ফেনী সদর উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:১৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ফেনী সদর উপজেলা (ফেনী জেলা)  আয়তন: ১৯৭.৩৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৪´ থেকে ২৩°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৮´ থেকে ৯১°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা, দক্ষিণে সোনাগাজী ও মিরসরাই উপজেলা, পূর্বে ছাগলনাইয়া উপজেলা, পশ্চিমে দাগনভূঁইয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪০৪৪৯৮; পুরুষ ২০৪০৯০, মহিলা ২০০৪০৮। মুসলিম ৩৭৩৯৪৯, হিন্দু ৩০৩৭৭, বৌদ্ধ ৩৭, খ্রিস্টান ৬০ এবং অন্যান্য ৭৫।

জলাশয় প্রধান নদী: ফেনী, ছোট ফেনী। সিলোনিয়া খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ফেনী থানা গঠিত হয় ১৯২৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৫৮ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১৩৪ ১২৫ ৯২৭৯৪ ৩১১৭০৪ ২০৫০ ৬২.৫ ৫০.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৭.২০ ১৮ ৩৬ ৯২৭৯৪ ৩৪১২ ৬২.৪৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাজীরবাগ ৪৭ ৩৫৩৫ ১০৬৩২ ১০৪৫০ ৫৬.৭৯
কালীদহ ৪৩ ৪৭৩৬ ১২৯৭১ ১২৮১৯ ৫৬.০৭
ছনুয়া ৮২ ৩১৫৭ ৯৯৩৭ ১০৮৭৭ ৪৮.৫৮
ধর্মপুর ২৩ ৪০৬৮ ১২২৯৫ ১১২৮৮ ৪৬.০৭
ধলিয়া ২২ ৩৯৮৯ ১৩৩৯৮ ১৪৩৬৭ ৫০.২৭
পাঁচগাছিয়া ৬৪ ৪৩৭৫ ১৯০৬৮ ১৮৭৯৫ ৪৭.৪৬
ফরহাদনগর ২৫ ৩৮৮৭ ১০০৩০ ১০৮৪৯ ৪৯.৪৫
ফাজিলপুর ৩০ ৪০৭৭ ১২৯২৭ ১৩৬৩৩ ৫০.০২
বালিগাঁও ২০ ৪২০৫ ১৫১২১ ১৫৫৯৬ ৪৪.০৩
মাতাবী ৬০ ৩৫১১ ১০২৬৩ ১১০৯৯ ৫১.১৬
লেমুয়া ৫১ ২৭৫৯ ৯৮৯৯ ১০৪২৬ ৫১.৯৫
শর্শদি ৮৬ ৫০৬৮ ১৭০৯৪ ১৭৮৭০ ৫১.৯১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শর্শদিতে মুহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ ও শর্শদি শাহী মসজিদ, ফেনী শহরে রাজাঝির দিঘি (১৮৩০), মহিপালের বিজয় সিংহ দীঘি (১৭৬০), কবি নবীনচন্দ্র সেনের স্মৃতি বিজড়িত প্রবীণবৃক্ষ (দাউদপুর পুল)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ঢাকার নায়েব নাজিম ১৭৬২ সালে মুহম্মদ আলী চৌধুরীকে ফেনী এলাকার ফৌজদার নিয়োগ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ফলে ১৭৯০ সালে মুহম্মদ আলী চৌধুরী তাঁর জমিদারি হারান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ এপ্রিল ফেনী সদর উপজেলার ওপর পাকসেনারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় পাকসেনারা এ উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ৬ ডিসেম্বর ফেনী শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৭; গণকবর ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪১৩, মন্দির ১৭২, মাযার ৩, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ফেনী জামে মসজিদ, শর্শদি শাহী মসজিদ, পাগলা মিয়ার মাযার, পাঠান শাহের মাযার, রামসিংহ স্মৃতি মঠ (১৮৬০), রাজবাড়ী মন্দির (১৮৪০), রামকুমার সমাধি মঠ (১৯০২)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.০১%; পুরুষ ৫৬.২৩%, মহিলা ৪৯.৭৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফেনী সরকারি কলেজ (১৯২২), ফেনী জি এ একাডেমী (১৯৪৩), ফেনী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (১৯৬৩), ফেনী পিটিআই (১৯৫৭), ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (১৯৬২), সরকারি কমার্স কলেজ (১৯৬৫), সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ (১৯৭৯), ফেনী পাবলিক কলেজ (১৯৯৫), ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ (২০০৪), ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৬), ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল (১৯১৯), ফেনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), কালীদহ এসসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা (১৯২৩), গোবিন্দপুর ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: নয়াপয়গাম, আমার ফেনী; অর্ধ-সাপ্তাহিক: পথ; সাপ্তাহিক: গ্রামদেশ, হকার্স, মুহুরী, ফেনী বার্তা, ফেনী প্রবাহ, ফেনী সংবাদ, ফেনী খবর, ফেনী দর্পণ, ফেনী টাইমস্, আনন্দ তারকা, স্বদেশকণ্ঠ, অতএব, বৈকালী, ফেনীর আলো, উন্মোচন, দৃষ্টিপথ, নবীন বাংলা, আলোকিত ফেনী, নবকিরণ, ফেনীর রবি, জহুর, কলকণ্ঠ, আনন্দ তারকা, বর্ণমালা, ফেনীর স্বাস্থ্যকথা; পাক্ষিক: মসিমেলা, ফেনী চিত্র; মাসিক: আনন্দভৈরবী, সরাসরি, ঊর্মি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ১৭, মহিলা সংগঠন ২, শিশু একাডেমী ১, সংগীত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৩, নাট্যগোষ্ঠী ৭, সিনেমা হল ৩, শিশুপার্ক ১।

বিনোদন কেন্দ্র জেলা পরিষদ শিশুপার্ক এবং রাজাঝির দীঘি, বিজয় সিংহ দীঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২০.৯৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.২০%, শিল্প ১.০৭%, ব্যবসা ২১.৩৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.০৪%, চাকরি ১৯.৮১%, নির্মাণ ২.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.৪০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.৯৪% এবং অন্যান্য ১৩.৭০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৭১%, ভূমিহীন ৪৩.২৯%। শহরে ৫০.১৩% এবং গ্রামে ৫৮.৬১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ডাল, মিষ্টি আলু, মরিচ, আখ, চীনাবাদাম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, তাল, খেজুর।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১২, হাঁস-মুরগি ২৪০, দুগ্ধখামার ৫২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০০ কিমি; রেলপথ ২৭.৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইলমিল, স্টিলমিল, জুটমিল, অয়েলমিল, রাইসমিল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ঔষধ ফ্যাক্টরি, টাওয়াল্স ফ্যাক্টরি, লবন ফ্যাক্টরি, কোল্ডস্টোরেজ, চামড়াশিল্প, রাবারশিল্প।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, দারুশিল্প, সেলাই কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ৩। শর্শদি বাজার, রানীর হাট, বালিগাঁও বাজার, ছনুয়া বাজার এবং ট্রাংক রোডের রথযাত্রার মেলা ও মাস্টার পাড়ার বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  তোয়ালে, আম, লবণ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৮.৭২% (শহরে ৮৪.৩৭% ও গ্রামে ৫১.৩১%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.১৩%, পুকুর ১.৪৯%, ট্যাপ ৪.৬২% এবং অন্যান্য ৪.৭৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৮.৭৭% (গ্রামে ৬৪.৫১% ও শহরে ৮২.৫১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.০৪% (গ্রামে ২৫.৭৯% ও শহরে ১৩.৫২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.১৯% (গ্রামে ৯.৪০% ও শহরে ৩.৯৭%) পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলা সদর হাসপাতাল ১, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ১, ট্রমা সেন্টার ১, যক্ষ্মা হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, সিটিস্ক্যান ক্লিনিক ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, সেবা ইনস্টিটিউট ১, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র ৩, জেলা পশু হাসপাতাল ১, উপজেলা পশু হাসপাতাল ১, আঞ্চলিক পশু রোগ গবেষণা কেন্দ্র ১, কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৭৬ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফেনী সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।