রোহনপুর অষ্টভুজী সমাধিসৌধ

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:১৪, ১০ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

রোহনপুর অষ্টভুজী সমাধিসৌধ  নবাবগঞ্জ জেলার রোহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নওদা গ্রামে অবস্থিত। রোহনপুর-নওদা এলাকায় একমাত্র মধ্যযুগীয় ভবন, যা এখনও বিদ্যমান। মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদীর সংযোগস্থলের নিকটবর্তী পীরপুর, ভাগলপুর, প্রসাদপুর ও কসবা গ্রামে বেশকিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্তূপ ও পুকুর এবং সেই সাথে অসংখ্য প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের টুকরার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

রোহনপুর অষ্টভুজী সমাধিসৌধ,  নবাবগঞ্জ

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষণ ও সংস্কারের পূর্বে ইট নির্মিত এই ভবনটি বেশ জীর্ণাবস্থায় ছিল। অষ্টভুজাকার ভবনটির বাইরের দিক থেকে পরিমাপ ২৬.৫২ মিটার। ভবনের প্রত্যেকটি বাহু ১.৩৭ মিটার পুরু এবং ৪.৩৪ মিটার দীর্ঘ। ভবনে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ। উত্তর দিকের প্রাচীরটি সম্পূর্ণ বদ্ধ এবং দক্ষিণ দিকের খিলানপথ বরাবর উত্তর দেওয়ালে রয়েছে অর্ধ-অষ্টভুজাকার মিহরাব কুলুঙ্গি। প্রতিটি প্রবেশপথ পাশের অলঙ্কৃত ছোট মিনার (minaret) সম্বলিত অভিক্ষিপ্ত ফ্রন্টনের মধ্যে ন্যস্ত। প্রবেশপথের ফাসাদ বিভিন্ন ধরনের খিলান মোটিফ সমৃদ্ধ প্রচুর প্যানেল দ্বারা শোভিত। অনুভূমিক প্যারাপেট বদ্ধ মারলোনের সারি দ্বারা অলঙ্কৃত। ভবনটি একটি অষ্টভুজাকার ড্রামের উপর স্থাপিত বিশাল এক গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। ভবনের আটটি দেওয়াল গম্বুজের ড্রামের ভার বহন করছে। গম্বুজটির শীর্ষ গতানুগতিক পদ্ম ও কলস চূড়া শোভিত এবং গম্বুজ অভ্যন্তরের নিম্নভাগ পত্র নকশায় সজ্জিত।

শৈলীগত দিক থেকে ভবনটি সতের শতকের শেষের দিকে নির্মিত বলে অনুমিত। তবে কি উদ্দেশ্যে ভবনটি নির্মিত হয়েছিল তা এখন সঠিকভাবে জানা যায় না। স্থানীয়ভাবে ভবনটিকে সমাধিসৌধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে বর্তমানে ভবনটির ভেতর কোন সমাধির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভবনটি তাঁর দুটি বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি করতে পারে: (ক) এর অষ্টভুজী প্ল্যান এবং (খ) উত্তর দেওয়ালের মিহরাব কুলুঙ্গি। সময়ের বিচারে এটি সম্ভবত বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অষ্টভুজী ভবনের নিদর্শন। পরবর্তীকালে এই বৈশিষ্ট্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যায় রাজমহলের বেগমপুরের অষ্টভুজী সমাধিসৌধে, যা এখন পর্যন্ত বাংলায় এ জাতীয় ভবনের সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে গণ্য। এ জাতীয় ভবনের ধারণাটি সম্ভবত তুগলক, সৈয়দ ও লোদী যুগে নির্মিত অষ্টভুজী সমাধিসৌধ থেকে এসেছে।

মিহরাবের উপস্থিতি ভবনটিকে সমাধিসৌধ হিসেবে বিবেচনার জন্য ইঙ্গিত প্রদান করে। পারস্যের বেশ কিছু ইসলামি সমাধিসৌধে মিহরাবের উপস্থিতি চোখে পড়ে, যেমন, তৈয়াবাদ, তুরবাত-ই-জাম এবং তুরুকের সমাধিসৌধ। পরবর্তীকালে সুলতানিয়ায় অবস্থিত সুলতান ওলজিতু খুদাবান্দা (১৩০৫-১৫ খ্রি) অথবা ইয়াজদের ইমামজাদা দুবাজদা ইমাম-এর (১৩০৬ খ্রি) সমাধিসৌধে মিহরাব রয়েছে। উত্তর ভারতে সুলতানী আমলের এ জাতীয় বেশ কিছু নিদর্শন বিদ্যমান। বাংলাতেও বেশ কয়েকটি সমাধিসৌধে মিহরাবের উপস্থিতি দেখা যায়, যেমন, কুমারপুর সমাধিসৌধ (আনু. ১৬৫৫-৫৬ খ্রি) এবং নওয়াবগঞ্জের শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি (আনু. ১৬৬৪ খ্রি)। [এম.এ বারি]