কালী মীর্জা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কালী মীর্জা (১৭৫০-১৮২০)  টপ্পা রচয়িতা ও গায়ক। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম কালীদাস মুখোপাধ্যায়; কিন্তু দিল্লি ও লক্ষ্ণৌতে ফারসি ও উর্দু ভাষা শিক্ষালাভ, ওস্তাদি গানে তালিম গ্রহণ এবং শরিফ মুসলমানের মতো বেশভূষা পরিধান ও আচরণ পালনের জন্য তিনি ‘মীর্জা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।

কালী মির্জা টোলে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করে বারাণসীতে হিন্দুশাস্ত্র ও সঙ্গীতবিদ্যা অর্জন করেন। শিক্ষা-দীক্ষার দিক দিয়ে সেকালের কবিওয়ালাদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী। কালী মীর্জা ছিলেন একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি; কলকাতার গোপীমোহন ঠাকুর ছিলেন তাঁর পৃষ্ঠপোষক। তিনি কিছুকাল বর্ধমানের মহারাজা প্রতাপচন্দ্রের সভাগায়ক ছিলেন। রাজা রামমোহন রায়কে তিনি সঙ্গীতশিক্ষা দিয়েছেন বলেও জানা যায়। এ সবকিছু কালী মীর্জার পদমর্যাদা ও সম্মানকে সূচিত করে।

কালী মীর্জা টপ্পা রচনার মাধ্যমে সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন। নিধু গুপ্তের টপ্পার ধারার সঙ্গে ওস্তাদি পদ্ধতির সংযোগ সাধন করে তিনি এতে বৈচিত্র্য আনেন। তাঁর রচিত প্রেম ও ভক্তিভাবের গানগুলিও উচ্চ রস ও রুচির পরিচয় বহন করে। সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় তিনি খেউড়, কবির লড়াই ইত্যাদি ধারার প্রতি আকৃষ্ট হননি। কালী মির্জার গীতিলহরী (১৯০৪) নামক সঙ্গীতসংগ্রহে ২৩৬টি গান সঙ্কলিত হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বিভাজন অনুসারে সেগুলির মধ্যে ৬৫টি  শ্যামাসঙ্গীত, ৫৯টি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক, ১৪টি দেবদেবী বিষয়ক এবং ৯৮টি প্রণয়বিষয়ক গান আছে। এ ছাড়া দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বাঙ্গালীর গানে (১৯০৫) ৯১টি এবং সঙ্গীতরাগকল্পদ্রুম (১৯১৫) সঙ্কলনে তাঁর আরও কিছু গান আছে।

কালী মীর্জার শ্যাম ও শ্যামাবিষয়ক গানে ভক্তিরস এবং প্রণয়মূলক গানে লৌকিক প্রেমভাব প্রকাশিত হয়েছে। শেষোক্ত ধারার গানে গীতিকবিতার ব্যঞ্জনা ও মাধুর্য পরিস্ফুটিত। তাঁর ‘ওলো শুনলো সজনি/ আমার রোদনে পোহায় রজনী’, ‘মন যে কেমন করে, কেমনে কহিব তারে’, ‘পাসরিতে চাই তারে না যায় পাসরা’ প্রভৃতি টপ্পা ঢঙের প্রণয়গীতি সাহিত্য ও সঙ্গীত গুণে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।  [ওয়াকিল আহমদ]