মহাবোধি সোসাইটি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

মহাবোধি সোসাইটি  বৌদ্ধধর্মীয় একটি প্রতিষ্ঠান। অনাগারিক ধর্মপাল ১৮৯১ সালের ৩১ মে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে ‘মহাবোধি সোসাইটি অব শ্রীলঙ্কা’ গঠন করেন। ওই একই বছর মহাবোধি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া-র উদ্বোধন করা হয় যার প্রধান কেন্দ্র ছিল কোলকাতায় । এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পুর্নজাগরণ এবং বুদ্ধগয়া, সারনাথ ও কুশিনারায় প্রাচীন বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলোর পুনরুদ্ধার। সোসাইটির প্রথম সভাপতি ছিলেন স্যার  আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক অনাগারিক ধর্মপাল। কলকাতার ২০/১, গঙ্গাধর বাবু লেনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এর কর্মকান্ড শুরু হয়। ১৯২০ সালের ২০ নভেম্বর বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সোসাইটি কলকাতার ৪-এ, বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিটে ধর্মরাজিক চৈত্য বিহার উদ্বোধন করে। সোসাইটি বুদ্ধগয়ায় বৌদ্ধদের হূত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ সমগ্র ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ উদ্দেশ্যে ১৯০০ সালে ভারতের বুদ্ধগয়া, মাদ্রাজ ও কুশীনগর এবং শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুরে সোসাইটির চারটি শাখা স্থাপন করা হয়। সোসাইটির উদ্যোগে বুদ্ধগয়ায় একটি বিহারও নির্মিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর সোসাইটির আন্দোলনের ফলে বুদ্ধগয়া মন্দিরের পরিচালনা পরিষদে চারজন বৌদ্ধ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ভারত সরকার বুদ্ধগয়া পরিচালনার দায়িত্ব একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর অর্পণ করে।

সোসাইটির উদ্যোগে বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তনের স্থান সারনাথের মূলগন্ধকুটি বিহার নির্মিত হয় এবং ধর্মশালা, গ্রন্থাগার, ফ্রি ডিসপেনসারি, স্কুল, কলেজ, বুদ্ধিস্ট ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। সারনাথের ঐতিহাসিক ধামেকস্তূপ তত্ত্বাবধানের দায়িত্বও সোসাইটির ওপর ন্যস্ত হয়।

১৯২২ সালে বোম্বাইতে একটি বিহার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে মহাবোধি সোসাইটির কর্মতৎপরতা শুরু হয়। ত্রিশের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় সোসাইটির দিল্লি শাখা, যার ভিত্তিপ্রস্ত্তর স্থাপন করেন জাপানের তৎকালীন কনসাল জেনারেল এবং দ্বারোদ্ঘাটন করেন মহাত্মা গান্ধী। পর্যায়ক্রমে লুম্বিনী, লক্ষ্ণৌ, নতনওয়া, আজমীর, সাঁচী, ভুবনেশ্বর ও রজস্থানসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সোসাইটির শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব শাখা-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সোসাইটি সমগ্র ভারতব্যাপী বুদ্ধের বাণী, শিক্ষা ও আদর্শ প্রচার করে।

মহাবোধি সোসাইটিতে এক সময় ভারতীয় শ্রেষ্ঠ মনীষার সমন্বয় ঘটেছিল। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছাড়া এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, রাজেন্দ্রপ্রসাদ,  চিত্তরঞ্জন দাসরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এস রাধাকৃষ্ণান, রাজা গোপালাচারী প্রমুখ গুণিজন। তাঁরা বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে সোসাইটির কর্মপ্রবাহকে শক্তিশালী করেন। ১৮৯৩ সালে সোসাইটির পক্ষ থেকে অনাগারিক ধর্মপাল আমেরিকার শিকাগো ধর্ম মহাসভায় অংশগ্রহণ করে বৌদ্ধধর্মের আদর্শ ও মর্মবাণী তুলে ধরেন। এতে বিশ্ব পরিমন্ডলে সোসাইটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

১৯৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারি বুদ্ধের দুই প্রধান শিষ্য সারিপুত্র এবং মৌদ্গল্যায়নের পবিত্র অস্থিধাতু লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং এলবার্ট মিউজিয়াম থেকে স্বদেশে ফিরিয়ে এনে সাঁচীতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সোসাইটির এক উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এছাড়া বৌদ্ধধর্মীয় গ্রন্থ প্রকাশ ও প্রচারে সোসাইটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ  ত্রিপিটক ভারতের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করে সোসাইটি জনসাধারণের নিকট বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের তত্ত্ব পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এতে মাতৃভাষায় ত্রিপিটক পাঠের ফলে জনসাধারণের মধ্যে বুদ্ধবাণী সম্পর্কে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন ও সংস্কৃতি প্রচারের পাশাপাশি মহাবোধি সোসাইটি বিভিন্ন প্রকার জনহিতকর কাজেও অংশগ্রহণ করে। ১৮৯২ সাল থেকে সোসাইটি মহাবোধি নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করছে। এটি শতাব্দীকাল ধরে সোসাইটির মুখপত্র হিসেবে এর কর্মকান্ড ও বুদ্ধবাণী প্রচার করছে এবং সাহিত্যক্ষেত্রেও মূল্যবান অবদান রাখছে।   [রেবতপ্রিয় বড়ুয়া]