। পরে সুগারমিল আবাসিক এলাকায় ‘গোপাল সাগর’ নামক পুকুরপাড়ে তাদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। এই গণহত্যায় আনোয়ারুল আজিমসহ আরও ৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন।
শহীদদের রক্তে রঞ্জিত ‘গোপাল সাগর’ পুকুরের পরবর্তী নামকরণ হয় ‘শহীদ সাগর’। এছাড়াও মিলের মহাব্যবস্থাপক লে.এম আনোয়ারুল আজিমের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পরবর্তী সময়ে গোপালপুর রেলস্টেশনের নামকরণ হয় আজিমনগর। ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ এম. আনোয়ারুল আজিমের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [তানিয়া রুবাইয়া]