অর্থশাস্ত্র

অর্থশাস্ত্র  প্রাচীন ভারতের একটি মূল্যবান গ্রন্থ যেটি বিষয়ের বৈচিত্র্য ও ব্যাপকতার জন্য সুপরিচিত। এতে একাধারে যেমন রয়েছে রাজনীতি ও রাষ্ট্রশাসন, প্রশাসন ব্যবস্থা, আর্থিক অবস্থা ও ব্যবস্থা এবং সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কিত নানান দিকের তাত্ত্বিক আলোচনা, তেমনি রয়েছে অন্যান্য বহুবিধ বিষয়, যেমন জীব ও উদ্ভিদ জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক, খনিজ পদার্থ ও বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার প্রক্রিয়া, ভূতত্ত্ব, কৃষি, এবং পশুপালন। গ্রন্থাকারের জ্ঞানের বিশাল পরিসর দেখে বিস্মিত হতে হয়। অর্থশাস্ত্র বহুবিধ বিষয়ের জ্ঞানের আধার এবং এটি প্রাচীন ভারতীয়দের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রসরতার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে।

সংস্কৃত ভাষায় রচিত খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকের এ গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্য যিনি অতীব বুদ্ধিমান ‘চাণক্য’ বা সম্রাটের প্রাথমিক জীবনের শিক্ষক বিষ্ণুগুপ্ত বলেও পরিচিত। গ্রন্থটিকে বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে দক্ষিণ ভারতের এক নিভৃত অঞ্চলে উদ্ধার করেছিলেন পন্ডিত শামশাস্ত্রী বিশ শতকের গোড়ার দিকে এবং তিনি ১৯১৫ সালে গ্রন্থটির সম্পাদিত মূল অংশ ও  ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। তবে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে গ্রন্থটির ভাষা বিষয়াদির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে অনেকেই এ মত পোষণ করেছেন যে এটি কোনো একক গ্রন্থাকারের এবং খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকের রচনা না হয়ে সম্ভবত ৩/৪ শতক পরে এটি বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে। তবে যে কোনো মতই আমরা গ্রহণ করি না কেন এটিকে কৌটিল্যিয় অর্থশাস্ত্র বলে স্বীকৃতি দেওয়াই সমীচীন হবে।

এ গ্রন্থে বাংলা সম্পর্কে মাত্র দুটি তথ্যের উল্লেখ রয়েছে: সর্বভারতীয় বাজারে বাংলার সুক্ষম সূতীবস্ত্রের চাহিদার কথা এবং ভারতবর্ষের নারীদের মধ্যে বাংলার নারীর রূপ-লাবণ্য তাদেরকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে। অর্থশাস্ত্রকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের একটি মূল্যবান সূত্র হিসাবে গণ্য করা হয় এই কারণে যে যেখানে অসংখ্য গ্রন্থাদিতে পরজাগতিক বিষয়াদি প্রাধান্য পেয়েছে, সেখানে অর্থশাস্ত্রের বিষয়াদি সম্পূর্ণভাবে ইহজাগতিক এবং পার্থিব। তবে এ কথা সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে অর্থশাস্ত্রে যে তথ্যাদি রয়েছে তা মূলত তাত্ত্বিক, কতখানি বাস্তবতা তার মধ্যে অন্তর্নিহীত রয়েছে তা ধরা কষ্টসাধ্য। তবে তত্ত্বসমূহ নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা প্রসূত- এমনটা মনে করা অযৌক্তিক হবে না।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]