অলঙ্কার
অলঙ্কার প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নানাবিধ কারণে অলঙ্কার ব্যবহূত হয়ে আসছে। নন্দনতাত্ত্বিক বা মোহনীয় সৌন্দর্য বাদ দিলেও অলঙ্কার সঞ্চয়ের প্রতিরূপ, মর্যাদার প্রতীক, আত্মস্বরূপ ও প্রত্যয়ের ধারক, অথবা বৈবাহিক অবস্থার চিহ্ন। ভারতে ও বাংলাদেশে অলঙ্কার হলো সঞ্চয়ের সনাতন রূপ, এর মধ্যে স্বর্ণালঙ্কার সহজে মুদ্রায় রূপান্তর করা যায় বলে তা অতি মূল্যবান হিসেবে পরিগণিত। অলঙ্কার প্রায়শ মোহিনী শক্তির বা ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং তা অঙ্গে ধারণ করা হয় অশুভ শক্তি প্রতিহত করতে বা সুখ-সমৃদ্ধি বাড়াতে। ফুল, পালক, দাঁত, প্রাণীদেহের শক্ত আবরণ থেকে আরম্ভ করে রুপা, সোনা, মুক্তা, হীরা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর আবহমান কাল থেকে অলঙ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
উপমহাদেশে খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে অলঙ্কার ব্যবহারের কথা জানা যায়। সিন্ধুবিধৌত অঞ্চলে খননকার্যের ফলে তাম্র, রৌপ্য ও স্বর্ণের অলঙ্কারের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে ধাতু বা মূল্যবান পাথরে মন্ডিত চুলের কাঁটা, কানের দুল, গলার হার, চুড়ি, আঙটি ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। পুঁতির অলঙ্কারও সম্ভবত জনপ্রিয় ছিল। আর্যরা ছিল স্বর্ণালঙ্কার-প্রিয় এবং যজুর্বেদ-মতে স্বর্ণের রয়েছে ঐন্দ্রজালিক শক্তি। বেদব্রাহ্মণে বিভিন্ন মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অলঙ্কার ব্যবহারের কঠোর নিয়মরীতি ছিল। কামসূত্রে চৌষট্টি কলার উল্লেখ রয়েছে; সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রত্নবিদ্যা, মালা ও হার গাঁথার কৌশল, কর্ণাভরণ তৈরি এবং অলঙ্কার ব্যবহারের বিচিত্র কলাকৌশল। নর-নারীকে দাঁত মাজার, সুগন্ধি ব্যবহারের এবং কিছু অলঙ্কার পরার উপদেশ দেওয়া হতো। স্বামীরা যখন প্রবাসে থাকত, তখন সাধ্বী বণিতাদের মাঙ্গলিক অলঙ্কার ধারণ করার জন্য সচেতন করে দেওয়া হতো। কোনো পুরুষ কোনো নারীর প্রতি প্রেম নিবেদন করতে চাইলে তাকে বলা হতো, সে যেন তার প্রণয়ীকে কানের দুল ও আঙটি জাতীয় অলঙ্কার উপহার দেয়।
রামায়ণ এ চার থেকে ছয় শতকের যেসব অলঙ্কারের কথা বর্ণিত আছে এখনও সেগুলির প্রচলন অব্যাহত। উল্লেখযোগ্য অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে রত্নখচিত আঙটি, সোনার সরু হার, শঙ্খবলয়, কণ্ঠহার, উষ্ণীষ ও স্বর্ণমুকুট। হনুমান বন্দিনী সীতার নিকট নিজেকে রামের দূত প্রমাণ করতে রামের অঙ্গুরীয় নিয়ে গিয়েছিল। সীতার কাছ থেকেও সে মুক্তার তৈরি কেশাভরণ নিয়ে এসেছিল।
