সালিশ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সালিশ অধুনা রহিত সালিশি আইন, ১৯৪০-এর বিধান অনুযায়ী বিবদমান পক্ষগুলোর নিযুক্ত সালিশকারী কিংবা চুক্তির শর্তানুযায়ী তারা সেই সালিশকারী নিয়োগে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে আদালতের নিযুক্ত সালিশকারী একটা রোয়েদাদ প্রদানের মধ্য দিয়ে বিবদমান পক্ষগুলির বিরোধ অনানুষ্ঠানিকভাবে মিটিয়ে ফেলতেন। রোয়েদাদ দিতে গিয়ে সালিশকারী অসদাচরণ করেছে এমন কিছু প্রমাণিত না হলে আদালত সেই রোয়েদাদ অনুযায়ী ডিক্রি জারী করতো। সালিশি আইন, ২০০১ এর আওতায় বিবদমান পক্ষগুলোর বিরোধে সালিশের পরিধি আন্তর্জাতিক বানিজ্যিক বিষয় অবধি প্রসারিত করা হয়েছে যার সুরাহা সালিশি আইন, ১৯৪০-এর অধীনে ছিল না। নূতন আইনে একদিকে বাংলাদেশের একজন নাগরিক বা সংস্থা এবং অন্যদিকে একজন বিদেশী, বিদেশী অভিবাসী, বিদেশী কোম্পানি, বিদেশীদের নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি বা ফার্ম এবং বিদেশী সরকারের মধ্যে আন্তর্জাতিক  বানিজ্যিক বিষয়ে সালিশের সুযোগ আছে। তেমনি  ব্যবস্থা আছে সালিশি রোয়েদাদকে আদালতের ডিক্রি হিসাবে জারী করার। শুধু তাই নয়, দেওয়ানি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী আদালত নির্দেশিত কতিপয় শর্তসাপেক্ষে বিদেশের সালিশি রোয়েদাদকে আদালতের ডিক্রিরূপে জারী করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ আইনে। আইনে সালিশি চুক্তি থেকে উদ্ভূত বিরোধ ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিবদমান পক্ষগুলির নিযুক্ত একক কিংবা একাধিক সালিশকারীকে নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির ব্যবস্থাই শুধু রাখা হয়নি; উপরন্তু সালিশি চুক্তিতে অনুরূপ সংখ্যক সালিশকারীর উল্লেখ না থাকলে সে ক্ষেত্রে তিনজন সালিশকারীর সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তিন সালিশকারী নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের ব্যাপারে পক্ষগুলি যদি একমত না হয় সেক্ষেত্রে প্রত্যেক পক্ষ একজন সালিশকারী নিয়োগ করবে এবং এ ভাবে নিযুক্ত সালিশকারীরা মিলে তৃতীয় একজন সালিশকারী নিয়োগ করবে এবং তিনিই হবেন সালিশ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান। পক্ষান্তরে বিবদমান পক্ষগুলি যদি এতে রাজী না হয় তাহলে তারা সমসংখ্যক সালিশকারী নিয়োগ করবেন এবং এই সালিশকারীরা সম্মিলিতভাবে অতিরিক্ত একজন সালিশকারী নিয়োগ করবেন যিনি সালিশি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। অপর পক্ষ থেকে অনুরোধ পাওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে একক সালিশকারী নিয়োগের ব্যাপারে কিংবা পক্ষগুলোর নিয়োগকৃত সালিশকারীদের কোন একজনের নিয়োগের ব্যাপারে একপক্ষ যদি একমত হতে না পারে কিংবা যেকোন পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে সালিশকারীরা তাদের নিযুক্তির দিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে যদি তৃতীয় সালিশকারী নিয়োগে একমত হতে না পারে সে ক্ষেত্রে নিয়োগের সম্মত পদ্ধতির অনুপস্থিতিতে দেওয়ানি আদালত এই তৃতীয় সালিশকারীর নিয়োগ দেবেন। তবে ব্যতিক্রম হলো আর্ন্তজাতিক বানিজ্যিক সালিশীর ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি অথবা প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের অপর যেকোন বিচারক এরূপ সালিশকারী নিয়োগ করবেন। আইনে আরোও বিধান আছে যে, সালিশি ট্রাইব্যুনালের যেকোন পক্ষকে যেকোন অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার যোগ্যতা থাকবে এবং এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না। বিবদমান পক্ষগুলির সম্মতিক্রমে সালিশি ট্রাইব্যুনাল সালিশি কার্যক্রমের যেকোন পর্যায়ে মধ্যস্থতা, আপোস বা অন্য কোন উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন। সালিশী ট্রাইব্যুনালের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নে তার কাছে রিপোর্ট পেশ করার জন্য বিশেষজ্ঞ বা আইন উপদেষ্টা এবং টেকনিক্যাল বিষয়ে তাকে সহায়তাদানের জন্য অ্যাসেসর নিয়োগ করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা থাকবে। আন্তর্জাতিক বানিজ্যিক সালিশির ক্ষেত্রে প্রদত্ত রোয়েদাদ বাদে এই আইনের অধীনে প্রদত্ত যেকোন সালিশি রোয়েদাদের বেলায় সেই রোয়োদাদ প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যেকোন পক্ষের আবেদনক্রমে দেওয়ানি আদালত সেই রোয়েদাদ বাতিল করতে পারেন। আর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বানিজ্যিক সালিশির ক্ষেত্রে প্রদত্ত রোয়েদাদের বেলায় সেই রোয়েদাদ বাতিল করতে পারেন হাইকোর্ট বিভাগ। রোয়েদাদ বাতিল করার বা বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানানোর কিংবা বিদেশী সালিশি রোয়েদাদ কার্যকর করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে দেওয়ানি আদালতের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করা যেতে পারে।  [কাজী এবাদুল হক]