বাগেরহাট জেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:২৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাগেরহাট জেলা (খুলনা বিভাগ)  আয়তন: ৩৯৫৯.১১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২´ থেকে ৮৯°৯৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোপালগঞ্জ এবং নড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা।

জনসংখ্যা ১৫৪৯০৩১; পুরুষ ৮০৪১৪৩, মহিলা ৭৪৪৮৮৮। মুসলিম ১২৩৭৮৬২, হিন্দু ৩০৪৪২৭, বৌদ্ধ ৬২৬১, খ্রিস্টান ৫৪ এবং অন্যান্য ৪২।

জলাশয় প্রধান নদী: মধুমতি, বলেশ্বরী, কালীগঙ্গা।

প্রশাসন বাগেরহাট জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৩৯৫৯.১১ ৭৫ ৭২০ ১০৩১ ২০৬৫৫৪ ১৩৪২৪৭৭ ৩৯১ ৫৮.৭
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
কচুয়া ১৩১.৬২ - ৭৮ ১০১ ১০০০৯৩ ৭৬০ ৬২.০
চিতলমারী ১৯২.০০ - ৫৮ ১২২ ১৩৯৮৬২ ৭২৮ ৫৮.৬
ফকিরহাট ১৬০.৬৮ - ৬৭ ৮৭ ১৩৪৪১৮ ৮৩৭ ৫৮.৮
বাগেরহাট সদর ৩১৬.৯৭ ১০ ১৬৯ ১৮৩ ২৫৭২৭৩ ৮১২ ৬০.৯
মংলা ১৪৬১.২২ ৩০ ৭৭ ১৪৯০৩০ ১০২ ৫৬.১
মোড়েলগঞ্জ ৪৬০.৯১ ১৬ ১২১ ১৮১ ৩৪৯৫৫১ ৭৫৮ ৬২.৩
মোল্লাহাট ১৮৭.৮৮ - ৫৯ ১০২ ১২৬২১৮ ৬৭২ ৪৮.৯
রামপাল ২৯১.২২ - ১০ ১২৫ ১৩৩ ১৭৮৫০৩ ৬১৩ ৫৭.৩
শরণখোলা ৭৫৬.৬১ - ১২ ৪৫ ১১৪০৮৩ ১৫১ ৫৬.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাট জেলা ছিল ৯ নং সেক্টরের অধীন। ২১ এপ্রিল পাকসেনারা খালিশাখালী ও বাবুগঞ্জ বাজারে প্রায় ২০০ লোককে হত্যা করে। মোড়েলগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের লড়াইয়ে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং তারা শরণখোলা উপজেলার ত্যাঁড়াবাঁকা খালের মধ্যে শতাধিক লোককে হত্যা করে। ৩ মে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের শাখারিকাঠী হাটে পাকসেনারা ৪২ জন লোককে হত্যা করে। ২১ মে রাজাকারেরা রামপাল উপজেলার বেশসংখ্যক লোককে হত্যাসহ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ২৫ আগস্ট ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া ইউনিয়নের মানসায় পাকসেনা ও রাজাকারেরা মিলিতভাবে ৯ জন এবং ১৫ অক্টোবর কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের ভাসা বাজার থেকে ৭০ জন নিরীহ বাঙালীকে ধরে নিয়ে গ্রামের ভাসারহাট পুলের কাছে হত্যা করে। এছাড়াও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মোল্লাহাটের চাকুলিয়া (চরকুলিয়া) নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে একজন ক্যাপ্টেনসহ ২০০ পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৯ (চিতলমারী, শাখারিকাঠি, মোড়েলগঞ্জ, রনজিতপুর, তেলিগাতি, ডাকরা, কান্দাপাড়া, মানসা বাজার, মঘিয়া); বধ্যভূমি ৪; স্মৃতিস্তম্ভ ৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৮.৭%; পুরুষ ৬০.৮%, মহিলা ৫৬.৫%। কলেজ ৪৪, কারিগরি কলেজ ২, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৪১, কারিগরি বিদ্যালয় ২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৭৩, কিন্ডার গার্টেন ১০, কমিউনিটি স্কুল ৩, মাদ্রাসা ২২২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রামপাল ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৮), খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৮), শরণখোলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৮), শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৩), কচুয়া ডিগ্রি কলেজ, কচুয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, পিসি কলেজ (১৯১৮), মংলা কলেজ (১৯৮১), সরকারি মহিলা কলেজ, খানজাহান আলী কলেজ, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মংলা বন্দর স্কুল ও কলেজ (১৯৮৭), মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, অন্ধ বধির ইনস্টিটিউট, মুলঘর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), বাগেরহাট বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৭৮), বাহিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), নলধা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫), দৈবজ্ঞহাটি বিশ্বেশ্বর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), মসনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), গোয়ালহাট রসিকলাল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), সাচিয়াদহ চুনখোলা এমবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), প্রফুল্ল চন্দ্র রায় মহাবিদ্যালয় (১৯১৮), চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২০), খানজাহানীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩), এসি লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), কচুবুনিয়া রহমাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), গিলাতলা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), সুগন্ধি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৩০), ফয়লা হাট কামালউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৭), পেড়িখালি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৯), ডাকরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), এসএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), সেন্ট পলস্ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), আরকেডিএস বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮), চরলাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), বড়বাড়িয়া হাটখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১২), আংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮), মাদারতলী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), মাধবকাঠী আহমদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা (১৯১৫)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৭%, শিল্প ০.৮৭%, ব্যবসা ১৭.২৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩%, চাকরি ৮.০৫%, নির্মাণ ১.৩২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪% এবং অন্যান্য ৭.৮%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: দক্ষিণ কণ্ঠ, উত্তাল, দক্ষিণ বাংলা, দূত; সাপ্তাহিক: খানজাহান, বাগেরহাট দর্পণ, বাগেরহাট বার্তা।

লোক সংস্কৃতি ছড়া গান, ধাঁধাঁ, প্রবাদ-প্রবচন, মেয়েলী গীত, গাজীর গীত, চৈত্র সংক্রান্তিতে অষ্টক গান উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান ষাট গম্বুজ মসজিদ, সেন্ট পলস্ গির্জা, খান জাহান আলীর মাযার, দুর্গাপুর শিবমঠ, বনগ্রামের রাজবাড়ি, মংলা বন্দর, সুন্দরবনের করমজল ও হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবন যাদুঘর।  [এইচ.এম খালেদ কামাল]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাগেরহাট জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; বাগেরহাট জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।