মুগল বাদশাহরা অলঙ্কার ব্যবহার করতে পছন্দ করত। ইংরেজ পরিব্রাজকরা মুগল রাজদরবারে অলঙ্কারের অঢেল ব্যবহার প্রত্যক্ষ করে। মুগলদের রাজত্বকালে মূল্যবান ধাতুতে পাথর সংযোজন চূড়ান্ত উৎকর্ষ লাভ করে। মুগল চিত্রকলায় ঝুমকা ও টিকলির অলঙ্কার ব্যবহূত হতে দেখে মনে হয় এগুলি মুগলদেরই অবদান। এসব চিত্রকলায় মুগলদের মুক্তা-প্রীতির প্রমাণও লক্ষণীয়।
ব্রিটিশদের আগমন ও মুগলদের পতন হওয়ার ফলে অলঙ্কারের রুচির ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি বিভিন্ন অলঙ্কার কেনার ধারায়ও পরিবর্তন ঘটে। মণিমুক্তার পরিবর্তে স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি লোকজন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, কারণ তা সবসময় বিক্রয় করা যায়। বেশির ভাগ মণিরত্ন লুণ্ঠিত হয়ে ইংরেজদের রত্নপেটিকায় স্থান পায় এবং নতুন ভাবে অলঙ্কার নির্মাণে সেগুলি পুনঃস্থাপিত হয়। ইঊরোপীয় নকশা ভারতীয় অলঙ্কার শিল্পকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। ইউরোপীয় প্রভাবের আগে ভারতীয় অলঙ্কারে মসৃণ ধারবিশিষ্ট হীরার পাত ও রত্নপাথরের ব্যবহার ছিল। বিচিত্র পলকাটা রত্নপাথরের ছাঁটযুক্ত ইউরোপীয় ফ্যাশনের নতুন চাহিদা সৃষ্টি হওয়াতে আগের ‘কুন্দন’ নামে পরিচিত স্বর্ণালঙ্কারের গোলাকার পাথরে খচিত করা হয় নখর সজ্জা। বিশ শতকের মাঝামাঝি জাতীয়তাবাদী চেতনার পুনর্জাগরণের ফলে স্বদেশী প্রেরণাবশত প্রাচীন ও বহুমাত্রিক রূপবৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ভারি ও জমকালো অলঙ্কার পুনরায় জনপ্রিয় হয়।
বঙ্গীয় অলঙ্কারকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে: খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ; ১২০০-১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ; ১৭৫০-১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৯৫০-২০০০ খ্রিস্টাব্দ। লক্ষ্য করবার বিষয় এ যে, এখন বাংলাদেশে যেসব অলঙ্কারের প্রচলন রয়েছে তার অধিকাংশই অতীতের উৎসজাত এবং এখনকার বিয়ের অলঙ্কারেও মুগল রীতির প্রচুর সাদৃশ্য বিদ্যমান। বস্ত্তত, এক্ষেত্রে একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন শৈলী ও প্রভাবের সহাবস্থান লক্ষণীয়। অধিকন্তু, স্বর্ণালঙ্কারে পরিবর্তনের ছাপ পড়লেও, যেখানে প্রাচীন প্রথাগত অলঙ্কার রুপার তৈরি সেখানে বিয়ের ভারি অলঙ্কার বংশপরম্পরায় স্বর্ণেরই থেকে যাচ্ছে; তবে আধুনিক হস্তশিল্পের দোকানগুলি রুপা দিয়ে নতুন নকশায় অলঙ্কার তৈরি করছে।
বাংলাদেশে অলঙ্কারের আদিতম নিদর্শন পাওয়া যায় ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, তা হলো ঢাকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ওয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত মাঝারি মূল্যমানের পাথর থেকে তৈরি পুঁতি। মহাস্থান গড়এ খনন করে পাথুরে পুঁতি পাওয়া গিয়েছে। খাঁটি অলঙ্কারের কিছু নমুনা এখনও টিকে আছে। বাংলাদেশের আদি অলঙ্কার সম্পর্কিত ধারণা লাভ করা যায় পাথরে ও পোড়ামাটিতে নির্মিত প্রাচীন ভাস্কর্যমূর্তি থেকে। পাহাড়পুর ও মহাস্থানগড়ের টেরাকোটা মূর্তি ছয় থেকে আট শতকে এতদঞ্চলে পরিহিত অলঙ্কারের নমুনা উদ্ঘাটন করে।
নরনারী উভয়েই অলঙ্কার পরত; কানের দুল, বাজুবন্ধ, বালা ছিল উভয়ের সাধারণ অলঙ্কার। মেয়েরা পরত মল। পোড়ামাটিতে অঙ্কিত অলঙ্কার ছিল প্রায়শ সাদামাটা ধরনের, কালো পাথরে খোদিত অলঙ্কার ছিল সূক্ষ্ম কারুময়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরএ সংরক্ষিত দশ শতকের একটি মারীচী প্রতিমূর্তি চারুশিল্পের নৈপুণ্যমন্ডিত অলঙ্কারবৈচিত্র্য প্রদর্শন করে। এ মূর্তির রয়েছে একটি সুনির্মিত শিরোভূষণ, দু জোড়া অনন্ত, বালা, দুটি কণ্ঠহার, মল ও কানের দুল। কানের দুল বর্তুলাকার এবং তার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ছোট্ট কৃত্রিম গোলাপ। ক্ষুদ্র হারটিতে ও বাজুবন্ধে পত্রপল্লবের কারুকাজ। মণিবন্ধে পরার প্রশস্ত বলয়ে উন্মুক্ত জাফরিকাটা নকশা, দীর্ঘ হারটি গোলাকার পুঁতির, সম্ভবত মুক্তা দিয়ে গঠিত। এর কোমর একটি বেষ্টনী দিয়ে পরিবৃত। অন্য প্রতিমূর্তির তুলনায় মারীচী মূর্তির কোমরবন্ধ অনেকটা অনাড়ম্বর।
মূর্তিগুলিতে বিভিন্ন রকমের কোমরবন্ধ রয়েছে। সময়ের দিক থেকে আদি নিদর্শন হলো পুঁতির একটি সরল মালা। কোমরবন্ধের পরবর্তী রূপগুলি সুগঠিত, অনেকগুলি সুতোতে ফাঁক ফাঁক করে গাঁথা। কোমরবন্ধের একটি চমৎকার উদাহরণ পরিদৃষ্ট হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত দেবী গৌরীর প্রতিমূর্তিতে। এতে কোমরবেষ্টনী থেকে তিনটি উপাঙ্গ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে; সবগুলিই অষ্টদলযুক্ত পদ্মনকশা ও চতুর্দল পুষ্পাবলিসহ বিশদভাবে অলঙ্কৃত। দু পাশে সারিবদ্ধ গোলাকার গুটি। গুটির মালা চারটি, তার মধ্যে দুটি ছোট ও দুটি বড় গুটি পরপর ব্যবধানে শক্তভাবে আটা।
সমসাময়িক সাহিত্য থেকে নরনারী উভয়ের অব্যাহত অলঙ্কার প্রীতির কথা জানা যায়। পুরুষ ও নারী উভয়েই আঙুলে আঙটি ও কানে মাকড়ি পরত। এগুলির সঙ্গে পুরুষরা পাগড়িতেও অলঙ্কার পরত। মেয়েরা পরত বলয় যা নানা নামে পরিচিত, যেমন বালা, কঙ্কন ইত্যাদি। এ ছাড়াও তারা পরত সাতলহরী নামের পাঁচ থেকে সাত ছড়ি সোনার গুটি মালিকা, দশ আঙুলে দশটি অঙ্গুরীয় এবং রুপার মল। ষোল শতকের বাংলার অভিজাত মুসলমানরা রুপার খঞ্জর বহন করত।
