আখন্দ, সা’দত আলি
আখন্দ, সা’দত আলি (১৮৯৯-১৯৭১) প্রবন্ধকার, সাহিত্যিক। জন্ম ১ জুলাই ১৮৯৯ সালে বগুড়া জেলার সদর থানার অন্তর্গত চিংসাপুর গ্রামে। তাঁর পিতা সানিউদ্দিন আখন্দ, মাতা করিমুন্নেছা।
সা’দত আলি আখন্দ বগুড়ার করোনেশন স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে প্রবেশিকা, ১৯১৮ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯২০ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে বিএ অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বগুড়া সারিয়াকান্দি নারছি হাইস্কুল, মহিমাগঞ্জ ও বাগবাড়ি হাইস্কুলে শিক্ষকতা (১৯২০-২২) করেন। ১৯২২ সালের শেষ দিকে তিনি পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। কলকাতার ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চে কর্মরত (১৯২৭-২৮) অবস্থায় তিনি আইন কলেজে ভর্তি হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৩৩ সালে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তিনি আইন পেশা অবলম্বন না করে পুলিশ বিভাগে দারোগা পদে তেত্রিশ বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৫৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
পুলিশ বিভাগের প্রতিকূল পরিবেশে চাকরি করেও সাহিত্যের প্রতি তাঁর একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। তরুন মুসলিম (১৯২৮) শীর্ষক প্রবন্ধ-গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি পাশ্চাত্য সাহিত্যেরও একজন মনোযোগী পাঠক ছিলেন। বাঙালি মুসলমান সমাজের নানা অজ্ঞতা ও কুসংস্কার কীভাবে দূর করা যায়, এ ভাবনা থেকে তিনি উল্লিখিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। মুক্তচিন্তা ভাবনায় বিশেষত, বাঙালি মুসলমান সমাজের তরুণদের প্রতি ছিল তাঁর আহবান।
কলকাতায় অবস্থানকালে, সওগাত ও বুলবুল পত্রিকায় তিনি লিখতেন। এসময় মুক্তচিন্তার লেখক হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেন। মাসিক সওগাত পত্রিকার তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। এ সূত্রে আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, জসীমউদ্দীন, আবুল ফজল, সুফিয়া কামাল প্রমুখের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সা’দত আলি আখন্দের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে ইতিহাসের শহীদ (১৯৩৫), অতীত ও বর্তমান (১৯৩৬), মোহাম্মদ বিন কাসিম (১৯৩৬), ওসমান খাঁ (১৯৩৬), দায়ূদ খাঁ (১৯৩৬) তেরো নম্বরে পাঁচ বছর (১৯৬৯) ও অন্য দিন অন্য জীবন (১৯৬৯)।
তেরো নম্বরে পাঁচ বছর গ্রন্থটি সা’দত আলি আখন্দের আত্মজীবনীমূলক রচনা। এটি ষাটের দশকে দু-বাংলার পাঠক সমাজে জনপ্রিয় ছিল। গ্রন্থটি ঔপনিবেশিক ভারতে সংঘটিত রাজনীতিক, সামাজিক ও চাঞ্চল্যকর অসংখ্য ঘটনার একটি মূল্যবান দলিল। তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সব রচনা ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমী থেকে সা’দত আলি আখন্দ রচনাবলী (২০০৯) নামে প্রকাশিত হয়। বাংলা একাডেমী, ১৯৯০ সাল থেকে ‘সা’দত আলি সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করছে। ১৯৭১ সালে ১২ মে বগুড়ায় সা’দত আলি আখন্দের মৃত্যু হয়। [তাহমিনা হোসেন]