সার্কেল অফিসার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সার্কেল অফিসার  সিভিল সার্ভিসের জুনিয়র গ্রেডের একজন সরকারি কর্মকর্তা। ভারতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় রয়াল কমিশন রির্পোটের ভিত্তিতে সার্কেল অফিসার পদ সৃষ্টি হয় (১৯০৯)। রির্পোটের ৬০১ এবং ৬৯৯-৭০২ অনুচ্ছেদে বলা হয় যে, ভারতের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলায় মহকুমা পর্যায়ের নিচে কোনো অধস্তন সরকারি কর্মকর্তা নেই। সে সময়ে ভারতের অন্যান্য স্থানে মহকুমা পর্যায়ের নিচে তহশিল ব্যবস্থা চালু ছিল। বিকেন্দ্রীকরণ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯১১ সালে বাংলার কয়েকটি বিশেষ মহকুমায় সার্কেল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ইউনিয়নসমূহ কয়েকটি সার্কেলে বিভক্ত করে সার্কেলকে একজন সার্কেল অফিসারের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তার প্রধান কাজ ছিল ইউনিয়ন বোর্ডসমূহের (তখন ইউনিয়ন পঞ্চায়েত হিসেবে পরিচিত) তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা। এভাবে বর্তমান বাংলাদেশের থানা বা উপজেলার মতো প্রশাসনিক ইউনিটের জন্ম হয়। বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এনকোয়ারি কমিটি (১৯১২-১৩) সার্কেল অফিসার স্কীমকে পূর্ণ সমর্থন দান করে। শুরুতে এ কমিটি সার্কেল অফিসারের সভাপতিত্বে সার্কেল বোর্ড স্থাপনের  সুপারিশও করে। এটা অবশ্য ব্রিটিশ আমলে কখনও স্থাপিত হয় নি।

সার্কেল অফিসার ছিলেন গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এ যোগসূত্রের পরিধি ও প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য সার্কেল অফিসারের মূল কার্যাবলির বর্ণনা সহ ইউনিয়ন বোর্ড ম্যানুয়েলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়টি ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিবের নিকট প্রেরিত মুখ্যসচিবের স্মারকে এবং তদানিন্তন ভারত সচিবের কাছে লিখিত ভারতের বড়লাটের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ সকল কাগজপত্রে সার্কেল অফিসারের দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং জেলা প্রশাসনে তার অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ইউনিয়ন বোর্ডগুলি তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার মধ্যেই তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ নয়। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ উন্নয়ন ক্ষেত্রে গ্রামীন জনগণের সার্বিক কল্যাণ সম্পর্কিত তথ্যাদির উৎস হিসেবেও সার্কেল অফিসারকে গণ্য করা হতো।

১৯৫৯ সালে পাকিস্তানে প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার অধীনে ১৯৬১ সালে গ্রামীণ অঞ্চলে সার্কেল ব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ নামে একটি স্থানীয় পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। একটি সরকারি আদেশবলে পূর্ব পাকিস্তানে ৪১৩টি সার্কেল সৃষ্টি করা হয়। সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্যমান ৪১৩টি থানার প্রতিটি থানার জন্য একজন সার্কেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে থানা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। ১৯৬১ সালের পর প্রতিটি থানায় রাজস্ব সার্কেল অফিসার নামে একটি আলাদা পদ সৃষ্টি হয়। তারা সাধারণত সি.ও (রাজস্ব) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শুধু রাজস্ব বিষয়ে তাদের কার্যক্রম সীমিত ছিল। এ ক্ষমতাবলে তারা তহ্শিলদারদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের অধিকারী ছিলেন।

১৯৭৭ সাল বা এর কাছাকাছি সময়ে সার্কেল অফিসারদের পদমর্যাদা উন্নীত করে নতুনভাবে তাদের সহকারি কমিশনার নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ চালু করার সঙ্গে সঙ্গে সার্কেল ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে।  [এ.এম.এম শওকত আলী]