ট্যারিফ কমিশন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:১৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ট্যারিফ কমিশন পাকিস্তান ট্যারিফ কমিশনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার উত্তরবর্তী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নতুন নাম হয় ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮ জুলাই ১৯৭৩ তারিখের সিদ্ধান্তবলে উক্ত মন্ত্রণালয়ের একটি অধীনস্থ অধিদপ্তর হিসেবে কাজ শুরু করে। ১৯৯২ সনের নভেম্বরে উক্ত কমিশন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন আইন ১৯৯২ (১৯৯২ সনের ৪৩ নম্বর আইন)-এর অধীনে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন নামে পুনর্গ©র্ঠত হয়। বর্তমানে এটি দেশীয় শিল্পসমূহকে অসম প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা ও যথাযথ সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর প্রধান হচ্ছেন সরকারের সচিব পর্যায়ের মর্যাদাসম্পন্ন একজন চেয়ারম্যান। কমিশন তিনটি শাখায় বিভক্ত: বাণিজ্য নীতিমালা, বাণিজ্য প্রতিকার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শাখা। প্রতিটি শাখা একজন সদস্য দ্বারা পরিচালিত। এছাড়াও একটি প্রশাসনিক শাখা আছে। এই শাখা কমিশনের সচিব দ্বারা পরিচালিত। কমিশনের মোট জনবল ১১৬ (এপ্রিল ২০১০)। একজন চেয়ারম্যান, তিনজন সদস্য ও একজন সচিব ছাড়াও রয়েছেন ৩৫ জন কর্মকর্তা এবং ৭৬ জন কর্মচারী। কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সরকারের নিকট সুপারিশ করা। বিষয়গুলি হলো: দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষা, শিল্পসম্পদ উৎপাদনে প্রতিযোগিতায় উৎসাহ প্রদান, শিল্পসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দেশি পণ্যের রপ্তানি উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে দেশীয় শিল্প সম্পদ ব্যবহারের উন্নয়ন এবং ডাম্পিং, বিদেশি পণ্যের আমদানি ও বিক্রয়ের ব্যাপারে অসাধু পন্থার প্রতিরোধকল্পে পদক্ষেপ গ্রহণ। কমিশন কার্য সম্পাদনে চারটি বিষয় যথাযথভাবে বিবেচনা করে: বাজার অর্থনীতি, অর্থনৈতিক পরিবেশ, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও শুল্ক চুক্তি এবং জনমত। এছাড়া কমিশন তার পেশকৃত সুপারিশ বাস্তবায়নের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ভোক্তা ও জনসাধারণের স্বার্থ বিবেচনা করে এবং ক্ষতি লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় বক্তব্য ও সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করে।

কমিশন প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা করে এবং শুল্ক হার যুক্তিসঙ্গতকরণ, প্রচলিত আমদানি ধারার উদারীকরণ ও দেশীয় উৎপাদন ও রপ্তানিভিত্তিকে শক্তিশালী করতে উৎসাহ কাঠামো সম্প্রসারণের জন্য নীতি প্রণয়ন করে। একটি চলমান দায়িত্ব হিসেবে, কমিশন আমদানিকৃত উপকরণ (কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী উপকরণ) এবং মূলধনি দ্রব্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক হার পুনর্নিরীক্ষণ করে। কমিশন সরকারের মুক্তবাজার অর্থনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি বাস্তবসম্মত ও গতিশীল শুল্ক কাঠামো তৈরির জন্য  জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়/ পরিকল্পনা কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কার্যকরী সমন্বয়সাধন করে থাকে।

সরকারের আমদানি নীতিতে নিষিদ্ধ পণ্যের (যা আমদানি করা যায় না) এবং সীমাবদ্ধ পণ্যের (যা সুনির্দিষ্ট শর্তপালন সাপেক্ষে আমদানি করা যায়) তালিকা রয়েছে। কমিশন শিল্প উৎপাদনের ওপর সদাজাগ্রত দৃষ্টি রেখে ঐসব নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতার সুবিধা যাচাই করে। যদি উৎপাদিত দ্রব্যের গুণাগুণের ক্রমাবনতি ঘটে এবং দ্রব্যমূল্য সন্তোষজনক পর্যায়ে না রাখা হয়, অথবা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার ফলে উৎপাদন ক্ষমতা স্বল্প ব্যবহূত থাকে, তবে কমিশন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করতে পারে। কমিশনের আরও দায়িত্ব হলো আমদানি নিষিদ্ধ বা আমদানি সীমিত পণ্যের মূল্যের ওপর দৃষ্টি রাখা। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি বা বৈদেশিক বিনিময় হার হ্রাস ছাড়া অন্যকোন কারণে আমদানি নিষিদ্ধ বা আমদনি সীমিত পণ্যের মূল্য বাড়লে, কমিশন নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করতে পারে। এছাড়া কমিশনের দায়িত্ব হলো কোনো পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতার সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের প্রতিকার বিধান করা।

সরকারের শিল্পনীতি বাস্তবায়নে কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। শিল্পনীতির অধীনে সরকারের কৌশলসমূহের মধ্যে রয়েছে: বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সনদের সাথে সঙ্গতি রেখে দেশি শিল্পের সংরক্ষণ ও যুক্তিসঙ্গতকরণ এবং শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ ও যথাযথ রাজস্ব সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিল্প বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান। ডাম্পিং এবং ভর্তুকি দেওয়া পণ্য আমদানির অভিযোগ উঠলে তা তদন্তের দায়িত্বও কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত। যদি উৎপাদন খরচের কম মূল্যে (ডাম্পিং) এবং ভর্তুকি দেওয়া পণ্য আমদানি করা হয় তার প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার কমিশন রাখে। তাছাড়া হঠাৎ অতিরিক্ত আমদানির বিরুদ্ধেও রক্ষাকবচমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান শিল্পনীতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তিনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সদস্য। কমিটিসমূহ হলো: শিল্প উন্নয়নের জন্য জাতীয় পরিষদ (যার শীর্ষাসনে আছেন প্রধানমন্ত্রী), উক্ত জাতীয় পরিষদের নির্বাহী কমিটি (যার শীর্ষাসনে আছেন শিল্পমন্ত্রী) এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহের সমন্বয় কমিটি (যার শীর্ষাসনে আছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব)। [স্বপন কুমার বালা]