সিভিল সোসাইটি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সিভিল সোসাইটি  নাগরিক অধিকারের ধারণার সঙ্গে সিভিল সোসাইটিকে গুলিয়ে ফেলা চলে না। পাকিস্তান আমলে, এমনকি ঔপনিবেশিক শাসনেও নাগরিক অধিকার আন্দোলন ছিল। ঐতিহ্যগতভাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ভিত্তিভূমির উপরই বরাবর ব্যক্ত ও সংগঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা। সিভিল সোসাইটির ধারণার প্রথম উদ্ভাবক ডব্লিউ. ফ্রেডরিক হেগেল (১৭৭০-১৮৯১) নাগরিক অধিকার সম্বন্ধে নতুন ধারণা দেন এবং সেখানে ‘সিভিল সোসাইটি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। সিভিল সোসাইটি বলতে তিনি এমন একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজকে বোঝাতে চেয়েছেন, যা যুক্তিসিদ্ধ ও পরস্পর বিরোধী ভাবধারার সমন্বয় ও দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের বুর্জোয়া শক্তিকে প্রতিস্থাপন করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘সিভিল সোসাইটি’ অভিধাটি নতুন অর্থে ব্যবহূত হয়। এটিকে তখন ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপে চালিত একটি স্বশাসিত সমাজ ভাবা হতো। সিভিল সোসাইটির কোন সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই, তবে একটি ঐকমত্য আছে যে এটি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি ঐচ্ছিক সংগঠন। মনে করা হয় যে, স্বশাসিত পদ্ধতিতে পরিচালিত জনসংগঠন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের চেয়ে অনেক বেশি কল্যাণপ্রসূ হতে পারে।

১৯৭৫ সাল থেকে অনেক বিদেশী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে কর্মকান্ড পরিচালনার অনুমতি লাভ করার পর দেশে সিভিল সোসাইটি আন্দোলন গতিশীলতা লাভ করে। এছাড়া অনেক স্থানীয় বেসরকারি সংস্থাও গড়ে ওঠে যেগুলো এক পর্যায়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (এডাব) নামে একটি কেন্দ্রীয় সমিতি গঠন করে।

সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত সংস্থা হিসেবে সুস্থ জনজীবনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানে মুখ্য ভূমিকা পালনের দাবি করে। বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটির কর্মীরা অভিন্ন সমস্যাবলির সমাধান, সামগ্রিক স্বার্থরক্ষা এবং যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে অধিকার সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের স্বেচ্ছামূলক অনেক সমিতি গঠনের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যৌথ সমস্যার সমাধান এবং জনকল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত সরকারি নীতিমালা গঠন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটি রাষ্ট্র ও বাজার সংস্থাগুলোর পাশাপাশি কাজ করারও দাবি জানায়।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রকৃষ্ঠতম নজীর হলো দেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলো (এন.জি.ও)। সর্বসাধারণের উন্নতি বিধান এবং টেকসই উন্নতির জন্য গৃহীত কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে অথবা সরকারের সহযোগিতায় অংশগ্রহণ হচ্ছে সিভিল সোসাইটির আদর্শ। সরকারের সহযোগিতা কামনা একটি স্থানীয় বাস্তবতা। বাংলাদেশে বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষোভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং সেজন্য বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি সরকারি সহযোগিতাকে অত্যাবশ্যক মনে করে, যা আসলে গোটা বিশ্বের সিভিল সোসাইটি আন্দোলনের আদর্শের পরিপন্থী।

নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও যোগাযোগ বিপ­বের কল্যাণে সিভিল সোসাইটি আন্দোলন বর্তমানে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটি হলো বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ও সহযোগিতার এক বিশ্ব-আন্দোলন। এই আন্দোলন এখন স্থানীয় সমিতি থেকে বিশ্বসঙ্ঘ পর্যন্ত বিস্তৃত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির আদর্শ বিশ্ব সিভিল সোসাইটির আদর্শের সঙ্গে এই অর্থে ততটা সঙ্গতিপূর্ণ নয় যে, বাংলাদেশের অনেকগুলো সিভিল সোসাইটিকে কোনো-না-কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। এসব দুর্বলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি জনগণের অধিকার সংরক্ষণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।  [সিরাজুল ইসলাম]