আলিকদম উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৮:৫৯, ১৭ জুন ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আলিকদম উপজেলা (বান্দরবান জেলা)  আয়তন: ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°২১´ থেকে ২১°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ ৯২°১৫´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লামা উপজেলা, দক্ষিণে মায়ানমারের আরাকান রাজ্য, পূর্বে থানচি উপজেলা, পশ্চিমে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। উপজেলাটি বান্দরবানের পার্বত্য অঞ্চলের অদূরে মোটামুটি সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত। এ উপজেলার থাইংকিয়াং তাং, রুংরাং তাং ও সারা তাং পাহাড় উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ৩৫২৬৪; পুরুষ ১৯২৯০, মহিলা ১৫৯৭৪। মুসলিম ২০৭৩৭, হিন্দু ১৫১৭, বৌদ্ধ ২০৩০, খ্রিস্টান ১০৯১৭ এবং অন্যান্য ৬৩। এ উপজেলায় চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয়  প্রধান নদী: মাতামুহুরী

প্রশাসন ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলিকদম থানা গঠিত হয়। ১৯৮৩ সালে এটিকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৫৬ ১৩১৭৩ ২২০৯১ ৪০ ৪১.৮ ১৮.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৩.৩১ ১৩১৭৩ ৫৬৫ ৪১.৭৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলিকদম ৩১ ২৬২৪০ ১০৩০১ ৮৪৬৫ ২৫.৮৮
চোখইয়ং ৬৩ ১৯২৬৪০ ৮৩২০ ৭৩৭৭ ২৪.৫৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি আলিকদমসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃহত্তর অংশ নবম শতাব্দীতে আরাকানদের অধীন ছিল। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার সুলতান জালালউদ্দিন এবং খোদাবক্স বংশ অস্থায়ীভাবে আলিকদমে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে আরাকানদের শাসন বিঘ্নিত হয়। ১৭৫৬ সালে মুগলরা ওই অঞ্চল জয় করে নিলে সেখানে আরাকানদের শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। আরাকানদের শেষ শাসক কং হ্লা প্রুকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় এবং তাঁকে সপরিবারে পার্বত্য অঞ্চল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৮, মন্দির ৫, গির্জা ৩, কেয়াং ১৭।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৭.২%; পুরুষ ৩১.৭%, মহিলা ২১.৬%। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৪, কিন্ডার গার্টেন ২, মাদ্রাসা ২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আলিকদম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আলিকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলিকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাইছড়ি রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাব ১, লাইব্রেরি ১, সিনেমা হল ১, সংগীত একাডেমী ১, অডিটরিয়াম ১, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১, এতিমখানা ২।

দর্শনীয় স্থান মেরাইনডং পাহাড়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ৯.৩০%, ব্যবসা ১২.৫২%, চাকরি ৫.২৯%, নির্মাণ ০.৩৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.০৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.৪৮% এবং অন্যান্য ১২.৪৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ২৯.০৩%, ভূমিহীন ৭০.৯৭%। শহরে ২৬.৩১% এবং গ্রামে ৩০.৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তামাক, বাদাম, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদিব কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে।

শিল্প ও কলকারখানা প্লাইউড ফ্যাক্টরি, টোবাকো ফ্যাক্টরি, স’মিল, ইটভাটা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার  আলিকদম সদর হাট ও তাইনছড়ি হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  কলা, বাঁশ, আদা, হলুদ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.২৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৪৪.২৮%, ট্যাপ ১.৬২%, পুকুর ১৪.৫৫% এবং অন্যান্য ৩৯.৫৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮.২৬% (গ্রামে ৪.৪৪% এবং শহরে ১৪.৯২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬১.৭১% (গ্রামে ৫৯.৪৩% এবং শহরে ৬৫.৬৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩০.০৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, বিএনকেএস।  [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আলিকদম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।