লৌহজং উপজেলা

লৌহজং উপজেলা (মুন্সিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৩০.১২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৪´ থেকে ২৪°৩২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শ্রীনগর ও সিরাজদিখাঁন উপজেলা, দক্ষিণে জাজিরা উপজেলা, পূর্বে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা, পশ্চিমে শিবচর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬৭৭৪৩; পুরুষ ৮২৫০২, মহিলা ৮৫২৪১। মুসলিম ১৫২৯৭২, হিন্দু ১৪৭৩৯, বৌদ্ধ ১৫ এবং অন্যান্য ১৭।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা।

প্রশাসন লৌহজং থানা গঠিত হয় ১৯১৬ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১০ ১১৫ ১১০ ৫২৩৮ ১৬২৫০৫ ১২৮৯ ৫২.৯ ৫৫.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.২৩ ৫২৩৮ ৪২৫৮ ৫২.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কনকসার ৫৫ ১৯৮২ ১০১৭১ ১০৬৭৮ ৫৬.০৪
কলমা ৪৭ ৩১১৯ ৯০৪৯ ৯৬৯৫ ৫৮.০৫
কুমারভোগ ৭১ ১৮২৪ ৫৭৮৯ ৬০১৯ ৪৮.৫২
খিদিরপাড়া ৬৩ ৩৭৩৮ ১০৫৯৩ ১০৬৯০ ৫৫.৭৩
গাঁওদিয়া ৩১ ৩৭৩১ ৯২৪৮ ৯৭৩১ ৫৪.৭০
বেজগাঁও ০৭ ২০১২ ৬৯৪৮ ৭৩২৭ ৫২.৮৬
বৌলতলী ১৫ ২০০৪ ৫৯৫৫ ৬০০৮ ৫৯.০৪
মেদিনী মন্ডল ৮৭ ২৪৩৬ ১২১৭০ ১২২৩৬ ৫৬.৩৯
লৌহজং তেওটিয়া ৯৪ ২৭৯৫ ৪২৫৭ ৩৯২১ ৪৫.৯১
হলদিয়া ৩৯ ২১৯০ ৮৩২২ ৮৯৩৬ ৫৭.৪৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খিদিরপাড়া মসজিদ, মধ্যপাড়া মসজিদ, আল-মনিদা জামে মসজিদ, সুজানগর জামে মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা লৌহজং থানায় পাকসেনাদের ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র হস্তগত করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ২৫ অক্টোবর দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে পাকবাহিনীর ৭ টি নৌকা ডুবে যায় এবং ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। নভেম্বর মাসে শ্রীনগর-লৌহজং খাল দিয়ে যাওয়ার পথে পাকসেনাদের উপর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে বহু পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। পরবর্তীতে পাকসেনারা রাতের অন্ধকারে গোপনে লৌহজং ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৩০ নভেম্বর লৌহজং শত্রুমুক্ত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২২০, মন্দির ১০, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: ঘোড়দৌড় জামে মসজিদ, সাতঘরিয়া মসজিদ, সোসাইটি জামে মসজিদ, হাট ভোগদিয়া জামে মসজিদ, মালির অঙ্ক জামে মসজিদ, বেজগাঁও কালীমন্দির, কনকসার দুর্গা মন্দির, কদম শাহের মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.২%; পুরুষ ৫৫.৩%, মহিলা ৫২.৯%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭১, কিন্ডার গার্টেন ৫, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাজির পাগলা এ.টি ইনস্টিটিউশন (১৯০১), কলমা এল.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), হলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), লৌহজং পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), মেদিনী মন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৩), লৌহজং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), বৌলতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৭০), কলমা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), কাজিরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫), বাসুদিয়া মাদ্রাসা, জাংগালিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বাসিরা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ১, ক্লাব ৪৫, মহিলা সংগঠন ৫, খেলার মাঠ ২০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩২.১৬%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৬%, শিল্প ০.৯৬%, ব্যবসা ৩১.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৩%, চাকরি ৯.৯৪%, নির্মাণ ২.২৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৬১% এবং অন্যান্য ১১.৩১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৬.৫০%, ভূমিহীন ৬৩.৫০%। শহরে ১৬.৩৭% এবং গ্রামে ৩৭.১১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পাট, সরিষা, গম, ছোলা, মটর, তিল, আখ, ধনে, মরিচ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, ডালিম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫, গবাদিপশু ৫৯, হাঁস-মুরগি ২৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২০.০৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭৭.২৬ কিমি; নৌপথ ৩২ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, ররফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, বিড়ি কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, হস্তশিল্প, তামাশিল্প, কাঁসাশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৩। গাঁওদিয়া বাজার, কলমা বাজার, দিঘলী হাট, কনকসার হাট এবং গাঁওদিয়া মেলা, কুকুটিয়ার বৈশাখী মেলা ও ঝুলন মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আলু, পাট, তামা ও কাঁসার তৈজসপত্র, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৫৭.৯৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৮৩%, ট্যাপ ০.৩৬%, পুকুর ২.০৬% এবং অন্যান্য ৩.৭০%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৯.০৪% (গ্রামে ৫৯.৬১% এবং শহরে ৪০.৩১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৯৫% (গ্রামে ৩৪.৭০% এবং শহরে ৪৩.৩২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৬.০০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ  ১৯৯৫ সালের ৯ এপ্রিল বৌলতলী ইউনিয়নের পয়সা গ্রামে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, কারিতাস, ব্র্যাক, প্রশিকা, কেয়ার, এসডো।  [হেলেন নওশীন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লৌহজং উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।