বাংলাদেশে মুগলপ্রভাব আস্তে আস্তে স্থিত হয় এবং তাদের সমৃদ্ধশালী জীবনধারার প্রকাশ দেখা যায় নওয়াব ও জমিদারদের ব্যবহূত মণিমুক্তার ভূষণাদিতে। একদিকে নিম্ন ও মধ্য শ্রেণির মানুষ সঞ্চয়ের উপায় হিসেবে স্বর্ণে আস্থাশীল ছিল, অন্যদিকে সম্পন্ন মুসলমানরা সৌন্দর্যপ্রীতির কারণে অলঙ্কার সংগ্রহ করত, এনামেল করতে ও পাথরে আবরণ দিতে অর্থ ব্যয় করত এবং পবিত্র আল-কুরআন এর বাণী মূল্যবান পাথরে খোদাই করত। ঢাকার নওয়াবদের কিছু সূক্ষ্ম অলঙ্কারে মুগল প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় শৈলীর প্রভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। কলকাতার বিখ্যাত মণিকার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত ঢাকা সংগ্রহে চৌদ্দটি রত্নালঙ্কারের অ্যালবাম ধনী নওয়াবদের মধ্যে কিভাবে মুগল ও ইউরোপীয় রুচির সংমিশ্রণ ঘটেছিল তা উন্মোচন করে।
অলঙ্কারগুলির মধ্যে রয়েছে বলয় জাতীয় দস্তবন্ধ বা বাজুবন্ধ ইত্যাদি বিচিত্র নামে পরিচিত প্রাচ্য অলঙ্কার, শির পাইচ বা পাগড়ির ভূষণ, মণিযুক্ত ফেজ টুপি, এবং পাশ্চাত্য অলঙ্কার যেমন বগ্লস্ ও ব্রৌচ। সংগ্রহভুক্ত একটি দস্তবন্ধ ভারতীয় পট্টহীরা থেকে তৈরি এবং এর মাঝখানে যে পাথরটি রয়েছে তার নাম দরিয়া-ই-নূর অর্থাৎ আলোর নদী; এর মালিক সম্ভবত পারস্যের শাহ। আরেকটি বাজুবন্ধ পান্না ও হীরা বিমন্ডিত। কবচ হিসেবে অলঙ্কারের যে ব্যবহার এ জাতীয় রত্নপাথরে দেখা যায় তার কেন্দ্রীয় পান্নাটি পবিত্র কুরআনের আয়াত দিয়ে মিনা করা এবং পার্শ্ব পান্নাটি ‘আল্লাহ’ শব্দ দিয়ে মিনা করা।
প্রথম যুগের ভারতীয় অলঙ্কার ছিল দেহসজ্জার আভরণ; শরীরের উন্মুক্ত অংশে সেগুলি পরিধান করা হতো, কিন্তু এখন পাশ্চাত্য ভূষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির মহিলাদের মধ্যে ব্রৌচ জাতীয় অলঙ্কার বা পোশাক অাঁটকে রাখার অলঙ্কার ফ্যাশন হিসেবে সমাদৃত। নতুন রুচির দৃষ্টান্ত হলো কাশ্মীরের গোলাপ নামের অলঙ্কার এবং তারকা লকেট। কাশ্মীরের গোলাপ হলো মধ্যখানে লাল চুনিযুক্ত উজ্জ্বল কাটা হীরা দিয়ে তৈরি পুষ্প-পল্লব যার পিছনে রয়েছে একটি ক্ষুদ্রাকৃতি কুরআন পুরে রাখার আধার। উজ্জ্বল কাটা হীরার সঙ্গে তারকা-লকেট যুক্ত করা ইউরোপীয় প্রভাবের নিদর্শন।
সংকটপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হতে হতে এক সময় ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে গেলে সোনার অলঙ্কার পুনরায় জনপ্রিয় হয়। কিন্তু সময়ান্তরে এ প্রবণতার পরিবর্তন ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তানে পাথরের কাজ ছিল জনপ্রিয় এবং পূর্ব পাকিস্তানে উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির রুচিতে তার প্রতিফলন ঘটে। নওরতন (শাব্দিক অর্থে নয়টি রত্নপাথর) অলঙ্কার জনপ্রিয় হয়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি পূর্ব পাকিস্তানে গোলাপি মুক্তার কদর বাড়ে। সোনার অলঙ্কারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাপি মুক্তার মিশেল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
