লেজার প্রযুক্তি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

লেজার প্রযুক্তি (Light Amplification by Stimulated Emission of Radiation/LASER) আলোর সরু রশ্মি উৎপাদনের জন্য এমন একটি যন্ত্র, যার মাধ্যমে উৎপন্ন রশ্মি ছড়িয়ে যা পড়ে বহুদূর অতিক্রমে সক্ষম এবং কেন্দ্রীভূত হয়ে অপরিমেয় শক্তি উৎপন্ন করতে সমর্থ। বেতার তরঙ্গ অপেক্ষা একটি লেজার বীম অনেক বেশি তথ্য বহন করতে পারে বলে এই প্রযুক্তি যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ­ব সাধন করতে পারে। কাটা, ড্রিলিং/খনন, ঝালাই, উপগ্রহ ট্র্যাকিং, চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞান গবেষণা, কমপ্যাক্ট ডিস্ক ও বার কোড পঠন, সার্জারি ইত্যাদি কর্মকান্ডে লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৫৮ সালে চার্লস টাউনস এবং Arthur Schawlow নামের দুই বিজ্ঞানী লেজারের ধারণাটির সূত্রপাত ঘটান। ১৯৬০ সালে Theodore Maiman প্রথম অপারেশন লেজার (রুবী লেজার) তৈরি করেন। লেজার প্রযুক্তির উৎপাদন ও তত্ত্বাবধান খুবই ব্যয়বহুল। তারপরও লেজারের উপকারিতা ও ক্ষমতা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও অবহেলিত নয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেজার প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে।

লেজারের সবচেয়ে ব্যাপক ব্যবহার তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারকরণ কাজে। উদাহরণস্বরূপ সিডি (কমপ্যাক্ট ডিস্ক) রাইটার-এর মাধ্যমে সিডি-তে (আলোক সংবেদনশীল রং সম্পন্ন একটি ডিস্ক) ডাটা লিখতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন লেজার ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক সিডি পে­য়ার এবং সিডি রম ৭৮০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অল্প কয়েক মিলি-ওয়াট সম্পন্ন নিঃসরণশীল স্বল্প ক্ষমতার ডায়োড লেজার ব্যবহার করে। ডিভিডি (ডিজিটাল ভিডিও ডিস্ক) অপেক্ষাকৃত স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে নিঃসরণশীল এমন লেজার ব্যবহার করে, যা এমনকি উচ্চতর ঘনত্বেও তথ্যকে পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ। বাংলাদেশে এ সকল যন্ত্রের ব্যবহার উলে­খযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নির্মাণ ও পূর্তকর্ম সংক্রান্ত প্রয়োগে ভূমি বা পানির উপর তীক্ষণ, উজ্জ্বল, নিখুঁতভাবে সরলরেখাকে সীমা নির্দেশ করার প্রয়োজনে লেজার লাইন জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। দৃশ্যমান ডায়োড লেজারকে কাজে লাগিয়ে অপটিক্যাল বার কোড পাঠ করা যায়। উৎপন্ন দ্রব্য, বইপত্র, পার্সেল প্রভৃতির গায়ে ছাপানো বার কোড দ্রুত পড়ার ক্ষেত্রে এবং ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরগুলিতে, বইয়ের দোকানে, ডাকবিভাগে লেজার প্রযুক্তি ব্যবহূত হয়।

অপটিক্যাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি পাতলা সিলিকা অপটিক্যাল ফাইবারের ভিতর একটি মড্যুলেটেড লেজার বীমকে দীর্ঘ দূরত্বের মধ্যে তথ্য (ভয়েস, ফ্যাক্স, ভিডিও বা কম্পিউটার তথ্য/ডাটা) প্রেরণ করতে ব্যবহার করা হয়। প্রতি অপটিক্যাল ফাইবারে তথ্য প্রেরণ হার প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজার মেগাবাইট। বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং টেলিগ্রাফ ও টেলিযোগাযোগ বোর্ড তাদের তথ্য প্রেরণের প্রয়োজন মেটাতে ইতিমধ্যে অল্প কিছু অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট)-এ একটি অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক কাঠামো আছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে সাগরের তলদেশ দিয়ে সিংগাপুর ও বাংলাদেশের মধ্যকার একটি উচ্চ ক্ষমতার অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশকে গ্লোবাল অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

লেজার প্রযুক্তি প্রথম থেকে ব্যবহার করা হয়েছে শল্য চিকিৎসা ও চক্ষুরোগ চিকিৎসায়। আর্গন লেজার দ্বারা উৎপাদিত উচ্চ ক্ষমতাকে ব্যবহার করা যেতে পারে চোখের রেটিনা পুনঃসংযুক্ত করা বা এর ধমনী/শিরাগুলোর রেটিনোপ্যাথি চিকিৎসায়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র এবং জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণায় লেজার প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে  হিলিয়াম-নিওন লেজারের একত্রিত আলোকরশ্মি গুচ্ছকে (coherent beams) ব্যবহার করা যেতে পারে একটি বস্ত্তর সত্যিকারের ত্রিমাত্রিক ছবি (হলোগ্রাম হিসেবে পরিচিত) নিতে। পরবর্তীতে লেজারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বস্ত্তকে পুনঃসৃষ্টি করতে হলোগ্রামকে আলোকিত করা হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ কয়েক বছর আগে এই ধরনের হলোগ্রাম সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশে লেজারের ব্যবহার যদিও আপেক্ষিকভাবে সাম্প্রতিক এবং সীমিত, তবে এর ব্যবহার দ্রুত লয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা প্রত্যাশিত যে, এই প্রযুক্তির অনেক নতুন ও উত্তেজনাকর প্রয়োগ ভবিষতে সম্ভব হবে।  [কাজী মনোয়ার আবেদিন]

আরও দেখুন  অপটিক্যাল ফাইবার