হেলেন, লুৎফুন নাহার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

হেলেন, লুৎফুন নাহার (১৯৪৭-১৯৭১)  শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবি। ১৯৪৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাগুরায় তাঁর জন্ম। পৈত্রিক নিবাস মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে। পিতা ফজলুল হক ছিলেন মাগুরা ন্যাপ ও কৃষক সমিতির নেতা এবং মাতা সফুরা খাতুন। লুৎফুন নাহার হেলেন ১৯৬৩ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬৫ সালে মাগুরা কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি মাগুরা গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

লুৎফুন নাহার ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষা আন্দোলন ও স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। মাগুরা কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্র সংসদের মহিলা শাখার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মাগুরা মহকুমা শাখার সহ-সভানেত্রী ছিলেন। তিনি উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লুৎফুন নাহার তাঁর ভাইদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানা সদরে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে আনার পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। জুলাই মাসের শেষের দিকে হেলেন মোহাম্মদপুরে আসেন এবং স্থানীয় জনগণকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। হেলেন রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর ভূমিকা ও গতিবিধি সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের অবহিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। এছাড়া তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা ও খাবার সরবরাহ করা এবং মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে মোহাম্মদপুর থানার দক্ষিণাঞ্চলের এক গ্রামে অবস্থানকালে রাজাকার বাহিনী তাঁর শিশুপুত্র সহ হেলেনকে ধরে নিয়ে মাগুরা শহরে সেনাক্যাম্পে হস্তান্তর করে।  পরবর্তী সময়ে তাঁর শিশুপুত্রকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেও তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ৫ অক্টোবর লুৎফুন নাহার হেলেনকে শারীরিক নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পাকসেনারা তাঁকে জিপের সাথে বেঁধে জিপ চালিয়ে মাগুরা জেলা শহর থেকে দেড় মাইল দূরে নবগঙ্গা নদীর ডাইভারশন ক্যানেলে নিয়ে যায়। তাঁর মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে লুৎফুন নাহার হেলেনের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।  [লিলীমা আহমেদ]