পদ্মা নদী

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পদ্মা নদী (Padma River)  মূলত গঙ্গার নিম্ন স্রোতধারার নাম, আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায় গোয়ালন্দ ঘাটে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গম স্থলের পরবর্তী মিলিত প্রবাহই পদ্মা নামে অভিহিত। বাংলাদেশে গঙ্গার প্রবেশ স্থল (নবাবগঞ্জ জেলাধীন শিবগঞ্জ উপজেলার মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়ন) থেকে নদীটি পদ্মা নামে বহুল পরিচিত। এই নামটি (পদ্মা) গঙ্গা নদীর ডান তীর থেকে বিভক্ত হয়ে আসা ভাগীরথী নামক শাখাটির উৎসস্থল পর্যন্ত ব্যবহূত হয়, এবং হিন্দুমতে এই ধারাটিই গঙ্গার ধর্মীয় পবিত্রতা বহন করে। নদীজ ভূমিরূপ বিদ্যাগতভাবে যমুনার সাথে সঙ্গমস্থলের পূর্ব পর্যন্ত প্রবাহটিকে গঙ্গা নামে এবং সঙ্গমস্থল পরবর্তী নিম্নস্রোতধারাকে পদ্মা নামে অভিহিত করা অধিকতর সঠিক। পদ্মা কখনও কখনও ভুলবশত গঙ্গা নামে উল্লিখিত হয়। ব্রহ্মপুত্রের স্থানান্তরিত প্রবাহের ফলে এই নদীখাতের সৃষ্টির কারণে শুধুমাত্র নয় বরং বৎসরের অধিকাংশ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা গঙ্গার তুলনায় পদ্মার প্রবাহে অধিকতর ভূমিকা রাখে।

পদ্মা ১২০ কিমি দীর্ঘ এবং ৪ থেকে ৮ কিমি প্রশস্ত। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ-চাঁদপুর স্টিমার চলাচল পথের অধিকাংশই এই নদী জুড়ে। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ১৪ কিমি দূরে টেপাখোলার কাছে এর ডান তীর থেকে বেরিয়ে আসা ছোট একটি শাখার নাম ফরিদপুর খাল। আরও ৫০ কিমি ভাটিতে ডান তীর থেকে আড়িয়াল খাঁ নদীর সৃষ্টি হয়েছে। আরও ১৪ কিমি ভাটির দিকে বাম তীরবর্তী লোহাগঞ্জে, লোহাগঞ্জ খাল পদ্মায় পতিত হয়েছে এবং অপর তীর থেকে শাখা নদী ক্রিস্টানগরের উৎপত্তি হয়েছে। এ স্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার নিম্নে ডান তীর থেকে শোশাখাল এবং নড়িয়াখাল উৎপন্ন হয়েছে, পরে দুটি ধারা মিলিত হয়ে একটি স্রোতধারা হিসেবে মাদারিপুরের দক্ষিণে আড়িয়াল খাঁয় পতিত হয়েছে। সুরেশ্বর থেকে ৫ কিমি দূরে ঈষৎ জল মগ্ন চড়া ও চরের স্থানান্তরের জটিল একটি অঞ্চলে পদ্মা মেঘনার সাথে মেলে। নিম্ন মেঘনা মূলত পদ্মার একটি ধারাবাহিকতা।

গঙ্গা-পদ্মা হল প্রধান জলশক্তি (hydrodynamic) প্রণালী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ ভূমি গড়ে তুলেছে যা দেশের একটি বিরাট অংশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বৃহত্তর একটি অংশ অধিকার করে আছে। গাঙ্গেয় বদ্বীপের উন্নয়নের দীর্ঘ ইতিহাসে, নদীটি দক্ষিণপূর্ব দিকে সরে এসেছিল এবং বঙ্গের নিম্নভূমির বর্তমান অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে গঙ্গা বদ্বীপের জলবিদ্যা এবং নিষ্কাশন প্রণালী প্রমত্তা গঙ্গা এবং বঙ্গ অববাহিকার নদীজ জল সংস্থান ব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা নদীর বদ্বীপ মোহনা প্রণালীর মাধ্যমে এইসব নদী প্রণালী সমূহের মিলিত অপসারিত পানি নিষ্কাশনের পরিমাণ গড়ে ৩৫,০০০ কিউমেক। অবশ্য, বর্ষা মৌসুমে পদ্মার অপসারণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫০,০০০ কিউমেক এ দাঁড়ায় এর সাথে সাথে পলি বহনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। পদ্মার নিম্ন পর্যায়ের অপসারণের পরিমাণ ১৫,০০০ কিউমেক, এবং এ সময়ে স্বাভাবিকভাবে খুব সামান্য পরিমাণ পলি বাহিত হয়। নদীটির বদ্বীপ অংশে প্রশস্ততার পরিসীমা ১.৬ থেকে ৮ কিমি এবং মাঝেমাঝে এর বিনুনী বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় যদিও এটি একটি অাঁকাবাঁকা নদীখাত।

[মাসুদ হাসান চৌধুরী]

আরও দেখুন গঙ্গা; গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী।