অংশীদারি কারবার
অংশীদারি কারবার ব্যাংকিং ব্যতীত অন্যান্য ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ২ থেকে ২০ জন পর্যন্ত এবং ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন পর্যন্ত যৌথ মালিকের ব্যবসায়িক সংগঠন। অংশীদারদের মধ্যে শুধু চুক্তির মাধ্যমেই কারবার অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশে অংশীদারি কারবার প্রতিষ্ঠার জন্য অংশীদারিত্ব আইন ১৯৩২ অনুসরণ করতে হয়। মানসিক বিকলাঙ্গ বা নাবালক ব্যক্তি অংশীদার হতে পারে না। তবে সকল অংশীদার সম্মত থাকলে একটি বিদ্যমান অংশীদারি কারবারে একজন নাবালককে মালিকানায় অংশীদারিত্বের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীদারি কারবারে তার সম্পদের অংশ বা তা থেকে অর্জিত মূলধন ছাড়া নাবালকের অন্যান্য সম্পত্তি বা ব্যক্তিগতভাবে তাকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের দেনার জন্য দায়বদ্ধ করা যায় না।
বাংলাদেশে প্রচলিত অংশীদারি আইন দু ধরনের অংশীদারি কারবারকে স্বীকৃতি দিয়েছে- সাধারণ অংশীদারি কারবার এবং সীমিত দায়ের অংশীদারি কারবার। সাধারণ অংশীদারি কারবারে সকল অংশীদার যৌথভাবে, বা তাদের পক্ষে তাদেরই মধ্য থেকে যে কেউ ব্যবসায় পরিচালনা করেন এবং অসীম দায়সহ সকল দায়িত্ব বহন করেন। সাধারণ অংশীদারি কারবারের দুটি ধরন হচ্ছে স্বেচ্ছায় অংশীদারিত্ব এবং নির্দিষ্ট বা বিশেষ অংশীদারিত্ব। অংশীদারি কারবারের মেয়াদ কতদিন হবে অর্থাৎ অংশীদারগণ নির্দিষ্ট কারবার প্রতিষ্ঠানে কতদিন একত্রে থাকবেন তা যদি নির্ধারিত না থাকে তাহলে সেটি হবে সাধারণ অংশীদারি কারবার। নির্দিষ্ট বা বিশেষ অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের মেয়াদ নির্ধারিত থাকে অথবা কি কি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জন হওয়া পর্যন্ত অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে তা বলে দেওয়া থাকে। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে, উদ্দিষ্ট সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের পরও যদি অংশীদারি কারবারের অস্তিত্ব বজায় থাকে তাহলে তা আপনা-আপনিই স্বেচ্ছায় অংশীদারিত্বের আইনি মর্যাদা পায়।
অংশীদারিত্ব আইন ১৯৩২ অনুযায়ী অংশীদারি কারবারের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তবে নিবন্ধিত হলে তা কয়েকটি আইনি অধিকার ও সুবিধা ভোগের সুযোগ পায়। অংশীদারিত্বের দলিল তথা অংশীদারি কারবারের পরিমেল নিয়মাবলিতে যেসব বিষয় থাকে সেগুলি হচ্ছে কারবার প্রতিষ্ঠানের নাম, কারবারের ধরন, প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও পরিসম্পদ, প্রত্যেক অংশীদারের মূলধন, অংশীদারিত্বের মেয়াদ, বেতন ও মুনাফা থেকে প্রাপ্তব্য অংশীদারদের ভাগ, অংশীদারদের মূলধনের ওপর (প্রযোজ্য হলে) সুদহার, আগাম ও অন্যান্য উত্তোলন, অংশীদারদের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ, হিসাব ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিধান, লাভ-লোকসান আবণ্টন, নতুন অংশীদার গ্রহণ বা অংশীদারদের মধ্যে কারও বহিষ্কার, দেউলিয়াত্ব বা কোনো অংশীদারের মৃত্যুর কারণে অংশীদারিত্ব চুক্তির অবসান, বিক্রয় বা অবলোপের ক্ষেত্রে অংশীদারি কারবারের সুনাম ও শেয়ার/পরিসম্পদসমূহের মূল্য নির্ধারণ এবং সালিশ সংক্রান্ত শর্তাবলির ধারা।
কোন অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদি নিবন্ধিত না হয় তাহলে তার একজন অংশীদার অংশীদারিত্ব আইনের সুযোগ নিয়ে নিজের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন না। একটি অনিবন্ধিত অংশীদারি কারবার প্রতিষ্ঠানও কারও সঙ্গে চুক্তি করার পর তা থেকে উদ্ভূত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে কোনো মামলা দায়ের করতে বা তার নিজের বিরুদ্ধে মামলা হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন না।
বাংলাদেশে ব্যবসায় ক্ষেত্রে এক মালিকানা, অংশীদারি এবং যৌথমূলধনী সব ধরনের কারবার প্রতিষ্ঠানই আছে। ৩০ জুন ২০০০ সালে দেশে নিবন্ধিত অংশীদারি কারবার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩২,৭২৬ এবং যৌথমূলধনী কোম্পানি ছিল ৪৪,৫২৪টি, যেগুলির মধ্যে রয়েছে সরকারি খাতে ২,৫২৬টি, বেসরকারি খাতে ৪১,৪৯০টি। অনিবন্ধিত অংশীদারি কারবার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সম্পর্কে তেমন নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। [আবুল কালাম আজাদ]