ভোঁদড়

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৫০, ২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ভোঁদড় (Otter)  Carnivora বর্গের Mustelidae গোত্রের কয়েক ধরনের আধাজলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের শরীর লম্বাটে, লেজ পুরু, লিপ্তপদী। সাঁতারের সময় কান ও নাকের ফুটো বন্ধ থাকে। নাকের আগার গোঁফ লম্বা ও সংবেদনশীল বিধায় পানির নিচে শিকার সন্ধানের সহায়ক। এই গোত্রে আরও আছে ব্যাজার, নেউল বা বেজি। বাংলাদেশে ভোঁদড়ের তিনটি ও ব্যাজারের একটি প্রজাতি আছে।

ভোঁদড়

অস্ট্রেলিয়া ছাড়া ভোঁদড় আছে সব মহাদেশেই। Mustelidae গোত্রের সকল সদস্যের মধ্যে ভোঁদড়ই সর্বাধিক জলচর। লিপ্তপদের সাহায্যে এরা ভালই সাঁতার কাটে এবং একবারও না ভেসে পানির নিচে একনাগাড়ে আধ কিলোমিটার যেতে পারে। মাছ, পানির ব্যাঙ, কাঁকড়া ও অন্যান্য বড় আকারের জলজ অমেরুদন্ডীরাই এদের প্রধান খাদ্য, যাদের এরা কখনও কখনও দলবদ্ধভাবে শিকার করে। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সামুদ্রিক ভোঁদড় হলো হাতিয়ার ব্যবহারক্ষম দুর্লভ স্তন্যপায়ীর অন্যতম, যারা সামনের পা দিয়ে পাথর টেনে তুলে মজবুত পেষণদন্তে সেগুলি টুকরা করে তার উপর শামুক ঝিনুকের শক্ত খোল রেখে ভেঙে থাকে। পাথরগুলি তারা ভাসমান অবস্থায় বুকের উপর রাখে ও কামারের নোহাইর মতো ব্যবহার করে। এরা সমাজবদ্ধ প্রাণী ও ক্রীড়াশীল; একত্রে দৌড়াদৌড়ি করে, কাদার ঢাল বেয়ে নামে, মনে হয় সবই নেহাৎ আনন্দের জন্য। কোন কোন প্রজাতির ভোঁদড় পানিতে পাথর ছুঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়ে সেগুলি তুলে আনে সম্ভবত খেলাচ্ছলেই। এরা বুদ্ধিমান, অনুসন্ধিৎসু ও বন্ধুবৎসল, সহজেই পোষ মানে। সুন্দরবন ও দক্ষিণপশ্চিমের জেলাগুলিতে কেউ কেউ পোষা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করে। বাংলাদেশের তিন প্রজাতির ভোঁদড়ের মধ্যে একটি অতি বিপন্ন, অর্থাৎ বিলুপ্তির মুখোমুখি এবং বাকি দুটিও বিপন্ন। নিচে এগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:

Aonyx cinerea নামের ভোঁদড় উদবিড়াল নামে পরিচিত। ছোটখাটো এই ভোঁদড়ের থাবা খুব ছোট, লুপ্তপ্রায়। পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক ও পেট ফ্যাকাশে এবং চিবুক ও গলা সাদাটে। গায়ের চামড়া মসৃণ। মাথাসহ দেহদৈর্ঘ্য ৪০-৬৪ সেমি, লেজ ২৪-৩৫ সেমি, ওজন ৩-৬ কেজি। দেশের পুর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকার নদী, খাল, বিল, পুকুরের পাশে, প্লাবনভূমি ও খানাখন্দে এবং উপকূলীয় জেলায় এদের দেখা যায়। আবাসভূমি ধ্বংস ও পরিবর্তনই বিপন্নতার মূল কারণ। বাংলাদেশ ছাড়াও এরা আছে দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরে।

Lutra lutra ইউরেশিয়ান ভোঁদড় নামেও পরিচিত। এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে অতি বিপন্ন। লম্বাটে পাতলা শরীর, লোম গাঢ় বাদামি, চকচকে। নিচের অংশ ফ্যাকাশে, উপরের দিক ধূসর। লম্বা ও পেশীবহুল লেজ পাশে চাপা। মুখের সামনের লোম নাকের উপর অাঁকাবাঁকাভাবে ছড়ানো। মাথাসহ দেহদৈর্ঘ্য ৭৫ সেমি, লেজ ৪৫ সেমি, ওজন প্রায় ১০ কেজি। প্রজননকাল ছাড়া একা থাকে। মাছ শিকারের জন্য সাধারণত রাতের বেলা গোটা পরিবার একত্র হয়। মাছই প্রধান খাদ্য, তবে কাঁকড়া, চিংড়ি, ব্যাঙ, ইঁদুর, জলচর পাখি, কখনও উদ্ভিজ্জ খাবারও খায়। গর্ভকাল ২ মাস, জলাশয়ের কিনারের গর্তে ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। থাকে বনাঞ্চল, নদী, খাল ও বিলে, উপকূলীয় জেলাগুলির  হ্রদ ও পুকুরে। আবাসস্থলের ধ্বংস ও পরিবর্তনের জন্যই প্রধানত বিপন্ন। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ার অধিকাংশ স্থানে আছে।

Lutra perspicillata  দেখতে সাধারণ ভোঁদড়ের মতো, তবে লোম মসৃণ ও চকচকে। লেজের আগা চ্যাপ্টা। মুখের সামনের দিকের লোম নাকের উপর একটি সরল রেখায় শেষ হয়েছে। রং কালো থেকে পিঙ্গল বাদামি ধূসর বা ফ্যাকাশে বাদামি। কেউ কেউ মাছ ধরার জন্য এদের পোষ মানায়। হ্রদ ও নদীর তীর, বড় পুকুর, খাল, প্লাবনভূমি, খাড়ি ও মোহনার কিনারে থাকে। পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় ও উপকূলীয় জেলায় দেখা যায়। আবাসস্থলের ধ্বংস ও পরিবর্তনের জন্যই বিপদগ্রস্ত। ভারত, ইরাক, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন (দক্ষিণ-পূর্ব), ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনাইতেও আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের টেকনাফে এক সময় ব্যাজার দেখা যেত।  [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]