অ্যান্ডারসন, জন

অ্যান্ডারসন, জন (১৮৮২-১৯৫৮)  বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর (১৯৩২-১৯৩৭)। তিনি ১৮৮২ সালের ৮ জুলাই স্কটল্যান্ডের এডিনবরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ডেভিড আলেকজান্ডার পিয়ারসন অ্যান্ডারসন এবং মাতা জেনেট কিলগোর ব্রিগলমেন। এডিনবরার জর্জ ওয়েটসন্স স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।

১৯০৫ সালে তিনি কলোনিয়াল অফিসে যোগদান করেন। সেখানে নাইজেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকা বিভাগে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর পর তিনি ন্যাশনাল হেলথ ইন্সুরেন্স কমিশনে যোগ দেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি হেলথ ইন্সুরেন্স কমিশনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেন। ১৯১৭ সালে নতুন নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত হলে তিনি তার সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯১৯ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯২২ সাল থেকে তিনি ছিলেন হোম অফিসের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট। ১৯৩২ সালে অ্যানডার্সন বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন স্কটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্বাচিত এম.পি (১৯৩৮-১৯৫০) এবং কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট (১৯৪০-১৯৪৩)। তিনি ১৯৪৩-১৯৪৫ সালে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

অ্যান্ডারসন যখন বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন তখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন প্রকট রূপ নেয়। তাঁর আগমনের কিছুকাল পূর্বেই চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠিত হয় (১৯৩০), জেলের আইজিকে হত্যা করা হয় এবং তাঁর পূর্বসূরি স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি বিপ্লবী আন্দোলন বন্ধের জন্য বিকল্প পথ নেন। তিনি জনকল্যাণ ও সংস্কারমূলক কাজ করে যুবকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন যাতে তারা বিপ্লবের দিকে না ঝুঁকে। তিনি ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার চালু করেন। ছোট ছোট শিল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা দেন।

১৯৩৪ সালে অ্যান্ডারসনকেও হত্যার চেষ্টা চালানো হলে তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তিনি তাঁর সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী এ আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন। যে যুবক তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল তিনি তাকে জেল থেকে মুক্ত করে ইংল্যান্ডে ট্রেনিং এর জন্য প্রেরণ করেন। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার। তিনি রাজস্বে ২ কোটি রূপি ঘাটতি মিটিয়ে কিছু উদ্বৃত্ত করতে পেরেছিলেন। তিনি পাট উৎপাদনের ওপর নীতিমালা প্রণয়ন করেন। গ্রামীন জনগণের ঋণ সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করেন। কৃষি ঋণ সেটেলমেন্ট অ্যাক্ট প্রবর্তনের পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে বাংলাকে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়েছিল।

জন অ্যান্ডারসন প্রশাসনে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন মর্যাদায় ভূষিত হন, যেমন, জি.সি.বি (GCB), জি.সি.এস.আই (GCSI), জি.সি.আই.ই (GCIE), ও.এম (OM), এফ.আর.এস (FRS), এম.এ (MA)। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন বৈদেশিক সম্মান, পুরস্কার ও ডিগ্রির অধিকারী ছিলেন। ১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারি লন্ডনে তাঁর মৃত্যু হয়।  [মো. মামুনূর রশীদ]