গোস্বামী, ক্ষেত্রমোহন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:২৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

গোস্বামী, ক্ষেত্রমোহন (১৮১৩-১৮৯৩)  সঙ্গীতজ্ঞ ও ঐকতান প্রবর্তক। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা গ্রামে তাঁর জন্ম। বিষ্ণুপুরের সঙ্গীতাচার্য রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের নিকট ক্ষেত্রমোহনের  শিক্ষার শুরু এবং তাঁর নিকট থেকেই তিনি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে পারদর্শিতা অর্জন করেন। শিক্ষানবিশ জীবন শেষ হলে ক্ষেত্রমোহন সঙ্গীতকেই বৃত্তি হিসেবে নিয়ে আজীবন এর সাধনা করেন।

১৮৫৩ সালে আচার্য রামশঙ্করের মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে ক্ষেত্রমোহন  গিয়ে পাথুরিয়াঘাটার জমিদার যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সঙ্গীতসভার গায়ক নিযুক্ত হন। এই সভাতেই তিনি দ্বিতীয় গুরুরূপে লাভ করেন বারাণসীর বিখ্যাত বীণাকার লক্ষ্মীপ্রসাদ মিশ্রকে। তাঁর নিকট থেকে ক্ষেত্রমোহন যন্ত্রসঙ্গীতে শিক্ষা লাভ করেন। এর ফলে কণ্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীতের উভয় ধারায়ই তিনি অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেন। ওই সময় তাঁর নেতৃত্বে কলকাতায় রাগসঙ্গীতের চর্চা, গবেষণা, গ্রন্থ প্রণয়ন ও শিক্ষাদানের একটি আন্দোলন গড়ে ওঠে।

ভারতীয় সঙ্গীতে ক্ষেত্রমোহনের বিশেষ অবদান সঙ্গীতে ঐকতান বাদনের প্রবর্তন। এর প্রথম প্রয়োগ হয় বেলগাছিয়া নাট্যশালায় অভিনীত রত্নাবলী নাটকে। ঐকতান বাদন পরিচালনা করেন স্বয়ং ক্ষেত্রমোহন। পাশ্চাত্য ঢঙে ভারতীয় সঙ্গীতে ঐকতানের ব্যবহারে শ্রোতারা নতুনের স্বাদ পায় এবং ক্ষেত্রমোহনের সৃষ্টিশীলতায় মুগ্ধ হয়। এই ঐকতান পরিচালনার জন্য ক্ষেত্রমোহন প্রয়োজনীয় স্বরলিপিও প্রণয়ন করেন, যা ১৮৬৮ সালে ঐকতানিক স্বরলিপি নামে প্রকাশিত হয়। ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ সঙ্গীতসার। সঙ্গীততত্ত্ব বিষয়ক এই বিশাল গ্রন্থটি বাংলা রাগসঙ্গীতের চর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে। এতে তিনি সঙ্গীতকে একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে আনার চেষ্টা করেন। সঙ্গীতবিষয়ক তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: কণ্ঠকৌমুদী, আশুরঞ্জনী, গীতগোবিন্দ স্বরলিপি প্রভৃতি। এছাড়া তিনি অক্ষরমাত্রিক স্বরলিপি রচনা, সঙ্গীতবিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ ইত্যাদি বিষয়েও পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। এভাবে রাগসঙ্গীতের চর্চা, সঙ্গীতবিষয়ক গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা প্রকাশ, স্বরলিপি প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা সঙ্গীতের উন্নয়নে ক্ষেত্রমোহনের অবদান চিরস্মরণীয়।

ক্ষেত্রমোহন শুধু রাগসঙ্গীতেই নয়, ধ্রুপদ সঙ্গীতেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বাংলা এবং হিন্দি উভয় ভাষায়ই ধ্রুপদ গান রচনা করেন। তবে সেসব সংগৃহীত না হওয়ায় অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ক্ষেত্রমোহনের নিকট সঙ্গীত শিক্ষা করে পরবর্তীকালে যাঁরা যশস্বী হয়েছেন তাঁরা হলেন শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

পেশাগত জীবনে ক্ষেত্রমোহন আমৃত্যু পাথুরিয়াঘাটার জমিদারের সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর কর্তৃক ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গসঙ্গীত বিদ্যালয়’ ও ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল একাডেমী অব মিউজিক’ নামে দুটি সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন। শেষোক্ত বিদ্যালয় তাঁকে ‘সঙ্গীত নায়ক’ উপাধি ও ‘স্বর্ণকেয়ূর’ পুরস্কারে ভূষিত করে।  [মোবারক হোসেন খান]