রুচির পরিবর্তনেও কিছুটা উচ্চ মূল্যমানের জন্য এখন বাংলাদেশে অলঙ্কার পরিচর্যায় অনেকগুলি প্রবণতা দেখা যায়। সোনার দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়াতে, অলঙ্কারের নকশা-রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে। যেহেতু এখনও সোনাকেই মূল্যবান মনে করা হয় এবং বিয়েতে বরের পরিবারের পক্ষ থেকে কমপক্ষে এক প্রস্থ অলঙ্কার উপহার দেওয়া হয়, সেজন্য মণিকাররা সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সোনার শিল্পকর্মে নতুন নকশার উদ্ভব ঘটায় যাতে খুব অল্প সোনা দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করা যায়। তবে জনসাধারণের একটা অংশে বিত্তবৈভব বেড়ে যাওয়াতে অনেকাংশে প্রথানুগ ভারি ভারি অলঙ্কার যেমন নওরতন, চাহিদা পূরণের জন্য এখনও তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহু মহিলা প্রথাগত সোনার হার, চুড়ি ও কানের মাকড়ি পরিহার করে চলছে। পরিবর্তে আরও প্রাচীন ঐতিহ্যপ্রধান রুপার অলঙ্কার, এমনকি তামা ও পিতলের অলঙ্কার পছন্দ করছে। এতে জাতীয় রূপ সন্ধান ও গৌরববোধ বিজড়িত। আড়ং, কুমুদিনী, কারুপণ্য ইত্যাদি হস্তশিল্প বিপণির আলাদা অলঙ্কার কাউন্টার আছে, যেখানে রৌপ্য ও তাম্রনির্মিত অলঙ্কার, পোড়ামাটি ও বিচিমালার বিচিত্র ভূষণ, মাঝারি মূল্যমানের পাথরের ও গোলাপি মুক্তার অলঙ্কার পাওয়া যায়। ঐতিহ্যবাহী রৌপ্যালঙ্কার, যেমন- মাঝারি আকৃতির কানের দুল, অথবা পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় উপজাতিদের ওজনদার অলঙ্কার এবং ঐতিহ্যবাহী কবচ তথা মাদুলি ও তাবিজ কালো সুতায় গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে আধুনিক ফ্যাশন জগতে ফিরে আসছে। কক্সবাজার জেলায় হাতির দাঁতের বা হাড়নির্মিত ভূষণাদি, যেমন খোন্তামালা অর্থাৎ কালো সুতোয় গাঁথা চারদিকে খাঁজকাটা ফাঁপা জাতীয় অলঙ্কার বেশ জনপ্রিয়। ধর্মীয় কারণে ধারণকৃত অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে পলা, রক্তবর্ণ প্রবালের চুড়ি, শঙ্খবলয়, মাঝে মাঝে পরার উপযোগী সোনার তারে তৈরি অলঙ্কার, লোহার বালা (সতী-সাধ্বী স্ত্রীর চিহ্নস্বরূপ স্বামীর মঙ্গলার্থে পরিহিত), ঐতিহ্যবাহী অষ্টধাতুতে নির্মিত বালা অথবা আঙটি। ধনবান মুসলমানদের মধ্যে ছোট্ট লকেটের ভিতর ক্ষুদ্র কুরআন শরিফ রাখার মতো আরবিতে ‘আল্লাহ’ লিখিত সোনার লকেট বেশ জনপ্রিয়। ঐতিহ্যমতে, বিবাহিত মহিলারা সবসময় চুড়ি পরে, তবে বর্তমানে তারা আসল সোনার চুড়ির পরিবর্তে প্রায়শই নকল সোনার চুড়ি ব্যবহার করছে। [নিয়াজ জামান]